ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১২ শতাংশ করা হতে পারে ;###;১ জুন জাতীয় সংসদে দেয়া বাজেটে ঘোষণা করা হবে ;###;ভ্যাট হার নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ ;###;দিয়েছেন অর্থমন্ত্রীকে

ভ্যাট কমছে ॥ স্বস্তিকর পরিস্থিতিতে নেয়া হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১১ মে ২০১৭

ভ্যাট কমছে ॥ স্বস্তিকর পরিস্থিতিতে নেয়া হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হার নির্ধারণ করে ভ্যাট আইন সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়টি পরিষ্কার হবে। বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) মূসক অনলাইন প্রকল্পের ‘মোবাইল হেল্প ডেস্ক’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী মুহিত এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাজেট বক্তৃতায় নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে বিস্তারিত বলা হবে। ভ্যাট হার ‘কমফোর্টেবল’ করার চিন্তা আপনি করছেন বলে খবর আসছে- এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, দ্যাটস অলরাইট। সেটাই যথেষ্ট। তবে হার কত হবে বলতে পারব না। সেটা বাজেটে বলব।’ নতুন ভ্যাট আইন সংশোধন হচ্ছে কিনা- এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংশোধন বলতে পারেন। বিকজ আই এম অলরেডি সেইড, ভ্যাট হার স্বস্তিকর অবস্থায় নেয়ার চেষ্টা করা হবে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী ফিতা কেটে ভ্যাট অনলাইন মোবাইল হেল্প ডেস্ক’ (এনবিআর কর্মচারীদের বহনকারী বাস) উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে এনবিআরের গেটে নির্মিত ভ্যাট অনলাইন হেল্প ডেস্কের উদ্বোধন করা হয়। ব্যবসায়ীদের ভ্যাট নিবন্ধনে উৎসাহ দিতে এনবিআর চারটি বাসে এই ভ্রাম্যমাণ ভ্যাট অনলাইন মোবাইল হেল্প ডেস্ক স্থাপন করেছে। এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, এসব বাস প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনে যাবে। বাসে ঢাকার ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকবেন। পরে ঢাকায় আরও ৩টি এবং চট্টগ্রামে দুটি এ রকম বাস নামানো হবে। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান, এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক মোঃ রেজাউল হাসানসহ এনবিআর সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, আগামী ১ জুন সংসদে নতুন বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট পাসের পর আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূসক আইন বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে সকালে এশিয়া প্যাসিফিক ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের (এবিইউ) ৩য় গণমাধ্যম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় এ ক্ষতিগ্রস্ততা কাটিয়ে উঠেছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে উঠার জন্য বাংলাদেশ যেসব কর্মসূচী হতে নিয়েছে সেগুলো বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনা সবচেয়ে চমকপ্রদ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। ভ্যাট নিয়ে যা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাট আইন কার্যকর ও ভ্যাট হার নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া বাজেটে কি ধরনের পরিবর্তন আসছে এবং কোন কোন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে- এসব বিষয় নিয়ে নতুন বাজেটের একটি খসড়া প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী দু’একদিনের মধ্যে বাজেট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, ভ্যাট আইন সংশোধনে গত এক বছর ধরে ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শুধু তাই নয়, ১৫ শতাংশ ভ্যাটে ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়ে এলেও অর্থমন্ত্রী তার অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানিয়ে আসছিলেন। এনিয়ে গত ৩০ এপ্রিল এফবিসিসিআই ও এনবিআরের এক যৌথসভায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের তুমুল তর্কাবিতর্ক হয়। তবে ২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ কার্যকর করার কথা ছিল গত বছরের ১ জুলাই থেকে, কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা পিছিয়ে দেয় সরকার। তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিক্রির উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেয়া হবে। বরাবরই এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী অটল থাকলেও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কথায় ভ্যাট নিয়ে সরকারের নমনীয় হওয়ার আভাস পাওয়া যায়। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে তোফায়েল আহমেদ জানান, ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, আগামী বাজেটে ভ্যাট আইন সংশোধন ব্যবসায়ীদের মূল দাবি। ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করা হলে অর্থনীতি ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আইনটি সংশোধনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। বুধবার অর্থমন্ত্রীর কথায় তা আরও স্পষ্ট হলো। তবে ভ্যাটের নতুন হার কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি অর্থমন্ত্রী। বাজেটে ভ্যাট আইনে পরিবর্তন আসতে পারে, ভ্যাট হার কমানো ইত্যাদি শিরোনামে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুহিত বলেন, বাজেটে শুনবেন। এর আগে বলব কেন? এদিকে, ভ্যাটের হার কমানোর যুক্তিতে এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা ও ভ্যাট আইন বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, যারা পণ্য কিনে বিক্রি করেন, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে, মুদ্রাস্ফীতি হবে। আবার তা দিতে আগ্রহী হবে না ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে এনবিআর যুক্তি দেখাচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ এখনও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিচ্ছেন। আদায় করা সেই কর যেন ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেন, তা নিশ্চিত ও সহজ করবে নতুন আইন। এখন ব্যবসায়ীরা বিক্রির অনুপাতে ভ্যাট দিচ্ছেন না, যা নতুন আইনে দিতে হবে। এখন তারা বাৎসরিক নির্দিষ্ট একটি অঙ্ক ভ্যাট হিসেবে দিচ্ছেন। নতুন আইনে ভ্যাটের হিসাব বের করা ছোট ও ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের জন্য দুষ্কর হবে বলেও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর দাবি। ভ্যাট হার ১২ শতাংশ করা হতে পারে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) থেকে ইতোমধ্যে নতুন আইনে ৭ শতাংশ ভ্যাট হার নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ীদের দাবি, ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা। ভ্যাট-বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সামর্থ্য অনুযায়ী, ভ্যাট হার ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫ শতাংশ থেকে সংশোধন করে তা ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। ১৫ শতাংশ এ হারে ভ্যাট আরোপ জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে ও উসকে দেবে মূল্যস্ফীতি। এমনকি আগামী নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়তে পারে। সবদিক বিবেচনা করে ভ্যাটের হার কমিয়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। যদিও নতুন আইনে সর্বক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের নিয়ম করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে হ্রাসকৃত হারে (বিশেষ ছাড়) আদায়ের বিধান বাতিল করা হয়েছে। জানা গেছে, ১২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শীঘ্রই প্রস্তাব করা হবে। তাঁর সম্মতি পাওয়ার পর আইন সংশোধন করে তা কার্যকর হবে। বিতর্ক যা নিয়ে নতুন ভ্যাট আইন রেয়াত ও হিসাবনির্ভর। উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ এবং খুচরা-পাইকারী ব্যবসার প্রতি স্তরে রেয়াত বা ক্রেডিট নেয়ার সুযোগ আছে। এ সুবিধা নিতে হলে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে লেনদেনের চালান বা ইনভয়েস অবশ্যই রাখতে হবে। এ জন্য আধুনিক তথা কম্পিউটার ব্যবহার করে হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। বর্তমানে বড় গোছের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালান রাখে এবং তাদের হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিক। সারাদেশে তাদের সংখ্যা মোট ব্যবসায়ীর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশই এ দেশে মাঝারি ও ছোট গোছের ব্যবসায়ী, যারা লেনদেনের ক্ষেত্রে কোন চালান রাখে না এবং হিসাব সঠিকভাবে সংরক্ষণ করেন না।
×