ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে নীরব থাকতে পারে না বিচার বিভাগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ মে ২০১৭

রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে নীরব থাকতে পারে  না বিচার বিভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গ যখন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তখন বিচার বিভাগ নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে না। আইন ও নির্বাহী বিভাগের কাজের ওপর আদালত বিচারিক পর্যালোচনার মাধ্যমে এবং কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষকের (ওয়াচডগ) দায়িত্ব পালন করছে। সাংবিধানিক পদ্ধতির অধীনে স্বাধীন বিচার বিভাগ এ দায়িত্ব পালন করে। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের ভূমিকা সঠিকভাবে অঙ্কন করার মাধ্যমে সংবিধানকে সমুন্নত রাখা সুপ্রীমকোর্টের প্রধান অবদান। আইনের সীমার মধ্য থেকে সুপ্রীমকোর্ট সবসময় সংবিধানের অন্যতম অভিভাবক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রীমকোর্ট অডিটরিয়ামে মঙ্গলবার ‘বিচারিক স্বাধীনতা’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এক কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম,অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের চীফ ম্যাজিস্ট্রেট রয় রিনাউডে, ইংল্যান্ডের বিচারক শামীম কোরাইশী, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের আইন উপদেষ্টা মার্ক গোথরে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট , কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট ও কমনওয়েলথ ম্যাজিস্ট্রেট এ্যান্ড জাজেস এ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে অধস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেমিনারে দেশের অধস্তন আদালতের ৩০ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিচারকদের মধ্যে সনদ প্রদান করেন। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, বিচার ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা বিচারকগণের ওপর নির্ভরশীল, যারা এটি পরিচালনা করে থাকে। গণতন্ত্র সুরক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক বিচারকেরই সততা, নিরপেক্ষতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা অবশ্যম্ভাবী। বিচারিক স্বাধীনতা মানে কোন ধরনের প্রভাব বা হস্তক্ষেপ ছাড়া বিচারকের ক্ষমতা প্রয়োগ করা। বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার মূল ও ঐতিহ্যগত অর্থ হলো- সরকারের রাজনৈতিক শাখাগুলো থেকে বিশেষত নির্বাহী সরকার থেকে বিচারকদের সামষ্টিক ও স্বতন্ত্র স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ধারণা কোন শস্যভা-ারের মতো নয় যা শুধু বিচারকদের ওপর নির্ভর করে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা আইনী কাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই কাঠামোর মধ্য থেকে বিচার বিভাগকে কাজ করতে হয়। এতে সরকারের সমর্থন এবং রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে একজন বিচারকের পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উপাদানগুলো হলো, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, পারিপার্শ্বিক স্বাধীনতা এবং অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা, মন্তব্য প্রধান বিচারপতির। প্রধান বিচারপতি বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশের বিচার বিভাগের চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে অবকাঠামোগত স্বাধীনতা, জুডিশিয়ারিতে আইসিটির বিচারিক দয়বদ্ধতা, বিচারপ্রাপ্তির সহজলভ্যতা,সচেতনতা, শক্তিশালী সুশীল সমাজ,আইনজীবী সমিতি ও বেঞ্চের (আদালত)সুসম্পর্কের এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অভাব। কমনওয়েলথ দেশের সরকাররা কমনওয়েলথ লিগ্যাল রিসার্চ জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। যেখানে সবাই তাদের অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করবে। একই সঙ্গে সন্ত্রাস সম্পর্কিত এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মামলার বিষয়েও আলাপ-আলোচনা করবে।
×