ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্যে জেনারেটরই ভরসা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১১ মে ২০১৭

বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্যে  জেনারেটরই ভরসা

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে বিদ্যুতের বড়ই অভাব। বিদ্যুতের অভাবে দিনের বড় সময় বন্দর, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম চলছে জেনারেটরে ভর করে। ফলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন বন্দর এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে তারা কাজ করছেন। তবে তাদের এ কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না বন্দর ব্যবহারকারীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুরু থেকেই বেনাপোলের অবকাঠামোর বেহালদশা। বন্দর এলাকায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারী-বেসরকারী প্রায় তিন হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ কাজ করছেন। বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হচ্ছে, যা থেকে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। রফতানিও হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য। তাদের অভিযোগ, বেনাপোল এশিয়া মহাদেশের ‘দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর’ হলেও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি অবকাঠামোর। চাকরিজীবীরা রাতে এখানে থাকতে চান না। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে যশোর শহরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকের পরিবার আবার রাজধানীতে বসবাস করেন স্থায়ীভাবে। ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশও যশোর, ঢাকা, খুলনা বা চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম নগর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৩ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের। কিন্তু সর্বক্ষণিক বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়াসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। স্থলবন্দর বেনাপোলে দিনের বড় একটি সময় বিদ্যুতবিহীন থাকে। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে কমপক্ষে দুদিন বিদ্যুতের দেখা মেলে না। তাই সরকারী ও বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানই বাধ্য হয়ে বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে। আর তা হলো জেনারেটর। বন্দর, কাস্টমস, চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন, পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল, ব্যাংক, বাস কাউন্টার সব জায়গাতেই বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর চলতে দেখা যায়। আর বাজারের ব্যবসায়ীরা নিয়েছেন ভাড়া করা জেনারেটরের লাইন। কিন্তু এসব জেনারেটরের ক্ষমতা কম হওয়ায় ভারি যন্ত্রের মেশিনগুলো ভালভাবে চলছে না। মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্য খালাস কাজে ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, হালকা ঝড়-বৃষ্টি হলে দিনভর বিদ্যুত থাকে না। আর বড় ধরনের ঝড় হলে দুদিন ধরে বিদ্যুতের দেখা মেলে না। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এলাকায় এ অবস্থা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সোনালী ব্যাংক বেনাপোল শাখার ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারত থেকে আসা আমদানি পণ্য থেকে সরকার যে রাজস্ব পায় ওই টাকা লেনদেন হয় এ ব্যাংকে। দিনের বেশিরভাগ সময় জেনারেটরের লাইনে বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করতে হয়। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় ব্যাংকের কর্মী ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু কী করব? উপায় নেই। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুর রহমান বলেন, ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারীদের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাজ কম্পিউটারে করতে হয়। যাত্রীদের সমস্ত তথ্য সেখানে সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু বিদ্যুত চলে গেলে ইন্টারনেট সার্ভার বিকল হয়ে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম-কমিশনার আ আ ম আমীমুল ইসসান খান বলেন, বর্তমানে বিদ্যুত ছাড়াতো কোন কাজের কথা ভাবাই যায় না। যদিও কাস্টম হাউসে বিকল্প ব্যবস্থা (জেনারেটর) আছে। কিন্তু জেনারেটর তো দীর্ঘক্ষণ চলে না। তাই এখানে বাণিজ্যের স্বার্থে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ থাকা জরুরী। বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুর রউফ জানান, বন্দরে ২৪ ঘণ্টা পণ্য খালাস কার্যক্রম চলে। বিশেষ করে রাতে বিদ্যুত না থাকলে পণ্য খালাসে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। বন্দরে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত খুবই জরুরী। যশোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি শার্শার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ৩২ কিলোমিটার দূরে যশোর থেকে বিদ্যুতের লাইন এনে বেনাপোল বন্দর এলাকায় সরবরাহ করা হয়। ঝড়-বৃষ্টিতে তারের ওপর গাছ পড়ে গেলে তখন বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। তিনি জানান, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নাভারনে বিদ্যুতের গ্রিড সাব-স্টেশন বসানো হচ্ছে। এক বছর লাগবে কাজ শেষ হতে। তখন এখানে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে।
×