ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াকাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের টনক নড়েনি

খাস জমি দখলের মহোৎসব

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১১ মে ২০১৭

খাস জমি দখলের মহোৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১০ মে ॥ কুয়াকাটায় এখন সরকারী খাসজমিসহ বিভিন্ন দফতরের খাসজমি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। যে যার মতো করে জমি দখল করে সেখানে কাঁচা-আধাপাকা ও পাকা স্থাপনা তুলছে। আর কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কিংবা নবগঠিত পৌর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্তরায় হয়ে যাচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হবে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন। ফলে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষের দুর্বল ব্যবস্থাপনা এর জন্য দায়ী বলে স্থানীয়দের অভিমত। সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারী জমি দখলের দৌরাত্ম। ফ্রিস্টাইলে এসব চলছে। অন্তত শত কোটি টাকা মূল্যের শতাধিক একর খাস এবং অধিগ্রহণ করা জমি দখল করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জমি দখল হয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। রয়েছে সড়ক ও জনপদের জমিও। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের কেআর ফ্যাশন, গ্রান্ড হোটেল, হোটেল হানিমুন, হোটেল স্কাই প্যালেস, হোটেল ঘোষ ইন্টারন্যাশনালসহ অন্তত কুড়িটি আবাসিক হোটেল মালিকসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্রেতারা সরকারী জমি দখল করে নিয়েছে। এখন সেখানে চলছে বহুতল স্থাপনা তোলার তোড়জোর। কুয়াকাটা চৌরাস্তা শূূন্য পয়েন্টের পশ্চিমদিকে বেড়িবাঁধের ভেতরে সড়কের বাংলোর পরে তালগাছে পাউবোর লটকানো সাইনবোর্ডে লেখা ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত সরকারী সম্পত্তি। মৌজার নাম লতাচাপলী। জে এল নং-৩৪। খতিয়ান নং ১ ও ১২২৭। দাগ নম্বর ৫১৭৮। জমির পরিমাণ ১২ একর ৯৬ শতক। অথচ এখন তালগাছ আছে। নেই সাইনবোর্ড। চার বছর আগে উধাও হয়েছে। ওই জমির ওপর তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা। স্থানীয়দের অনুমান, কয়েকদিন পরে তালগাছও কেটে ফেলা হবে। ওখানকার এক শতক জমির বর্তমান মূল্য অন্তত পাঁচ লাখ টাকা। বছরের পর বছর এভাবে সাইনবোর্ড উধাও হওয়ার পর জমি দখল চললেও পাউবো কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। কুয়াকাটা চৌরাস্তার পুবদিকে মূল খতিয়ান ৬৬২ থাকলেও ১২০৩ নম্বর জাল খতিয়ান খুলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই একরের বেশি জমি দীঘিসহ ভরাট করে দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। একই দৃশ্য ৩৪ নম্বর মৌজার কুয়াকাটার দৃশ। মহিপুরে অরক্ষিত পড়ে আছে পাউবোর প্রায় ছয় একর জমি। ফাসিপাড়ায় পাউবোর ৭৫ শতক জমি দখল হয়েছে। এসব জমির সরকারী খাজনা পর্যন্ত ফিবছর পরিশোধ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি রহস্যজনক অভিযানের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় জিরো পয়েন্টের পুবদিকে প্রায় দুই শ’ অস্থায়ী ক্ষুদে ব্যবসায়ীর দোকাপাট ভেঙ্গে দেয়। এসব সাধারণ মানুষ এখন জীবিকার উপায়হারা হয়ে বেকার। কিন্তু একই বাঁধের স্লোপের পশ্চিম দিকের স্থাপনা এখনও উচ্ছেদ করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ছাড়াও সরকারী খাল পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না। খোদ রক্ষক হয়ে ভক্ষকে পরিণত হয়েছে কুয়াকাটা পৌরসভা । তারাই ২৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে কোন টেন্ডার কিংবা সরকারী অনুমোদন ব্যতিরেকে সরকারী খাস জমিতে এবং খাল বালু ভরাট করে মার্কেট গড়ে তুলেছে। পৌরসভার ঘাটলার খালের পারসহ ভরাট জমি দখল করে টিনশেড স্থাপনা তোলা হয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে এসব স্থাপনা তোলা হয়। এখনও এ কার্যক্রম অব্যাহত। জানা গেছে, পৌরশহরের ভরাট এ খালের ৪৩ শতাংশ জায়গা বালু দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। যেখানে ২৯টি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পৌরসভার তিন প্রভাবশালী কাউন্সিলরসহ ভাগ্যবানরা আবার ওই দোকান ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। অবৈধ এ কাজটি করতে আবার অবৈধভাবে সাগর সৈকত এবং খাজুরা মোহনা থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহআলম হাওলাদার এবং ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হোসেন ফরাজী এ দুটি স্থাপনা তুলেছেন। দু-একদিনের মধ্যে ৬ নং ওয়ার্ডের আরেক ভাগ্যবান কাউন্সিলর পান্না মিয়াও স্থাপনা তুলবেন। এজন্য কাঠ-খুঁটি সংগ্রহ করা হয়েছে। কাউন্সিলর আবুল হোসেন ফরাজী জানান, কাজ করতে গেলে সামান্য এদিক- সেদিক হতে হচ্ছে। তিনি নিজে মাছের ব্যবসা করেন। যে কারণে ঘর তুলেছেন। তবে নিয়ম মাফিক হয়েছে কিনা তা মেয়র সাহেব জানেন বলে মন্তব্য এ কাউন্সিলরের। সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লাগবে বলে পান্না মিয়ার মতামত। নিজেরা এসব টাকা পকেট থেকে খরচ করেছেন বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। পরে দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি সমন্বয় করার কথা জানালেন তিনি। পান্না মিয়া জানান, কিছু জায়গা খালের মধ্যে থাকতে পারে। তবে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে এ জমি চেয়ে আবেদন করেছেন বলে জানালেন। এভাবে নিয়ম-কানুনের বালাই না রেখে চলছে দখল তা-ব। মহিপুর ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা কিংবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারা কেউ এ খাস জমি ব্যবহারের অনুমতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি।
×