ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১০ মে ২০১৭

ফ্রান্সের নতুন প্রেসিডেন্ট

ভোটের পূর্বাভাসই সত্যি হলো। ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। গত রবিবার অনুষ্ঠিত ভোটে ম্যাক্রোঁ ৬৫ দশমিক ৯ ভাগ ভোট পেয়েছেন আর ইইউবিরোধী কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী লি পেন পেয়েছেন ৩৪ দশমিক ১ ভাগ ভোট। ম্যাক্রোঁ ইইউপন্থী ও মধ্যপন্থী হিসেবে নিজের পরিচিতি স্পষ্ট করেছেন ভোটারদের কাছে। তাঁকে ফ্রান্সের ভোটাররা বেছে নেয়াতে মনে হচ্ছে তিনি তাদের পছন্দের এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে অগ্রাধিকার পেয়েছেন। মাত্র ৩৯ বছর বয়স নতুন প্রেসিডেন্টের এবং মাত্র ১ বছর আগে তিনি গঠন করেন রাজনৈতিক দল। বয়স এবং দলের কথা বিবেচনা করলে তিনি যে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। ফ্রান্সের মতো একটি গণতান্ত্রিক, শিক্ষিত, আধুনিক দেশে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারা কম কৃতিত্ব নয়। ম্যাক্রোঁ রাজনীতিতে নবীন হয়েও চমক দেখিয়েছেন এবং বুঝিয়েছেন আত্মবিশ্বাস আর সদিচ্ছা থাকলে বয়স কোন বাধা নয়। এবং সেই সঙ্গে ম্যাক্রোঁ এটাও প্রমাণ করলেন দেশের দুটি প্রধান ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে নতুন দল গঠন করেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা যায়। এই মুহূর্তে ফ্রান্সে বিস্ময় সৃষ্টিতে ম্যাক্রোঁর কোন জুড়ি নেই। তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাক্রোঁকে প্রথমেই দুটি ইস্যুকে গুরুত্ব দিতে হবে আর তা হচ্ছেÑ বেকারত্ব এবং নিরাপত্তা। কারণ এ নির্বাচনে প্রধান ইস্যুর একটি ছিল নিরাপত্তা অন্যটি বেকারত্ব। ফ্রান্সে এখনও জরুরী অবস্থা বিদ্যমান। সময়ে বেশকিছু জঙ্গী হামলার কারণে বিদায়ী ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদকে বাধ্য হয়ে জরুরী অবস্থা জারি করতে হয়েছে। যে কোন মূল্যে এবং কৌশলেই হোক ম্যাক্রোঁকে ফ্রান্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর বেকারত্ব দূরীকরণে দ্রুত বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বেকারত্বের দিক থেকে ২৮টি ইইউভুক্ত দেশের মধ্যে ফ্রান্সের অবস্থান অষ্টম। এটা ফ্রান্সের জন্য মর্যাদাহানিকর বিষয়, কাজেই এর দ্রুত সুস্থ সমাধানই সকলের কাম্য। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই ম্যাক্রোঁকে ভোটারদের আস্থা টিকিয়ে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিত্র দেশের, ধনিক ও বণিক শ্রেণীর সহযোগিতা তিনি কাজে লাগাতে পারেন, শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগে আগ্রহীদের উৎসাহ ও সহযোগিতা দিতে পারেন। মাত্র তিন বছর আগে ম্যাক্রোঁ অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আর এখন হতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। তাও আবার দুই দফা ভোটে জিতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীকে বড় ব্যবধানেই হারিয়ে। বিজয়ী ম্যাক্রোঁকে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেননি পরাজিত প্রার্থী লি পেন। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এবং শিক্ষা। বিজয়ী হয়ে ম্যাক্রোঁ যেমনটি বলেছেন, আমাদের দেশের দীর্ঘ ইতিহাসে আজ থেকে নতুন অধ্যায় শুরু হলো, আমার দায়িত্ব হবে ভীতি দূর করা এবং আশাবাদ জাগানো। তাঁর এই উক্তির মধ্যে কোন অত্যুক্তি থাকবে না যদি তা বাস্তব ও সত্য হয়ে দেখা দেয়। নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী কট্টর জাতীয়তাবাদী লি পেন যেমনটা বলেছিলেন, ‘বিশ্বায়নপন্থীদের’ বিরুদ্ধে ‘জাতীয়তাবাদীদের’ লড়াই, শেষ পর্যন্ত দেখা গেল মুক্তবাণিজ্য, অভিবাসন ও যৌথ সার্বভৌমত্বের অভিলাষীদেরই জয় হলো। শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং আত্মকর্মসংস্থানে যুক্ত মানুষের সুরক্ষার বিষয়টিই যেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে গুরুত্ব পায়Ñ তাহলেই তার প্রতিশ্রুতি পূরণের অঙ্গীকার অমান্য হবে।
×