ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়া

ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন খালেদার ভিশন ২০৩০

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১১ মে ২০১৭

ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন খালেদার ভিশন ২০৩০

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ একটি মেধাহীন, অন্তঃসারশূন্য, দ্বিচারিতাপূর্ণ ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্তব্য করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার এই ভিশন-২০৩০ একটি ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন; এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। এই ভিশন জাতির সঙ্গে একটি তামাশা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির ভিশন হচ্ছে হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার ভিশন। তাদের ভিশন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার ভিশন, সন্ত্রাসবাদ কায়েমের ভিশন, দেশ বিক্রির ভিশন। ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, পরের মেধাস্বত্ব চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু দেউলিয়া হলে অপর একটি রাজনৈতিক দলের দেয়া আইডিয়া নির্লজ্জভাবে চুরি করতে পারে। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষে শেখ হাসিনা বাঙালী জাতির সামনে ‘ভিশন-২০২১’ তথা রূপকল্প-২০২১ উপস্থাপন করেছিলেন। ইতোপূর্বে কোন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কোন ধরনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেনি। জনগণ ২০০৮ সালে নিরঙ্কুশভাবে শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশের ওপর আস্থা স্থাপন করে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এই ভিশন-২০৩০ একটি মেধাহীন, অন্তসারশূন্য, দ্বিচারিতাপূর্ণ ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির ভিশন হচ্ছে হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার ভিশন। মূলত, এই বিএনপি এবং তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সহযোগী ও বেনিফিশারি হিসেবে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল না করলে গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসনকে হত্যা না করলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো এবং খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগের আইডিয়া চুরি করে জাতিকে ছবক দিতে হতো না। খালেদা জিয়ার আজকের বক্তব্য তার দলের অজ্ঞতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। তিনি অনেক বিষয় উপস্থাপন করেছেন যেগুলো ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। তাদের কাছে সততার বুলি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মানবাধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা শ্রবণ জাতির জন্য খুবই অপমানজনক। আজকে তারা ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারত নয়; ভৌগোলিক আয়তনের দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র। এখানে কোন প্রদেশ নেই যে এখানে একটি ফেডারেল গবর্নমেন্ট কার্যকর আছে। এটা স্বয়ং বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠকেও মতবিরোধ হয়েছে যা আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আজকে খালেদা জিয়া দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট দাবির মাধ্যমে আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করতে চায়। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা সত্ত্বেও তিনি এ ধরনের ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কাদেরকে খুশি করতে চান? উনি কী করে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান দেবেন? ক্ষমতায় থাকতে তো তিনি তার দলের রাষ্ট্রপতিকে বিনা কারণে অপসারণ করেছিলেন। দেশবাসী ভুলে যায়নি যে, বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলায় রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী জীবন বাঁচাতে মহাখালির রেললাইন ধরে পালিয়ে ছিলেন। তার কথায় মনে হয় তিনি রাষ্ট্রপতি আর তার দুর্নীতিবাজ পুত্র তারেককে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চান! তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বরাবরের ন্যায় এবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে আছেন এবং পক্ষেই থাকবেন। উগ্রসাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়েই তারা রাজনীতি করবে। তাদের ভিশন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার ভিশন, সন্ত্রাসবাদ কায়েমের ভিশন, দেশ বিক্রির ভিশন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির ইতিহাস নেতিবাচক রাজনীতির ইতিহাস; হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির স্রষ্টা বিএনপি। তাদের আন্দোলন করার মতো শক্তিমত্তা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের পদতলে দলিত হয়ে গেছে। ভিশন-২০৩০ সাল পর্যন্ত পৌঁছার পথ তাদের জন্য খোলা নেই। বেগম জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ বলে যে কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছেন এসবের অনেক কিছুই আওয়ামী লীগ আগেই তাদের দেয়া ‘ভিশন-২০২১’-এ রয়েছে। বিএনপির ভিশন যেমনই হোক এতে কোন নতুনত্ব নেই। তিনি বলেন, জেনারেল জিয়া সৃষ্ট কারফিউ গণতন্ত্রের ধারক, প্রতিহিংসার নেশায় উন্মত্ত হয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে দেশরতœ শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টা, ইনডেমনিটি আইন করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করা এই বিএনপির মুখে কোন ধরনের ভিশনের কথা বিশ্বাস করার মতো বোকামি বাংলাদেশের জনগণ আর কোন দিন করবে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতিহাস বলে এ দেশের জনগণকে স্বপ্ন দেখিয়েছে ভিশনারি আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ স্বপ্ন দেখিয়ে জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ দিয়েছে। সংবিধান দিয়েছে। পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এ জাতির ভাতের এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ। আর অন্যরা সব জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এখনও তাই হচ্ছে। দেশকে মধ্যম আয়ে নেয়ার স্বপ্ন ‘ভিশন-২০২১’ দেখিয়েছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে দেশ এখন নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারায় শীঘ্রই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। এ জাতিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশ আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করব ইনশাল্লাহ। ভিশন-২০৩০ লোক দেখানো- তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জনকণ্ঠের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ কে ‘লোক দেখানো’ উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে যে রূপকল্প- ২০২১ দিয়েছিলেন, সেটারই অনুকরণ করেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। আসলে তাদের সামনে কোন লক্ষ্য ছিল না বলেই নির্বাচনে হেরেছে। আগামী নির্বাচনে কিছুটা ভাল করতে চান বলেই হয়ত এবার লোক দেখানো লক্ষ্য দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনি ব্যালেন্স অব পাওয়ারের (ক্ষমতার ভারসাম্য) যে কথা বলেছেন, আমার মনে হয় সেটি উনি (খালেদা জিয়া) মিন (বুঝে) বলেননি। সংসদীয় গণতন্ত্রের কোথাও এটি নেই। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ কোথাও তা নেই। আর প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীই। দেশের নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ওপরই বর্তায়। ভিশনটি খালেদা জিয়ার ভ্রান্তিবিলাস- বিমানমন্ত্রী মেনন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন তার প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০কে ‘ভ্রান্তিবিলাস’ উল্লেখ করে জনকণ্ঠকে বলেন, ভিশন-২০৩০ নামে বিএনপি নেত্রী যেসব কথা বলেছেন তার অধিকাংশই পুরনো, নতুন কিছু নেই। বিশাল বক্তৃতায় তিনি যেসব ভাল কথা বলেছেন, ক্ষমতায় থাকতে তার কতটুকু তারা পালন করেছেন সেটাই আমার জিজ্ঞাসা। আর ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার যে কথা বলেছেন, সেটি ভ্রান্তিবিলাস ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। দেশের জনগণ তার সেই আশা কোনদিনই পূরণ হতে দেবে না। বিএনপি নেত্রীর ভাঁওতাবাজির ভিশন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দলটির মুখপাত্র মাহবুবউল আলম হানিফ তার প্রতিক্রিয়ায় জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি নেত্রী যে ভিশন-২০৩০ দিয়েছেন তা সম্পূর্ণই অন্তঃসারশূন্য, বিভ্রান্তি ও প্রতারণামূলক। খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে উনি ১৯৭৪ সালের বিশেষ আইন নাকি বাতিল করবেন। ক্ষমতায় অনেকবারই উনি ছিলেন, আইনটি বাতিল না করে বরং তা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে ঘায়েল করতেই আইনটি ব্যবহার করেছেন। এটি ধাপ্পাবাজির ভিশন- খাদ্যমন্ত্রী কামরুল খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ধাপ্পাবাজি-ভেল্কিবাজির। এসব করে বিএনপি জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারবে না। বিএনপি নেত্রী তাদের ভিশন নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে এ ভিশন নিয়ে দলের নেতারাই একমত হতে পারেননি। যে ভিশন নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যই বিরোধিতা রয়েছে সেই ভিশন ঘোষণা করে জনগণকে কাছে পাওয়া যাবে না। দেশের জনগণ তাদের ভাঁওতাবাজির রাজনীতি সম্পর্কে ভালই জানেন।
×