ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের জঙ্গী নেতা মৌলবি শফিকের কক্সবাজারের বাসায় বৈঠক

আল এ্যাকিন-আরএসওর সঙ্গে জেএমবির গোপন কানেকশন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১১ মে ২০১৭

আল এ্যাকিন-আরএসওর সঙ্গে জেএমবির গোপন কানেকশন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আল এ্যাকিন ও আরএসও’র সঙ্গে গোপন কানেকশন রয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির। জামিনে মুক্ত হয়ে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা ফের অপতৎপরতা শুরু করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প-বস্তি থেকে যুবকদের বাছাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জঙ্গীদের গন্তব্যস্থানে। পাশাপাশি ক্যাম্প ছেড়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে না যেতে চাপ প্রয়োগ করছে আরএসও জঙ্গীরা। মিয়ামারের জঙ্গী সংগঠন আল এ্যাকিনের বাংলাদেশের প্রধান মৌলবি শফিকের কক্সবাজারের বাসায় ইতোপূর্বে জেএমবির একাধিক নেতা গোপন বৈঠক করে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার আশুলিয়া থেকে আটক দুই জেএমবি জঙ্গী মিয়ানমারের আরাকানের জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল বলে তথ্য দিয়েছে র‌্যাব। সন্দেহভাজন ওই দুই জঙ্গী ইমরান ও তার সহযোগী রফিক জেএমবিকে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক সরবরাহ করতেন বলেও জানিয়েছে র‌্যাব। এদিকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের জঙ্গীপনার শক্ত নেটওয়ার্কের প্রধান বহুল আলোচিত ভয়ঙ্কর জঙ্গী মৌলবি শফিকুর রহমান ওরফে শফিককে কিছুদিন আগে প্রশাসন খাঁচায় বন্দী করলেও বেশিদিন কারাগারে থাকতে হয়নি তাকে। পুলিশের দুর্বল রিপোর্টে জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে গেছে এ জঙ্গী। সম্প্রতি শহরের রোমালিয়ারছড়া চৌধুরীপাড়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশে দিয়েছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থা। জানা যায়, র‌্যাব সদস্যরা শহরের খুরুশকুল রাস্তার মাথা থেকে ৭৮টি পাইপবোমা তৈরির সরঞ্জামসহ আল এ্যাকিনের সদস্য মৌলবি করিমুলাহ ও রমিজকে আটকের পর গা ঢাকা দেয় জঙ্গী শফিক। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা মৌলবি শফিকের অধীনে বিদ্রোহী সংগঠন ‘আল এ্যাকিন’ এর জন্য বিপুল অস্ত্র ও বোমা সংগ্রহ করছে বলে স্বীকার করার পর গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন ভয়ঙ্কর এ জঙ্গীকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মৌলবি শফিকের বাড়িতে তল্লাশিও চালিয়েছে। সূত্র জানায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আল এ্যাকিনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র এবং শক্তিশালী বোমা পৌঁছে দিতে ওই বিদ্রোহী গ্রুপটির পক্ষে মৌলবি শফিক অন্তত ২০ রোহিঙ্গা জঙ্গীকে বাংলাদেশে নিয়োজিত করেছে। তারা বিদেশী অর্থায়নে অস্ত্র কেনে, বোমা তৈরি করে মিয়ানমারে পাঠাতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি আরাকানী রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সঙ্গে কানেকশন রেখে কক্সবাজারকেই তাদের নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তাই সাধারণ রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে না যেতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জেএমবি ছাড়াও আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংস্থার সঙ্গে রয়েছে আল এ্যাকিনের যোগাযোগ। ভারি অস্ত্র কিনতে এদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে চলছে একাধিক জঙ্গী সংগঠন। সূত্র আরও জানায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আল এ্যাকিনের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র এবং শক্তিশালী বোমা পৌঁছে দিতে ওই বিদ্রোহী গ্রুপটির পক্ষে বাংলাদেশে নিয়োজিত থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা মৌলবি শফিক। মিয়ানমারে বিজিপি ক্যাম্পে হামলা ঘটনার পর সরকার ইতোপূর্বে গুলিবিদ্ধ দুই রোহিঙ্গাকে দেশটির বিজিপির কাছে হস্তান্তর করে জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রে (মিয়ানমার) হামলাকারী সন্ত্রাসীরা এদেশে অবস্থানের খবর পেলে তাদের গ্রেফতার করে মিয়ানমারে সোপর্দ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা মতে প্রশাসন শহরের রোমালিয়াছড়ায় সম্প্রতি মৌলবি শফিকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু দুর্দান্ত এ রোহিঙ্গা জঙ্গী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা সংস্থার পাতানো জালে আটকে পড়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গী মৌলবি শফিক। জানা গেছে, কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর থেকে অঢেল টাকা নিয়ে শফিককে ছাড়িয়ে নেয়ার ব্যাপক তদ্বির শুরু করে একটি লোভী মহল। মৌলবি শফিককে মামলা থেকে রেহাই করতে তার পুত্র জোবাইর ও জামাতা মৌলবি হোবাইব অন্তত অর্ধকোটি টাকা খরচ করে শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছে তারা। পুলিশের দুর্বল রিপোর্টে সপ্তাহখানেকের মধ্যে কারাগার থেকে বেরিয়ে পড়ে মৌলবি শফিক। ৭৮টি পাইপ বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ আটক আল এ্যাকিনের সদস্য মৌলবি করিমুলাহ ও রমিজ পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে মৌলবি শফিক ফের মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ও অপতৎপরতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
×