ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি ও পিয়ংইয়ং ইস্যু মুখ্য

দক্ষিণ কোরিয়ায় জিতে যাচ্ছেন মুন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১০ মে ২০১৭

দক্ষিণ কোরিয়ায় জিতে যাচ্ছেন মুন

দক্ষিণ কোরিয়ায় দুর্নীতির দায়ে রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইকে অপসারণের মাস কয়েক পর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতি কেলেঙ্কারির মুখে সাবেক প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদারনৈতিক প্রার্থী মুন জায়ে-ইনকেই তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে বুথ ফেরত জরিপে। খবর বিবিসি অনলাইনের। বুথ ফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মুন জেই-ইন পেয়েছেন ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রক্ষণশীল প্রার্থী হং জুন-পায়ো পেয়েছেন ২৩ দশমিক ৩ ভোট। পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন হাইয়ের নীতির বিপরীতে মুন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে করতে চান। ক্ষমতায় থাকাকালে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে প্রায় সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন পার্ক। মুন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ালে বর্তমান দক্ষিণ কোরীয় নীতির পরিবর্তন ঘটবে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বিরাজমান চরম উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমন এক সময় নির্বাচন হয়েছে, যখন প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির ক্রমাগত সামরিক উত্তেজনা, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি ও ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের চাপা ক্ষোভ রয়েছে। ভোটে মানবাধিকার আইনজীবী উদারপন্থী মুন জেই ইন জনমত জরিপে শুরু থেকে এগিয়ে আছেন। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে নিয়ে সবাই আশাবাদী। প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তাঁর কাছাকাছি রয়েছেন মধ্যবামপন্থী ধনকুবের আন চিওল সু। এছাড়াও রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জুন পিও। গেল সপ্তাহে আগাম ভোটে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বিপুল সংখ্যক ভোট বেশি পড়েছে। ভোটারের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। মানুষের ক্ষোভ কেন? দক্ষিণ কোরিয়া আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রভাব বিস্তারের সংস্কৃতি ও কেলেঙ্কারি থেকে বেরিয়ে আসায় চেষ্টা করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ককে এই কেলেঙ্কারিই গিলে ফেলেছিল। ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়ে এখন তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বব্যাপী বৈষম্য ও অভিজাত শ্রেনিকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগে পার্কের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের পরেও জ্যেষ্ঠ ভোটররা তাকে সমর্থন করেন। এতে করে দুই প্রজন্মের মধ্যে গভীর বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে এখন বিবাদমান সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক চলমান বিষয়গুলো নিয়ে তাঁকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ এসব বিষয় তরুণদের ভোট টানবে। গেল বছর দেশটির বেকারত্বের হার দাড়িয়েছিল ৯.৮ শতাংশে। যা নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য হবে সবচেয়ে বড় প্রতিকূল পরিস্থিতি। প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়াকে সামলাতে হবে সিওলের নতুন নেতাকে। সম্প্রতি একের পর দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। পাশাপাশি ষষ্ঠবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালানোর হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধান প্রার্থী কে? প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন মুন জেই ইন। তিনি সাবেক উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট রোহ মু হিউনের সহযোগী ছিলেন। এরআগে ২০১২ সালে পার্কের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। এবারে তিনি জয়ী হতে চেষ্টা করছেন। শিক্ষাজীবনে তিনি রাজনীতি শুরু করেন। সত্তরের দশকে পার্কের বাবার কর্তৃত্ববাদী পার্ক চুং হির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের দায়ে আইন কলেজ থেকে তিনি বহিস্কার হয়েছিলেন। রাজনীতিতে ঢোকার আগে তিনি মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন।
×