ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১০ মে ২০১৭

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব গৌতম বুদ্ধের জন্মোৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ। গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের এ প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রদীপ প্রজ্ব¡লন ও সমবেত প্রার্থনা শেষে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন ৮০ বছর বয়সে। সঠিকভাবে বললে আজ থেকে (২৫৬১+৮০), ২৬৪১ বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। খ্রিস্টের জন্মের ৬২৩ বছর আগে সিদ্ধার্থের (পরবর্তী সময়ে গৌতম বুদ্ধ) জন্ম হয়। তিনি ৩৫ বছর বয়সে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে বুদ্ধত্ব জ্ঞান বা বোধিজ্ঞান লাভ করেন। আর মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন (৬২৩-৮০) খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে। বুদ্ধপূর্ণিমা বিশ্ব বৌদ্ধদের বৃহত্তম ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। ইদানীং বিশ্বব্যাপী ঘটা করে বুদ্ধপূর্ণিমা পালিত হতে দেখা যায়। জাতিসংঘের সদর দফতরে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন করা হয়েছে। সিদ্ধার্থের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের মতো মহান ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা এখন সর্বজনীন উৎসব। বাংলাদেশেও সাড়ম্বরে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হচ্ছে। এদিনে সরকারী ছুটি থাকে। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধরা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী তাদের সঙ্গে বুদ্ধপূর্ণিমার শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন। কোন কোন জাতীয় পত্রিকা বুদ্ধপূর্ণিমার বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং নিবন্ধ প্রকাশ করে। সম্প্রতি কিছু কিছু টিভি চ্যানেলে বুদ্ধপূর্ণিমা-বিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। তবে তা সংখ্যায় কম। অথচ বুদ্ধপূর্ণিমার তাৎপর্য ও গুরুত্ব নিয়ে সংবাদ এবং গণমাধ্যমে আরও বেশি আলোচনা হওয়া দরকার। ত্রিপিটকে উল্লেখ আছে, জগৎ অনাচার, পাপাচারে নিমজ্জিত হলে জগতের কল্যাণে এবং মানুষকে জীবনের সঠিক পথ দেখাতে জীবের দুঃখমোচনে সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ জাত-পাতের চরম বৈষম্য, ধর্মের নামে প্রাণযজ্ঞ আর হিংসায় মানুষ যখন মেতে উঠল, মানুষকে আলোর পথ দেখাতে বুদ্ধ ধরায় এসেছিলেন। তিনি মানুষকে কেবল মানুষ হিসেবে দেখেছিলেন। তাঁর সাধনা ও সুখ কামনা ছিল সব প্রাণীর জন্য। বৌদ্ধ ধর্ম পৃথিবীর প্রাচীন ধর্মগুলোর অন্যতম। সকল প্রাণী সুখী হোক, এর চেয়ে মহান উচ্চারণ আর হয় না। বাংলাদেশে প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে বৌদ্ধধর্ম একটি। বলা দরকার, এ ভূখণ্ডের প্রাচীনতম ধর্মও বটে। বৌদ্ধদের জীবনযাত্রা লক্ষ্য করে দেখা যায়, তাঁরা আন্তরিকভাবে সেবাধর্মে খুবই বিশ্বাসী। এবং মানুষের কল্যাণ ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা তাঁদের অসুখী করে। এ রকম চিন্তা করা কারও উচিত নয় বলেই তাঁরা মনে করেন। শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার আলোয় ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’।
×