ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কথন গান কবিতায় কাজী আরিফ স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৩ মে ২০১৭

কথন গান কবিতায় কাজী আরিফ  স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তখনও সকালের স্নিগ্ধতা কাটিয়ে ছড়ায়নি তপ্ত রোদ। বৈশাখের খরতাপ ছড়ানো আগেই ভালবাসার টানে সুহৃদরা হাজির হয়েছিলেন চারুকলার বকুলতলায়। আর সেই ভালবাসা ঝরে পড়ল বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা কাজী আরিফের প্রতি। কবিতার আশ্রয়ে এই বাচিকশিল্পীকে জানানো হলো বিনম্র শ্রদ্ধা। প্রিয়জনে পরিণত হওয়া শিল্পীকে স্মরণের সূত্র ধরে গাওয়া হলো গান। পরিবারের সদস্য, সুহৃদসহ ঘনিষ্ঠজনরা গান আর কবিতার মাঝে মাঝে অংশ নিলেন কাজী আরিফকে নিবেদিত কথনে। ‘মরণ রে তুঁ হুঁ মম শ্যামসমান’ প্রতিপাদ্যে এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্্যাপন পরিষদ। শুক্রবার সকালে স্মরণসভার শুরুতেই কাজী আরিফের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। মৌনতা শেষে ভেসে আসে গানের সুর। মামুন জাহিদ খান গেয়ে শোনান ‘হে পরবাসী রবে কে’ শিরোনামের গান। সুরের অনুরণন থেমে গেলে কথনে অংশ নেন কাজী আরিফের মেয়ে অনুসূয়া বিনতে আরিফ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, স্থপতি কবি রবিউল হুসাইন, বসন্ত উৎসব উদ্্যাপন পরিষদের সহসভাপতি শফিউদ্দিন আহমেদ, বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিমুল মুস্তাফা, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের সভাপতি কাজী নাসির ও সাধারণ সম্পাদক কাজী এম আরিফ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন কাজী আরিফের ছেলে তেপান্তর আরিফ। গানে গানে কাজী আরিফকে ভালবাসা জানান বুলবুল ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী ও আরিফ রহমান। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আবৃত্তি করেন নায়লা তারান্নুম কাকলী ও মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। অনুসূয়া বিনতে আরিফ বলেন, দেশের বাইরে থাকার কারণে বাংলা শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অতটা ছিল না। কিন্তু আমরা যতটুকুই চর্চা করতাম, বাবা চাইতেন তা শুদ্ধভাবে করি। কোথাও ভুল হলে তিনি কড়াভাবে আমাদের ভুল ধরিয়ে দিতেন। এমনকি স্কাইপিতে যখন বাবার সঙ্গে কথা বলি, তখনও বাবা বলতেন, তোমাদের উচ্চারণ ঠিক করও। বাবা হৈচৈ করে আনন্দ করতে খুব পছন্দ করতেন। বাবা বিশ্বাস করতেন, এই একটুখানি প্রশ্রয় দিলেই তো ব্যাপারটি ভাল হয়ে যায়। আপনারা সবাই বাবার হাসি মুখটি মনে রাখবেন। আশরাফুল আলম বলেন, মৃত্যুর তিনদিন আগে তার সঙ্গে যখন কথা হয়, তার কণ্ঠস্বর শুনে মনে হয়নি তিনি প্রচ-ভাবে অসুস্থ। আসলে চলে যাওয়ার ব্যাপারটি সে জেনেও আমলে নেয়নি। তার মুখেই তো শোভা পায়, রবীন্দ্রনাথের সেই পঙ্ক্তি ‘মরণ রে তুঁ হুঁ মম শ্যামসমান’। পরে তিনি জাহিদুল হকের ‘ফেরা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘১৯৭৬ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলাম, তখন রেডিওতে যারা আবৃত্তি করতেন, তখন তাদের একনজর দেখার জন্য সেই কী টান, সে কী মাদকতা! পরে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হলো। আমরা যা কবিতা লিখি, কাজী আরিফরা তখন কবিতাকে কণ্ঠে নিয়ে উপস্থাপন করেন। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, এ দেশের আবৃত্তিশিল্পের ইতিহাসে কাজী আরিফকে কখনও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন মানুষ, সে কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তার মধ্যে যে অভিমান ছিল যৌক্তিক ও সহজাত ছিল। আমরা তার সেই অভিমানের মূল্য দিতে পারিনি। হাসান আরিফ বলেন, আবৃত্তিশিল্পের অগ্রগতিতে এগিয়ে যেতে হলে কাজী আরিফকে ধারণ করতে হবে। আবৃত্তিশিল্পীরা যখন আবৃত্তি করবেন, তখন তাদের প্রতিটি পঙ্ক্তিমালায় স্মরণ হবেন কাজী আরিফ। আমরা যেন জীবদ্দশায় তার কৃতিত্বের পথ ধরে এগিয়ে যেতে পারি। আমরা যেন আর সৌভাগ্যবঞ্চিত না হই। স্থপতি রবিউল হুসাইন বলেন, কাজী আরিফের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি সবার সঙ্গে একসঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারতেন। বাংলার সাংস্কৃতিক চেতনায় আপ্লুত হয়ে বাংলার ইতিহাসকে তুলে ধরে তিনি এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করে গেছেন। ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সংস্কৃতি অঙ্গনে সকলের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় মানুষ। তার মতো আড্ডাবাজ, জীবন্ত এক মানুষের চলে যাওয়া সহজে মেনে নেয়া যায় না। শিল্পাঙ্গনে আরিফের ছিল সদর্প উপস্থিতি। কথন শেষে তিনি আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘পরিচয়’। মানিক মিয়া স্বর্ণপদক পেলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ এ দেশের সঙ্গীত ভুবনের অনন্য এক কণ্ঠস্বর শাহনাজ রহমতুল্লাহ। সুরেলা কণ্ঠের মায়াজালে শ্রোতার ঠাঁই করেছেন অগণন শ্রোতার অন্তরে। তাই দীর্ঘদিন গান থেকে দূরে থাকলেও বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পীর গানপ্রেমীদের কাছে আজও সমান সমাদৃত। শুক্রবার সন্ধ্যায় মানিক মিয়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাকে প্রদান করা হলো মানিক মিয়া স্বর্ণপদক। স্বর্ণপদক ও মানপত্রের পাশাপাশি শিল্পীর হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে শিল্পী নিজে গান শোনানোর পাশাপাশি তাকে নিবেদন করে করা পরিবেশন করা হয়েছে সঙ্গীত। আলতাফ আলী হাসু স্মৃতি পদকে ভূষিত অজয় দাশগুপ্ত ‘ও সখিনা গেছস কি না ভুইলা আমারে’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’সহ অসংখ্য গানের রচয়িতা আলতাফ আলী হাসু। তার নামাঙ্কিত আলতাফ আলী স্মৃতিপদকে ভূষিত হলেন সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। এ উপলক্ষে বিকেলে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও আইনজীবী আলতাফ আলী হাসু ছিলেন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনটি প্রতিবছর তার স্মরণে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে পদক দিয়ে থাকে। এবার এ পদকে পেয়েছেন দৈনিক সমকালের উপসম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ফকির আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক মফিজুর রহমান, কামাল পাশা চৌধুরী, নৃত্যগুরু মহুয়া মুখার্জি, ভারতী গণসঙ্গীতশিল্পী অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আলতাফ আলী হাসুর স্ত্রী মিনারা বেগম।
×