ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বনসাই প্রদর্শনী গুলশানে

ছোট ছোট সবুজে অনন্য সুন্দর, ভরপুর প্রাণ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১১ মে ২০১৭

ছোট ছোট সবুজে  অনন্য সুন্দর,  ভরপুর প্রাণ

মোরসালিন ॥ বিশাল বৃক্ষ। এইটুকুন ট্রেতে দিব্যি আছে। বহু বছর ধরে আছে। অল্প আলো জলে সামান্য হাওয়ায় কী সুন্দর বেড়ে ওঠেছে! পূর্ণাঙ্গ গাছের আদল বটে। আকারে ছোট। শৈল্পিক আকৃতি। কা- ও শাখার বিন্যাস, গাঢ় সবুজ পাতার খেলা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। গুলশান ক্যাডেট কলেজ ক্লাবে আয়োজিত বনসাই প্রদর্শনীটি তাই বেশ জমে ওঠেছে। অনেকের নয়, কে এম সবুজের একার কাজ। তৃতীয় একক প্রদর্শনী। বুধবার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী ফরিদা জামান। দুজনেরই শিল্প সুন্দর দৃষ্টি। স্বতন্ত্র মাধ্যমে কাজ করেন। তবে বনসাইয়ের সৌন্দর্যের কথা বললেন আলাদা করেই। আয়োজনটি কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তর মঞ্চে ওঠে দিলেন রামেন্দু মজুমদার। বললেন, আমি নাটকের মানুষ। নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে নিজের শিল্প চেতনা তুলে ধরার চেষ্টা করি। প্রদর্শনী ঘুরে মনে হলো কে এম সবুজ একই চেতনার প্রকাশ ঘটান বনসাইয়ের মাধ্যমে। এখন জায়গার খুব অভাব। বিশেষ করে শহুরেদের অনেকে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বৃক্ষ রূপন করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে ভাল সমাধান বনসাই। অল্প জায়গায় শিল্পকর্মটি গড়া যায়। সবাইকে কিছুটা সতর্ক করে দিয়েই তিনি বলেন, ধরিত্রীর উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রকৃতির ওপর আরও অত্যাচার হলে, নিষ্ঠুর আচরণ অব্যাহত থাকলে সে তা ফিরিয়ে দিতে পারে। এমন বাস্তবতায় কে এম সবুজের উদ্যোগটি প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। চিত্রশিল্পী ফরিদা জামানও প্রতিটি বনসাই খুঁটিয়ে দেখেন। চোখে ছিল রাজ্যের কৌতূহল। ভাললাগার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গাছের প্রতি ভাললাগা ভালবাসা থেকেই বনসাইয়ের চর্চা। এটি পরিণত বৃক্ষের ছোট সংস্করণ নয় শুধু, আকৃতির দিক থেকে নানা পরিবর্তন আনা হয়। ফলে চেনা গাছটিও নতুন আবেদন নিয়ে সামনে আসে। প্রদর্শনীর কোন কোন বনসাই ভাস্কর্যের রূপ লাভ করেছে বলেও মন্তব্য করেন ফরিদা জামান। এর আগে স্বাগত বক্তব্যে বনসাই নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা শোনান কে এম সবুজ। প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, এবারও নানা জাতের গাছ খুঁজে নিয়ে বনসাই গড়েছেন শিল্পী। একশ’র মতো প্রজাতি। চারশ’ গাছ। অনেকটা জায়গাজুড়ে সাজানো হয়েছে। সারি সারি বনসাই মিলনায়তনের পরিবেশটাই যেন বদলে দিয়েছে। সাধারণত যেসব গাছে বনসাই হয় সেগুলো যথারীতি রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। তেমনি দেখা গেল দুর্লভ অনেক গাছ। আজকের শহুরে প্রজন্ম কোথায় পাবে হিজল তমাল? শেওড়া ছাতিম কে দেখাবে তাদের? প্রদর্শনী সে সুযোগ করে দিয়েছে। রাজধানী শহরে তুলে আনা হয়েছে গাঁয়ের ভুলতে বসা স্মৃতিকে। মহুয়া বহেরা হরতকী নিম শিমুলÑসবই আজ অতীতে স্মারক। কা- শক্ত হওয়ায় বট গাছ বনসাইয়ের জন্য বিশেষ উপযোগী। শিল্পীরা গাছটি নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট চালান। সবুজের কাজেও সে চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। বহু জাত নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। একটির সঙ্গে অন্যটির মূল পার্থক্য পাতায়। কিছু বনসাইয়ের পাতা দেখতে আমের পাতার অনুরূপ। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে ছোট আম গাছটি। আদতে আমবট। আমবটের আবার আছে তিনটির মতো প্রজাতি। কাঁঠালী বটের দিকেও দুইবার তাকাতে হয়। তবেই বোঝা যায়, পাতাগুলো কাঁঠালের নয় আসলে। অপেক্ষাকৃত পুরো ও শক্ত এসব পাতা কাঁঠালী বটের! দেশী বট নামেও ডাকা হয় গাছটিকে। প্রদর্শনীতে আছে খুব চেনা পাকুড় বট। প্রতিটি জাতকে এমনভাবে গড়ে নেয়া হয়েছে যে, দেখে মনে হয় প্রাচীন বৃক্ষ। কা- এবং শাখার বিন্যাস শত বছরের পুরনো বটগাছের কথা মনে করিয়ে দেয়। অবশ্য বট গাছের বনসাইগুলোর বয়স খুব কমÑ এমন নয়। একটি হিজলের বয়স, সবুজ জানালেন, ১৫ বছর! এর চেয়েও বেশি বয়সী বনসাই আছে প্রদর্শনীতে। কিছু বনসাই আবার ফলদ বৃক্ষের। টবে বেড়ে ওঠা বনসাই উপহার দিয়েছে আম জামরুল পেয়ারা কামরাঙ্গা তেঁতুল! নান্দনিক সৌন্দর্য আর বৃক্ষের কাছাকাছি থাকার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পাশাপাশি বাড়তি পাওয়া এইসব ফল। ফুলের গাছগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মেই প্রাধান্য পেয়েছে কামিনী। সুগন্ধী ফুলের গাছে ছোট ছোট পাতা। কা-টাও শিল্পীর দেখিয়ে দেয়া পথে উপরে ওঠে গেছে। কৃষ্ণচূড়ার সময় হলেও, প্রদর্শনীতে রাখা বনসাই থেকে এখনও ফুল হয়নি। তাতে কী? চিরুনির মতো দেখতে পাতা। বেশ লাগে। কিছু বিদেশী গাছে শিল্পীরা নিয়মিতই বনসাই করেন। সবুজও করেছেন। একটি যেমন ফুকেনট্রি। বৃষ্টির বড় ফোটার মতো পাতা। সবুজ পাতা অসম্ভব ঘন হয়ে আছে। শাখা প্রশাখা সরু হলেও শক্ত। অনড় অবস্থানের কারণে বিভিন্নভাবে এটিকে গড়ে নেয়া যায়। তাই করেছেন সবুজ। জেড প্লান্টগুলোও ছোট এবং ঘন পাতার। তবে পাতাগুলো কিছুটা ভারি ও মাংসল। জেড প্লান্ট থেকে সামান্য বড় চায়না বটের পাতা। একইরকম ঘন। প্রথম দেখায় প্লাটির মনে হতে পারে। আসলে ভরপুর প্রাণ। বক্সউডটাও সুন্দর খুব। আছে বাওবাব, জুনিপার। এমনকি ছোট্ট পরিসরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে চীন থেকে আনা বাঁশের ঝাড়। আরও বহু জাত পাতের বনসাই দেখা যাবে প্রদর্শনীতে। আছে কেনার সুযোগ। কিন্তু দাম কেমন? কেউ কেউ আতঙ্কে ভুগেন। সে দিকটি বিবেচনায় রেখেছেন সবুজ। প্রদর্শনী ঘুরে তাই মনে হয়েছে। লিভিং আর্ট আয়োজিত প্রদর্শনী চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
×