ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষায় প্রথম হয়েও মিলছে না নিয়োগ ॥ আগেই অন্য প্রার্থীর বিবৃতি

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১০ মে ২০১৭

পরীক্ষায় প্রথম হয়েও মিলছে না নিয়োগ ॥ আগেই অন্য প্রার্থীর বিবৃতি

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেও কলারোয়া বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন না আবদুল ওহাব। গত ছয় মাস ধরে তাকে নিয়োগ না দিয়ে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কলেজের পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক এমএ ফারুক। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে আবদুল ওহাবের বিরুদ্ধে বিএনপির রাজনীতির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে একটি নাশকতার মামলাও দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ এনে কলেজ সভাপতি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যয়নপত্র পাঠিয়ে এই নিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। সাতক্ষীরা ১ আসনের সংসদ সদস্য ডিও দেয়ার কথা স্বীকার করে সোমবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, আব্দুল ওহাবের ডিগ্রী কলেজে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকায় এই ডিও দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনেন বলে এমপি জানান। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এমএনএ মমতাজ আহমদের পুত্র অধ্যাপক এমএ ফারুক অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ আনার পরই এই খবর পত্রিকায় প্রকাশের আগেই বিভিন্ন সংবাদ প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবে বিবৃতি পাঠিয়েছেন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করা প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুর রহিম। তিনি দেয়া বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গত বছর কলারোয়া হোমিও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল উদ্বোধনের দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তালা কলারোয়ার সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। তিনি এমএ ফারুককে বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে আব্দুর রহিমকে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করেন ও তাকে তার বিনিময়ে রহিম দশ লাখ টাকা দেবেন বলে প্রস্তাব করেন বলে যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন। ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে আব্দুর রহিম বলেন, ওই সময় কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন ও সাবেক আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনু ও অধ্যক্ষ মোঃ ইউনুস আলীসহ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজে আওয়ামী ঘরানার যোগ্য প্রার্থী আব্দুর রহিমকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের জন্য এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহ’র কাছে সুপারিশ করেন। তখন এমপি প্রকাশ্যেই বলেন, আব্দুর রহিমকে নিয়োগ দিয়ে দশ লাখ টাকা পাচ্ছেন এর থেকে পাঁচ লাখ টাকা হোমিওপ্যাথি কলেজ ফান্ডে দেবেন বাকি পাঁচ লাখ টাকা বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের ছাদের নির্মাণের জন্য রাখবেন। ছাদ নির্মাণের বাকি টাকা তিনিই দেবেন। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে এমএ ফারুক বলেন, কলারোয়া বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নজিবুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করায় তার স্থলে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এ ব্যাপারে ২০১৬ সালের ৩ নবেম্বর সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ডের হয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মহাপরিচালক যথাক্রমে অধ্যক্ষ মুস্তাফিজুর রহমান ও অধ্যক্ষ বাসুদেব বসু। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন পরিচালনা পরিষদ সভাপতি এএম ফারুক, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অসীম কুমার ও শিক্ষক প্রতিনিধি নিলুফার ইয়াসমিন। তিনি বলেন, নিয়োগ বোর্ডের লিখিত পরীক্ষা ও সাক্ষাতকারে প্রথম হন আবদুল ওহাব। এছাড়া দ্বিতীয় হন মোঃ মাহবুবুর রহমান ও যৌথভাবে তৃতীয় হন আবদুর রহিম ও বখতিয়ার রহমান। নিয়োগ বোর্ডের এই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কলেজ পরিচালনা পরিষদ এতে অনুমোদন দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী যথাসময়ে কাগজপত্র পাঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় নিয়োগ বিষয়ক চূড়ান্ত কাগজপত্র তৈরির মুহূর্তে তালা কলারোয়ার একজন জনপ্রতিনিধি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন ‘আবদুল ওহাব স্থানীয় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি। তাকে নিয়োগ দিলে এলাকায় উত্তজনা বৃদ্ধি পাবে’। তিনি এই নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশ করেন। ঠিক একই সময়ে গত ৭ জানুয়ারি আবদুল ওহাবের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানার একটি নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। অধ্যাপক এমএ ফারুক কলারোয়া বিএনপি ও কলারোয়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের লিখিত প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, অধ্যক্ষ প্রার্থী আবদুল ওহাব কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংযুক্ত নন।
×