ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসআইয়ের মদদে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৩ মে ২০১৭

আইএসআইয়ের মদদে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির  পাঁয়তারা

শংকর কুমার দে ॥ পাকিস্তানে অবস্থানরত পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনী, যুদ্ধাপরাধী, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী ও জামায়াত-শিবিরের নেতারা তৎপরতা শুরু করেছে। তাদের মদদ দিচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। নীলনক্সা অনুযায়ী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে তারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের ভেতরে অনেক অনাকাক্সিক্ষত অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, পাকিস্তানে বর্তমানে অবস্থান করছে, বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল (অব) আবদুর রশীদ, যুদ্ধাপরাধী অপরাধে মৃত্যুদ-াদেশ সাজাপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন। বর্তমানে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসিত বিএনপির এক তরুণ নেতার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কানেকশন রয়েছে, যিনি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য বিশৃঙ্খল পরিস্থতি তৈরি করার ছক কষছেন। এই ধরনের তথ্য পাওয়ার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন। দেশের ভেতরে আত্মঘাতী তৎপরতার নেপথ্যের ঘটনার অনুসন্ধান করছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুুকু ও বিএনপির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই হচ্ছেন মাওলানা তাজউদ্দিন, যিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের সদস্য ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার চার্জশীটভুক্ত পলাতক আসামি। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি হুজি নেতা আইডিপিপ্রধান আবদুস সালামের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সহায়তায় তার ভাই হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন দেশের ভেতর থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। বর্তমানে জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের নামে যে জঙ্গী তৎপরতা ও আত্মঘাতী ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তার সঙ্গে মাওলানা তাজউদ্দিনের মাধ্যমে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগসাজশ থাকতে পারে। এখন আবার এই জঙ্গী নেতা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পাকিস্তানে অবস্থান করে বাংলাদেশে যোগাযোগ রক্ষা করাসহ তৎপরতা চালাচ্ছেন এমন খবর রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মদদে অতীতে চট্রগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসমকে (উলফা) বাংলাদেশের মাটিতে ঘাঁটি স্থাপন, উলফার সামরিক শাখাপ্রধান পড়েশ বড়ুয়ার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কানেকশন থাকার ব্যাপারে তথ্য রয়েছে। চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালনা মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের তথ্য পেয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। একই মামলায় গোয়েন্দা সংস্থার আরেক সাবেক ডিজি আবদুর রহিম গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, দুবাইয়ে বৈঠক করে চট্টগ্রামে ১০ অস্ত্র চালান আনার ব্যাপারে বৈঠক করেছিলেন বর্তমানে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসিত বিএনপির সেই তরুণ নেতা। গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তাদের দেয়া জবানবন্দী ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের তৎপরতার বিষয়টি খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আবদুর রহিমকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা দেয়ার পাশাপাশি নামী-দামী উপঢৌকন দেয় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের দেয়া নগদ টাকার মধ্যে আবদুর রহিমকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়েছিল। এই টাকা তিনি এফডিআর করেন বলে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে দেয়া জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই অতীতে সামরিক ও বেসামরিক উভয় মাধ্যমেই মদদ দিয়ে অনেক অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও বিচারের রায় বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াত-শিবিরের পক্ষাবলম্বন করে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয় খোদ পাকিস্তানের সরকারও, যার নেপথ্যে ভূমিকা পালন করছে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির ঘটনা নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদে বিবৃতি, নিন্দা প্রস্তাব পাসসহ ব্যাপক তৎপরতায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই যে বাংলাদেশে তৎপরতা চালাচ্ছে তা অনেকটাই ওপেন সিক্রেটের মতো। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের চাপের কারণেই পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীর তার বাবাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য দেয়া সরকারী সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যা তাদের নীলনক্সারই অংশ। জঙ্গী গোষ্ঠীদের মদদদান, নষ্ট রাজনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ, পাকিস্তানে অবস্থানকারী পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনী, যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গীদের মাধ্যমে নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে অস্থিতিশীল করার জন্য ছক কষছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, যার তথ্যপ্রমাণ, আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি।
×