ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ মে ২০১৭

শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব গৌতম বুদ্ধের জন্মোৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ বুধবার। গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ এ তিন ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে এটি বুদ্ধ পূর্ণিমা নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আড়াই হাজার বছর আগে এদিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে আজ সরকারী ছুটির দিন। এদিকে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে এ ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবে। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বুদ্ধ পূজা ও সংঘদান। আন্তর্জাতিক এ বৌদ্ধ বিহারে বিশেষ ধর্মীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু এতে সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়াও এ উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রদীয় প্রজ্বালন ও সমবেত প্রার্থনা শেষে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে বৌদ্ধ নাগরিকদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এদিকে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তার বাণীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের চর্চা ও বুদ্ধের মহান আদর্শকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মৈত্রীময় শুভেছা ও অভিনন্দন জানান। বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল থেকে এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম ও আচার অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালন করে আসছে। এটা বাংলাদেশের সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ঐতিহ্য। আবদুল হামিদ বলেন, শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমার সঙ্গে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ গভীরভাবে সম্পৃক্ত। মহামতি বুদ্ধ ছিলেন জীবের মঙ্গল কামনায় সত্যসন্ধ। পৃথিবীকে সুখী ও শান্তিপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য তিনি নিরন্তর প্রয়াস চালান। বুদ্ধের চেতনায় ছিল দুঃখ জয়ের মাধ্যমে জীবের মুক্তি কামনা। ‘চতুরার্য সত্য’ তত্ত্বে তিনি জীবনে দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখ ভোগের কারণ এবং তা থেকে মুক্তির পথ দেখান। তার মতে ‘নির্বাণ’ লাভের মাধ্যমে মানুষ জীবনের পরমার্থ অর্জন এবং সকল প্রকার দুঃখ থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। তিনি বলেন, এ জন্য তিনি অষ্টমার্গ তথা প্রজ্ঞা, শীল ও সমাধিচর্চার উপদেশ দেন। তিনি স্থান-কাল-পাত্রের ঊর্ধে ওঠে পৃথিবীর সকল জীবের কল্যাণ ও সুখ কামনা করেন। ‘সব্বে সত্ত্বা সখীতা হোন্ত’-পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক, এ ছিল বুদ্ধের শাশ্বত দর্শন। রাষ্ট্রপতি বলেন, মহামতি বুদ্ধ একটি সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আজীবন সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করে গেছেন। ‘অহিংস পরম ধর্ম’ বুদ্ধের এ অমিয় বাণী আজো সমাজে শান্তির জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। আজকের এ অশান্ত ও অসহিষ্ণু বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহামতি বুদ্ধের দর্শন ও জীবনাদর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রাচীনকাল থেকে বাংলার জনপদের সঙ্গে বৌদ্ধ সভ্যতার ইতিহাস ও কৃষ্টি গভীরভাবে মিশে আছে। পাহাড়পুর ও ময়নামতি শালবন বিহার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এদিকে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে উল্লেখ করেছেন, শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল গৌতম বুদ্ধের একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বলেন, ভয়, ক্রোধ ও লোভ লালসাকে পরিহার করে গৌতম বুদ্ধ সারাজীবন মানুষের কল্যাণে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংস, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করেছেন। বর্তমান বিশ্বে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গৌতম বুদ্ধের জীবনাদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমান কাল থেকে এ দেশে প্রত্যেক ধর্মের লোক উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্ম নিবির্ঘেœ পালন করে আসছে। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারিগণ পাশাপাশি বসবাস করে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন। তিনি বলেন, হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় মহামানব বুদ্ধের সাম্য ও মৈত্রীর বাণী এবং তার আদর্শ ধারণ ও লালন করে জ্ঞান, মেধা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মানবিক, শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ দেশ প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বাণীতে সকলের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। এছাড়াও বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
×