ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দঃ কোরিয়ায় পরিবর্তনের হাওয়া

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১১ মে ২০১৭

দঃ কোরিয়ায় পরিবর্তনের হাওয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন সদ্যনির্বাচিত উদারপন্থী নেতা মুন জা-ইন। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে পরিবর্তনের নতুন হাওয়া শুরু হলো। বুধবার রাজধানী সিউলের পার্লামেন্ট ভবনের রোটান্ডা হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশটির ১৯তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুন শপথ গ্রহণ করেন। ব্যাপক দুর্নীতি কেলেঙ্কারির মুখে সাবেক প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর অনুষ্ঠিত আগাম নির্বাচনে জিতে মুনের এ দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় নেতৃত্বে শূন্যতা পূরণ হলো। দেশটিতে ঐক্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া সফর করা এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বিতর্কিত ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট মুন। উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে মুক্ত মনোভাবের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই নেতা দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হবেন। দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিশন মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বেসরকারীভাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে বলে মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের। দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে ৪১ দশমিক ০৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন মুন জা-ইন। তার পক্ষে ভোট দিয়েছেন মোট এক কোটি ৩১ লাখ ২৩ হাজার ৮শ’ ভোটার। মুনের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিবার্টি কোরিয়া পার্টির হং জুন-পিয়ো পেয়েছেন ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার আগেই বুথ ফেরত জরিপে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, মুন-ই হতে যাচ্ছেন জিউন-হাইয়ের উত্তরসূরি। ভোট গণনার সময় ডেমোক্র্যাটিক দলের এই প্রার্থী অবস্থান নিয়েছিলেন রাজধানী সিউলের গুয়ানঘুয়ামুন স্কয়ারে। সেখানে তিনি সমর্থকদের বলেন, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সব মানুষের প্রেসিডেন্ট হতে চান। নিজের বিজয় নিশ্চিত হয়ে উঠলে তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেকেই সমর্থন জানিয়ে আসছেন এবং আমার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। তারা চান এমন একটি ন্যায়সঙ্গত ও একতাবদ্ধ দেশ গড়তে, যে দেশটিতে নীতি ও সাধারণ জ্ঞানের মূল্য রয়েছে। তাদের জন্য এটি একটি বড় বিজয়।’ ধারণা করা হচ্ছে, ৬৪ বছর বয়সী সাবেক এই মানবাধিকারকর্মী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করলে উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে দক্ষিণ কোরিয়ার নীতি বদলাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার আগের সরকারগুলো উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে কঠোর মনোভাব দেখালেও মুন জা-ইন পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পক্ষে। মুন এমন একটি সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন যখন একদিকে দক্ষিণ কোরিয়া আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলা করছে, অন্যদিকে কোরিয়া উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া কার্যত যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ৬৫ বছর বয়সী পার্ক জিউন-হাই। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। পার্কের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, নিজ ক্ষমতার অধীনে তিনি তার বন্ধুকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেন। পার্ক জিউন-হাইয়ের বন্ধু চোই সুন-সিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদানের নামে ৬৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেন। এর মধ্যে স্যামসাং এবং হুন্দাইয়ের মতো কোম্পানিও রয়েছে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ বছরের কারাদ- হতে পারে পার্কের। এই অভিযোগেই গত ১০ মার্চ পার্লামেন্টে অভিশংসিত হন পার্ক। তখনই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। ৩০ মার্চ আদালতের আদেশে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৭ এপ্রিল সাংবিধানিক আদালতে চূড়ান্তভাবে ক্ষমতাচ্যুত হন পার্ক। উত্তর কোরিয়া থেকে আসা শরণার্থী পরিবারের ছেলে মুন জা-ইন ১৯৭০ এর দশকে ছাত্র থাকাকালে পার্ক জিউন হাইয়ের বাবা এবং তৎকালীন সামরিক শাসক পার্ক চুং-হি’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়ার কারণে জেলে গিয়েছিলেন। এরপর মানবাধিকার আইনজীবী হওয়ার আগে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষ বাহিনীতে কাজ করেন। মধ্য-বাম ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মুন জা-ইন ২০১২ সালের নির্বাচনে পার্ক জিউন হাইয়ের কাছে হেরে যান। পার্ক আমলের কেলেঙ্কারি থেকে দেশকে সরিয়ে নেয়ার যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে জনগণের কাছে নিজেকে তুলে ধরেছেন তিনি। তিনি নিজে কিংবা শুধু তার দলই বরং পুরো দেশ অধীর আগ্রহে সরকারের পরিবর্তন চাইছে বলেই মনে করেন মুন। এর আগে মুন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর সংলাপের পক্ষে কথা বলার পাশাপাশি দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাওয়া এবং নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার কথাও বলেছিলেন। উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচী বন্ধে ব্যর্থতার জন্য আগের দুটো রক্ষণশীল প্রশাসনের সমালোচনাও করেছেন তিনি। তবে কোরিয়া উপদ্বীপে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচনের ওপর নিবিড় নজরদারির নিশ্চয়তা থাকার কারণে দক্ষিণ কোরীয়রা এখন দুর্নীতি দূর করা এবং অর্থনীতির দিকটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। একইসঙ্গে প্রাধান্য পাচ্ছে তরুণদের বেকারত্বের হার কমানোর বিষয়টি।
×