ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাজকিয়া নুর মুন

সুপার হিরোরা এবার সুপার ফ্লপ!

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১০ মে ২০১৭

সুপার হিরোরা এবার সুপার ফ্লপ!

ক্রিস গেইল, বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স। একজন সিক্স-মেশিন তো অন্যজন রান-মেশিন। এবিকে বলা হয় ক্রিকেটের সুপারম্যান। এদের সঙ্গে রয়েছেন টি২০’র সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। নতুন পেস সেনসেশন টাইমাল মিলস। আছেন কেদার যাদবের মতো ঠা-া মাথার খুনী, চাহালের মতো ধূর্ত স্পিনার। সব মিলিয়ে আইপিএলে ঝড় তোলার কথা ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর। আর সেই দলটাই কি না এবার ঝড়ে পথ হারানো এক কাফেলা। সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে কোহলির দল। শেষ পর্যন্ত কোনভাবেই কিছু হয়নি। কোহলি বহু চেষ্টা করেছেন তবে কিছুইতেই দলের পতন ঠেকাতে পারেননি। তারকায় ভরা দল নিয়েও মাঠে পারফর্ম করতে পারেনি ব্যাঙ্গালুরু। এবারের আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে কোহলিদের বিদায়টা সবার আগে। সোমবার এ ফিচার লেখার সময় লীগ পর্বে ১৪ ম্যাচের মধ্যে ১৩ খেলায় ১০ হার। জয় মাত্র ২টিতে। একটি পরিত্যক্ত। এর মধ্যে আবার আইপিএলের সর্বনিম্ন ৪৯ রানের লজ্জার রেকর্ডটাও নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে ব্যাঙ্গালুরু। এবারের আইপিএলে ১০০ রানের নিচে দলীয় ইনিংস দুটি। দুটির মালিকই ব্যাঙ্গালুরু। যে দলে কোহলি-এবি-গেইলদের মতো ব্যাটসম্যানরা আছেন তারা কিনা ৪৯, ৯৬, ১১৯, ১৩৪ (দুবার), ১৩৫, ১৪২, ১৪৮ রানের মতো স্কোর করে। প্রধান পাঁচ তারকা কোহলি, ডি ভিলিয়ার্স, গেইল, ওয়াটসন ও টাইমাল মিলসকে খেলানোর জন্য ৫৫ কোটি রুপী খরচ করেছে ব্যাঙ্গালুরু। যেখানে দিল্লী, গুজরাটের পুরো স্কোয়াডের দামও এর চেয়ে কম। এবারের আসরে কোহলির দাম ১৫ কোটি, মিলস ১২ কোটি, ডি ভিলিয়ার্স সাড়ে ৯ কোটি, ওয়াটসন ৯ কোটি ৪০ লাখ ও গেইলকে দিতে হয়েছে ৯ কোটি রুপী। অথচ সেই দলটির গড় রান ১৪০ এর আশপাশে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৪৭ রান করেছেন কেদার যাদব, এরপর কোহলি ২৫০, ডি ভিলিয়ার্স ২০৬, ও ক্রিস গেইল ১৫২। ৮৯ রানের ইনিংস দিয়ে শুরু করা ডি ভিলিয়ার্স এরপর পাঁচ ইনিংস মিলে করেন ৬৪ রান। গেইল মাঝখানে ৩৮ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেললেও বাকি পাঁচ ইনিংসে ৫৭। কোহলিও দুটি হাফসেঞ্চুরি করলেও পুরো আসরেই ছিলেন ফ্লপ। ওয়াটসন বলার মতো কিছু করতে পারেননি। বল হাতে টাইমাল মিলসকে এবারের আসরে সেরা ফ্লপ তারকা বলা যেতে পারে। ওয়াটসন ৭ ম্যাচে নিয়েছেন মোট ৭ উইকেট। মোট কথা, কেবল তারকা থাকলেই যে, ম্যাচ জেতা যায় না এবারের আসরে সেটি আবার প্রমাণ করলেন কোহলি-গেইলরা। ব্যাট হাতে নিজে ব্যর্থ, ব্যর্থ তার দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুও (আরসিবি)। ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো জগদ্বখ্যাত সব ক্রিকেটার নিয়েও এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) সবার আগে লীগ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। ভক্তদের কাছে তাই ক্ষমা চাইলেন আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহলি। নিজের টুইটার এ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, ‘এই মৌসুমে নিঃশর্তভাবে ভালবাসা আর সমর্থন জানানোর জন্য বেঙ্গালুরুর সকল সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাই। ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা আমাদের মানের সঙ্গে খেলতে পারিনি বলে।’ এবারের আইপিএলকে মনে রাখতে চাইবেন না ভারত জাতীয় দলের অধিনায়ক ও সময়ের বড় তারকা কোহলি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেয়া ব্যাটসম্যান পুরোপুরি ব্যর্থ। সন্দীপ শর্মা, কাল্টার নাইলরা যেভাবে বলে বলে বোকা বানিয়েছেন, তা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। ইনজুরির জন্য শুরু থেকে ছিলেন না। ৯ ম্যাচে কোহলির রান ২৫০। গড় ২৭.৭৭। অথচ ২০১৬ সালে আগের সংস্করণে ছিলেন দুর্দান্ত। ৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেন টুর্নামেন্টে রেকর্ড রান। সেই সুবাদে ফাইনালও খেলেছিল তার দল। এবার কোহলির অফ ফর্মের থেকেও বিশেষজ্ঞদের যেটা সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, সেটা হলো তার আউট হওয়ার ধরন। তার ব্যাটিংকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে উলেখ করেছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার। তাকে আয়নার সামনে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গাভাস্কার বলেন, ‘বিরাটকে ক্রিজে আরও বেশি সময় দিতে হবে। কথা বলতে হবে নিজের সঙ্গে। পাঞ্জাবের বিপক্ষে যে শট খেলে আউট হয়েছে বিরাট, সেটা তো খারাপ ছিলই, ইডেনের শট ছিল আরও খারাপ। ওর উচিত এখনই আয়নার সামনে দাঁড়ানো। সে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো ব্যাটিং করেছে।’ অথচ কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে ব্যাট হাতে ঝলক দেখাচ্ছেন গেইলেরই জাতীয় দল সতীর্থ সুনীল নারাইন। যার মূল পরিচয় বোলার। ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছেন বোলার হিসেবে। ডানহাতি অফস্পিন দিয়ে কার্যকর ভূমিকাও রাখেন নারাইন। কিন্তু এর আগে ব্যাটসম্যান হিসেবে কখনই সেভাবে আলোচনায় আসেননি ক্যারিবিয়ান এই ক্রিকেটার। আসবেনই বা কেন। পাঁচ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কখনও একটা হাফসেঞ্চুরিও করতে পারেননি। যখন সেই সেটি করলেন, তখন সেটি হয়ে গেল একটা রেকর্ড। আইপিএলে যেন নতুন করে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাটসম্যান নারাইনকে। আর দুর্দান্ত ঝড়ো ব্যাটিং করে তিনি যেন পাল্লা দিলেন এ সময়ের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের সঙ্গে। কলকাতার হয়ে কয়েক ম্যাচে ধরেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখা যায় নারাইনকে। ঝড়ো ব্যাটিং দিয়ে নজরও কাড়েন তিনি। তবে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ‘ব্যাটসম্যান’ নারাইন। অর্ধশতক করেন মাত্র ১৫ বলে। আইপিএলে সবচেয়ে কম বলে অর্ধশতকের রেকর্ডে তিনি নাম লিখিয়েছেন ইউসুফ পাঠানের পাশে। ২০১৪ সালে কলকাতার জার্সি গায়েই ইউসুফ অর্ধশতক করেছিলেন ১৫ বলে। ১৫ বলে অর্ধশতকের রেকর্ডে ভাগ বসানোর পর নারাইন শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ৫৪ রান করে। মেরেছেন ছয় চার ও চার ছয়। সব ধরনের ক্রিকেটে এটিই এখন পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। মজার বিষয় হলো, নারাইন যখন বিধ্বংসী এই ইনিংসটি খেলছিলেন, তখন প্রতিপক্ষ দলের হয়ে ফিল্ডিং করছিলেন ক্রিস গেইল ও ডি ভিলিয়ার্স। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য যারা ক্রিকেটবিশ্বে আলাদাভাবেই বিবেচিত হন।
×