ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুকুর নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেই

বগুড়ায় বাড়ছে জলাতঙ্ক রোগী ॥ ভ্যাকসিন অপ্রতুল

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১১ মে ২০১৭

বগুড়ায় বাড়ছে জলাতঙ্ক রোগী ॥ ভ্যাকসিন অপ্রতুল

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস ॥ রুদ্র মায়ের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে, মুখে ভয়ের চিহ্ন,সিফাত বাবার হাত ধরে আর হাসান বাবার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কেঁদে চলছে। তাদের চোখ-মুখে আতঙ্ক। তিন জনই শিশু। বাড়ির সামনে খেলার সময় বেওয়ারিশ কুকুর নখ দিয়ে আঁচড় অথবা কামড় দিয়েছে তাদের। হাসানের শরীরে দাগ থাকলেও ভ্যাকসিন দেয়ার ভয়ে কিছুতেই স্বীকার করতে চাইছে না তাকে কুকুর কামড়ে দিয়েছে। বলছে তার কিছুই হয়নি। অভিভাবকদের মুখেও শঙ্কার ছায়া। এ ধরনের চিত্র দেখা গেল সোমবার বগুড়া জেলা সদরের সরকারী হাসপাতাল বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের ভ্যাকসিনেশন সেন্টারের সামনে। এই হাসপাতালে এ রকম দৃশ্য প্রতিদিনের। এ্যান্টি-র‌্যাবিস ভ্যাকসিন(এআরভি) দেয়ার জন্য হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের কখনও দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ছুটির দিনেও চলে ভ্যাকসিন দেয়া। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রবের সঙ্গে বগুড়ায় আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে কুকুর কামড়ানোর সংখ্যা। এতে জলাতঙ্ক রোগের আশঙ্কাও বেড়ে গেছে মারাত্মকভাবে। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, একদিনে একই এলাকায় ৩৫ জনকে কুকুর কামড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। দু’বছর ধরে বগুড়া জেলা সদর হাসপাতালে কুকুর কামড়ানো রোগী আসার সংখ্যা বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। জেলা সদর হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে হাসপাতালে শুধু কুকুর কামড়ানো রোগীর মধ্যে প্রতিদিন ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে গড়ে প্রায় ৮ জনকে, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০ জন আর চলতি বছরের ৪ মাসের হিসাবে প্রতিদিন কুকুর কামড়ানোর ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে গড়ে প্রায় ১৩ জনকে। কুকুর আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ ভাগই শিশু-কিশোর। পৌর কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের বক্তব্য, বেওয়ারিশ কুকুর বেড়ে যাওয়ায় কুকুর কামড়ানোর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। তবে কুকুর কামড়ানো রোগীর সংখ্যা বাড়লেও জলাতঙ্ক রোগের প্রতিশেধক ভ্যাকসিন (এআরভি) সরবরাহ বগুড়া জেলা সদরের সরকারী হাসপাতালে কমেছে। হাসপাতালে চাহিদার দশ ভাগ ভ্যাকসিনও মিলছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জলাতঙ্ক রোগ দেখা দিতে পারে এমন প্রাণী কামড়ানোর ভ্যাকসিন আগে পৌরসভা ও জেলা পরিষদ থেকেও সরবরাহ করা হতো। এখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতায় শুধু জেলা সদর হাসপাতালের প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সদের মাধ্যমে অনুমোদিত কেন্দ্রে ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন হাসপাতালের ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে দেয়ার জন্য জলাতঙ্ক রোগ প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নিতে আসে ১৫ থেকে ২০ নতুন রোগী। হাসপাতালে ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় রোগীরা বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনে আনছেন। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিনেশন সেন্টার থেকে প্রতি ৪ রোগীর একটি গ্রুপ করে দেয়া হয় যাতে কম খরচে তারা ভ্যাকসিন দিতে পারেন। চিকিৎসকরা রোগীদের ভ্যাকসিনের ডোজ দেয়ার সূচী করে দেন। একটি ভ্যায়েল ৪ রোগী মিলে কিনে আনার পর সেখান থেকে ৪ জনকে প্রথম ডোজ পরবর্তীতে একইভাবে অন্য ডোজগুলো দেয়া হয়। বগুড়া পৌর মেয়র এ্যাডভোকেট মাহবুবুবর রহমান জানান, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য নিধন করা হতো। কিন্তু এখন মন্ত্রণালযের নির্দেশে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। এখন ভ্যাকসিনের মাধ্যমে বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি চলছে। তিনি আরও জানান, বগুড়ায় গত এক বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এ ধরনের কোন ভ্যাকসিন কর্মসূচী নেয়া হয়নি বা প্রাণিসম্পদ বিভাগকে বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণের জন্য তার দফতর থেকে কোন চিঠি দেয়া হয়নি। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ কর্মকর্তা শফিউজ্জামান জানান, যৌথভাবে কুকুর নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচী নেয়া হয়। তবে বগুড়ায় সাম্প্রতিক এ ধরনের কোন কর্মসূচী নেয়া হয়নি।
×