ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াতী থেকে জঙ্গী হয়ে ওঠা সাজ্জাদের পুরো পরিবারই ছিল সক্রিয়

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৩ মে ২০১৭

জামায়াতী থেকে জঙ্গী হয়ে ওঠা সাজ্জাদের পুরো পরিবারই  ছিল সক্রিয়

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ফেরি করে কাপড় বিক্রির আড়ালে আগে থেকেই জঙ্গী প্রচারণা চালাতো জঙ্গী সাজ্জাদ। এক সময় জামায়াতের সক্রিয় কর্মী থেকে জামাইয়ের অনুপ্রেরণায় যোগ দেয় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবিতে। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩৫ ও গোদাগাড়ী থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে একেবারে নিভৃত এলাকায় টিনের এক জরাজীর্ণ বাড়িতে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলে এখান থেকেই চালানো হতো জঙ্গী কার্যক্রম। পাড়ায় কারও সঙ্গে মিশত না সাজ্জাদ বা পরিবারের কেউ। বুধবার রাত ৩টা দিকে পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি টিম রাজশাহী জেলা পুলিশের সহায়তায় ওই জঙ্গী আস্তানার সন্ধান করে। পরে পুলিশ দেখে জঙ্গীরা হামলার চেষ্টা করে। পুলিশও হামলা চালায়। এতে সাজ্জাদসহ পাঁচ জঙ্গী নিহত হয়। গুরুতর আহত হন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীসহ দুই পুলিশ সদস্য। এদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী অব্দুল মতিনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জঙ্গী আস্তানায় নিহত সাজ্জাদ আগে জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিল। তার জামাই জহুরুলের হাত ধরে সে জেএমবিতে প্রবেশ করে। সাইকেলে করে ফেরিওয়ালা সেজে গোদাগাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় কাপড় বিক্রির আড়ালে জঙ্গী প্রচারণা চালাতো সে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকার বাহিনীর সহজেই নজরে আসবে না এটা ভেবেই নিভৃত গ্রামে গড়ে তোলা হয় জঙ্গী আস্তানা। নিজের পরিবারসহ বিভিন্ন এলাকার জেএমবি সদস্যরা তার বাড়িতেই আশ্রয় নিত। বর্তমান সময়ে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়া জেএমবি সদস্যরা মাঝেমধ্যে এখানেই এসে আশ্রয় নিত বলেও জানা যায়। ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, সাজ্জাদ জামায়াতের কর্মী ছিল। কিন্তু বছর দুয়েক আগ থেকে তার চলাফেরা সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। তার বাড়িতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসত। কারা তারা- এমন প্রশ্নে কখনও জামাইয়ের আত্মীয় আবার কখনও ঢাকা থেকে তার আত্মীয় এসেছে বলে পরিচয় দিত। এলাকাবাসী জানায়, সে সাইকেলে করে ফেরি করে সিটকাপড় বিক্রি করত। কিন্ত এটার আড়ালে সে জঙ্গী কার্যক্রম চালাতো। তার জামাই জহুরুল জেএমবির অনেক বড় নেতা। মূলত তার হাত ধরেই সে জেএমবিতে জড়ায় বলেও জানায় তারা। বর্তমানে জহুরুল জেলহাজতে রয়েছে বলেও জানায় তারা। তার এক ভাই মনিরুলও দুর্ধর্ষ জঙ্গী। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়েছিল। পরে ১২ বছর জেল খেটে দুই বছর আগে এলাকায় ফিরে মুরগির খামার গড়েছে। বুধবার ওই এলাকায় পুলিশের আনাগোনার পর থেকে সে লাপাত্তা রয়েছে। গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুল আলম মুন্সী জানান, সাজ্জাদ সম্পর্কে তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি টিম রাজশাহীতে এসে এ জঙ্গী আস্তানা শনাক্ত করে। তারপর আমরা অভিযান পরিচালনা করি। তিনি বলেন, সাজ্জাদের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছি। এলাকায় জামায়াত করত বলে লোকজন বলছে। তার জামাই জহুরুল ও ভাই মনিরুল জেএমবির সদস্য। এর বাইরেও কিছু তথ্য নেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, এ আস্তানায় আত্মঘাতী আশরাফুল জেএমবির আইটি বিশেষজ্ঞ বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
×