ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পবিত্র শব-ই- বরাত

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১১ মে ২০১৭

আজ পবিত্র শব-ই- বরাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পবিত্র রজনী। অনেকে এ রজনীকে ভাগ্য রজনী বলেও অভিহিত করে থাকেন। তাদের মতে, ইসলামে যে কয়টি রাতকে পবিত্র ও মহিমান্বিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে ১৫ শাবানের রাত অন্যতম। ইসলাম ধর্মে চন্দ্রমাসের মধ্যে শাবান মাসকে ফজিলতপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল বরাতের মতো অত্যন্ত বরকতময় রজনী। যাকে বলা হয় মাহে রমজানের আগমনী বার্তা। শাবান মাস মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস। প্রতিবারের মতো শাবান মাস মুসলমানদের কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমান্বিত রমজান মাসের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। এদিকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদ্যাপনের জন্য পবিত্র লাইলাতুল বরাতের এই রাতে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কুরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, কিয়াম ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি মুসলমানেরা এ রাতে আল্লাহর নৈকট্য ও করুণা লাভের আশায় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকবেন। সারাদেশের মসজিদে মসজিদের মিলাদ মাহফিল, জিকির আজকার, ধর্মীয় আলোচনা ও বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি আজ প্রতিটি মুসলিম ধর্মাবলম্বীর ঘরে হালুয়া রুটি খাওয়া ও সিন্নি বিলানোর মতো সামাজিক উৎসব পালনের আয়োজন রয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, প্রতিবছর শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাতকে লাইলাতুল বরাত হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জীবনে আল্লাহ যে তিনটি রাতকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন শবে-ই-বরাত তার মধ্যে একটি। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা বা আত্ম সংযমের প্রস্তুতি হিসেবেই রাতটি মুসলমানদের কাছে এসে থাকে। শব-ই-বরাতের রাতে ইবাদত বন্দেগি ও আল্লাহর দরবারে পানাহ চাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রমজানের এ প্রস্তুতি। হাদিস শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে যখন পবিত্র শাবান মাস ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ পবিত্র শব-ই-বরাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা ওই বরকতপূর্ণ রাত্রিতে নামাজ আদায় করবে। দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক বরকতপূর্ণ এই রাত্রিতে ঘোষণা করেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো। কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার বিপদ দূর করে দেব। এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ শরিফ, মিশকাত শরিফ)। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিশেষ রাতের বিষয়ে কুরআনে তেমন কোন উল্লেখ না থাকলেও সিহাহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয় খানা হাদিস গ্রন্থের কোন কোন হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ রয়েছে। এই রাতের কথা ইমাম তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়। হাদিস মতে, এক রাতে নবী মুহম্মদের (সাঃ) স্ত্রী আয়েশা ঘুম থেকে উঠে মুহম্মদকে (সাঃ) বিছানায় দেখতে পেলেন না। তিনি মুহম্মদকে (সাঃ) খুঁজতে বের হলেন। তাঁকে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দেখতে পেলেন। মুহম্মদ (সাঃ) বললেন, ১৫ শাবানের রাতে আল্লাহ সর্বনিম্ন আকাশে নেমে আসেন এবং মানুষের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি বেশি নফল রোজা, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও নামায আদায় করে মাহে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। হজরত আয়েশার বরাত দিয়ে মুসলিম শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রমজান ব্যতীত অন্য কোন মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এত অধিক হারে নফল রোজা আদায় করতেন না। (বুখারি) একটি হাদিসে নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রাত আগমন করে, আল্লাহতাআলা স্বীয় বান্দাদের দিকে মনোযোগ দেন এবং মুমিন বান্দাদের ক্ষমা করেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেন (বায়হাকি)। একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতাআলা মধ্য শাবানের রজনীতে তার সৃষ্টির (বান্দাদের) প্রতি দৃষ্টি দেন। সবাইকে ক্ষমা করে দেন, তবে তারা ব্যতীত যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে। এবং অপরের ক্ষতি সাধনের বাসনা পোষণ করে। ইসলামী চিন্তবিদরা আরও উল্লেখ করেছেন, শাবান মাসে শব-ই-বরাত নামে বিশেষ একটি রজনী আছে, যে রজনীতে বান্দার সারা বছরের আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং আগামী এক বছরের জন্য বান্দার হায়াত, মউত, রিজিক, দৌলত ইত্যাদির নতুন বন্দোবস্ত দেয়া হয়। যে কারণে শাবান মাসকে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এ মাসে মুসলমানদের আমল আখলাক যেন সুন্দর হয়, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। অনেকে এ রজনীকে ভাগ্য রজনী হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। কর্মসুচী এদিকে লাইলাতুল বরাতের রাতকে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে উদ্যাপনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে রাতব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে কুরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, কিয়াম ও বিশেষ মোনাজাত। আজ সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ‘শবেবরাতের ফযিলত’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন ঢাকার মশুরীখোলা আহছানিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু জাফর মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। রাত সাড়ে দশটায় ‘ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব’ শিরোনামে বয়ান করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহিউদ্দীন কাসেম। রাত সাড়ে ১১টায় ‘শবেবরাত ও রমযানের তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন ঢাকার তেজগাঁওয়ের মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোঃ আবদুর রাজ্জাক। রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ‘যিকিরের গুরুত্ব ও ফযিলত’ শিরোনামে ওয়াজ করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী। রাত ১টা ৫৫ মিনিটে ‘তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফযিলত’ শিরোনামে ওয়াজ করবেন রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলনা মুশতাক আহমদ। সবশেষে ফজরের নামাযের পর আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
×