ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সময়ের অভিনয়শিল্পী শেখ মাহবুবুর রহমান

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১১ মে ২০১৭

সময়ের অভিনয়শিল্পী শেখ মাহবুবুর রহমান

সাজু আহমেদ ॥ এই সময়ের অন্যতম মেধাবী অভিনয় শিল্পী শেখ মাহবুবুর রহমান। একাধারে তিনি অভিনয়শিল্পী, আবৃত্তিকার ও মঞ্চকর্মী। পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপন চিত্রেও কাজ করেছেন। অসংখ্য মঞ্চ ও টিভি নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। এসব কাজে শক্তিমান অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজের মেধাসত্তার জানান দিয়েছেন। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করতে অভ্যস্ত শেখ মাহবুবুর রহমান শিল্পী হিসেবে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহণের স্বপ্ন দেখেন। তাইতো অভিনয়ের ক্ষেত্রে আনন্দ, সততা, নিষ্ঠা ও শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেন। সেই লক্ষ্যে শিল্পসাধনায় ব্রত মাহবুবুর রহমান এগিয়ে চলেছেন তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানায় ১৯৭০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি শেখ মাহবুবুর রহমানের জন্ম। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। এক কন্যা সন্তানের জনক। ১৯৮৫ সালে অবলোকন নাট্য চর্চাকেন্দ্রে কর্মশালার মাধ্যমে থিয়েটার জীবন শুরু করে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। এখানে তিনি ‘রানি ও বিদ্রোহীরা’ এবং ‘জুলিয়াস সিজার’ এবং ১৯৯২-১৯৯৪ পর্যন্ত ‘ঢাকা বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে’র হয়ে ‘দুবলো ডাঙ্গির চর’ নাটকে অভিনয় করে। পাশাপাশি বিভিন্ন আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর পর ১৯৯৬ সাল থেকে নাট্যকেন্দ্রের নিয়মিত সদস্য শেখ মাহবুবুর রহমান তৌকির আহমেদের পরিচালনায় ‘হয়বদন’ ও তারিক আনাম খানের নির্দেশনায় ‘আরজ চরিতামৃত’ নাটকে অভিনয় করেন। এছাড়া ‘ক্রুসিবল’ নাটকের মঞ্চ ব্যবস্থাপক এবং ‘ডালিমকুমার’ নাটকে প্রযোজনা ব্যবস্থাপক ছিলেন। নাট্যকেন্দ্রের হয়ে তিনি ২০১০ সালে মিসর, ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার আমন্ত্রণে দিল্লী ও কলকাতায় আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে অংশ নেন। শিল্পকলা একাডেমির ‘দ্য লায়ন এ্যান্ড দ্য জুয়েল’ নাটকে অভিনয় করেন। রহমত আলী ও জিল্লুর রহমান জনের প্রশিক্ষণে শিল্পকলা একাডেমির মূকাভিনয় কর্মশালা করেন। ১৯৯৩ সালে অভিনয় শিল্পী হিসেবে বিটিভিতে তালিকাভুক্ত হন। বিটিভির আয়োজনে বাংলাদেশ গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট থেকে ‘টেলিভিশন নাট্যাভিনয় কৌশল‘ বিষয়ক কর্মশালা করেন। নিয়মিত অভিনয়ের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন শেখ মাহবুবুর রহমান। অভিনয়ই এখন তাঁর নেশা ও পেশা। শেখ মাহবুবুর রহমান অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলো হলো হাবিব মাসুদের ‘অমর কবি’ ও ‘গণিত মাস্টার’, ওয়াহিদ তারেকের ‘নিরুদ্দেশ’, আবু হায়াত মাহমুদের ‘প্রত্যাবর্তন’, ‘বোকা বাকশো’, ‘আধারের ঋণ’, ‘দিলিপ কুমার ও বৈজন্তি মালা’, আবুল হোসেন খোকনের ধারাবাহিক ‘তিন গোয়েন্দা’, সাইফ আহমদের ‘লিয়াকতের লটারি’ ও মিনি ধারাবাহিক ‘চান্স মাস্টার দ্য পালাকার’, শুভ্র খানের ‘অনাকাক্সিক্ষত সত্য’, মুরসালিন শুভর ‘একটা লাইক দিবেন প্লিজ’, শামস করিমের ‘হিটার’ ও ‘ভালোবাসা কারে কয়’, নুরুল আলম মিল্কির ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’, অম্লান বিশ্বাসের ‘যাও পাখী’, ফয়সাল রাজিবের ‘শুধু ভালবাসি বলে’, আমিরুল ইসলাম অরুণের রচনা ও পরিচালনায় ‘শেফালী’, প্রীতি দত্তের রচনা ও বিশ্বজিত দত্ত ও প্রীতি দত্তের যৌথ পরিচালনায় ‘এম্বুষ’, ও ‘বাইসাইকেল প্রেম’, মাইদুল রাকিবের রচনা ও পরিচালনায় ‘রক’ এবং আবু রায়হান জুয়েলের ‘বিউটি বোট’ প্রভৃতি। বর্তমানে মাসুম শাহরিয়ারের রচনা ও আবু হায়াত মাহমুদের পরিচালনায় ‘বৃষ্টিদের বাড়ি’ বাংলাভিশনে প্রচার হচ্ছে। মারুফ রহমানের রচনা এবং মারুফ মিঠুর পরিচালনায় ‘বউ বকা দেয়’ প্রতি শনি থেকে একুশে টিভিতে এবং মাসুম শাহরিয়ারের রচনা ও গোলাম মুক্তাদির শানের পরিচালনায় ‘উৎসব’ নাটকটি দেশ টিভিতে প্রচার হচ্ছে। এছাড়াও প্রচারের অপেক্ষায় কচি খন্দকারের রচনা ও পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘সিনেমা হল’, মাসুম শাহরিয়ারের রচনা এবং আবু হায়াত মাহমুদের পরিচালনায় ‘বনলতা’, আশরাফুল চঞ্চলের রচনা এবং শামস করিমের পরিচালনায় ‘হোসেন ভাইয়ের দোকানে আসা মানুষজন’ ইত্যাদি। পাশাপাশি প্রসূন রহমানের পরিচালনায় ‘ঢাকা ড্রিম’ চলচ্চিত্রের শূটিংয়ের কাজ শেষ করেছেন। মাহমুদ হাসান সিকদারের ‘অবতার’ চলচ্চিত্রে কাজের কথা চলছে। শেখ মাহবুবুর রহমান অভিনীত বিজ্ঞাপনচিত্রগুলো হলো ‘পিএসপি এরাবিয়ান হর্স’, ‘বাংলালিংক’, ‘নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র’, ‘প্রথম আলো’, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও ‘উজলা পেইন্টস’ প্রভৃতি। এছাড়াও প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। শিল্পী হিসেবে শিক্ষক ও গুরুজন তারিক আনাম খান তার আদর্শ। অভিনয়ের পাশাপাশি সুশৃঙ্খল জীবনের পাঠ ও তার কাছ থেকে শেখা। এই অভিনেতা মনে করেন শুদ্ধ অভিনয়ের লক্ষ্যে চর্চা, পড়াশুনা এবং কাজের ক্ষেত্রে সততার কোন বিকল্প নেই। সকল পরিশুদ্ধতা লালনকারি এই মানুষটি তার সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে এগিয়ে যাবেন তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। তার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
×