ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নব্য জেএমবি’র নেতৃত্ব দিচ্ছে জিয়া ও বাশার, ১২ জঙ্গী এখনও অধরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ মে ২০১৭

নব্য জেএমবি’র নেতৃত্ব দিচ্ছে জিয়া ও বাশার, ১২ জঙ্গী এখনও অধরা

শংকর কুমার দে ॥ গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির ১২ সদস্য এখনও অধরা। বর্তমানে নব্য জেএমবি জঙ্গী সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছে সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক জিয়া ও বাশারুজ্জামান বাশার চকোলেট। গুলশানের হামলাকারী জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এমন জঙ্গীদের গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তাদের দাবি। পুলিশের কাউন্টার টেরজিম ইউনিটের প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেছেন, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গীদের এখনও অনেকেই অধরা। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে এই হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িতÑ এমন অনেকেই এখনও অধরা থাকার বর পাওয়া যাচ্ছে। গুলশান হলি আর্টিজান হামলায় জড়িতদের ধরতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে অভিযান অব্যাহত রেখে অধরা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, গত শুক্রবার ঝিনাইদহ থেকে গ্রেফতার করা হয় এক যুগের বেশি সময় ধরে জেএমবি জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নব্য জেএমবিতে যোগদানকারী জঙ্গী শামীম। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গী নিবরাসসহ জঙ্গীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা ছাড়াও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা জঙ্গী শামীমকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে গুলশানে হামলাসহ জঙ্গী আস্তানা ও পলাতক জঙ্গীদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় তদন্তকারীরা। তার কাছ থেকে তথ্য পেয়েই ঝিনাইদহের দুই জঙ্গী আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনাটি ছিল জঙ্গীদের বৃহৎ একটি পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার সঙ্গে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে অনেক লোক জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যেই নিহত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখনও অনেকেই অধরা রয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গুলশান হামলার পর জঙ্গীরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আত্মঘাতী হতে আত্মগোপনে চলে গেছে। গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী থেকে শুরু করে, অর্থ যোগানদাতা এমনকি সহায়তাকারী পর্যন্ত অনেকেই ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকে আবার দেশের বাইরে থেকে হামলায় পরোক্ষ সহায়তা করেছেন। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গুলশান হামলার প্রায় ১১ মাস পরও এখনও নব্য জেএমবির ১২ সদস্য সক্রিয় রয়েছে বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক জিয়া ও বাশারুজ্জামান ওরফে আবুল বাশার ওরফে চকোলেট। গুলশান হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত অন্তত ২৫ থেকে ৩৫ জনের নামের তালিকা শনাক্ত করেছে গোয়েন্দারা। এর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক জিয়াসহ পলাতক ১২ জঙ্গী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। নব্য জেএমবির নেতৃত্ব এখন জিয়া ও আবুল বাশার ওরফে চকোলেটের হাতেই বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দাবি। তদন্ত সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির কার্যক্রম পুরোপুরি নির্মূলে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল নুরুল ইসলাম মারজান ও মঈনুল ইসলাম মুসা। তারা দুইজন নিহত হওয়ার পর গোয়েন্দাদের দৃষ্টি এখন চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া, বাশারুজ্জামান ওরফে আবুল বাশার ওরফে চকোলেটের ওপর। এরা সংগঠনে দুর্ধর্ষ হিসেবে চিহ্নিত এবং নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা গেলেই নব্য জেএমবিকে নির্মূল করা না গেলেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। মেজর জিয়া ও বাশারুজ্জামান চকোলেটের নেতৃত্বে নব্য জেএমবির যেসব জঙ্গী পলাতক থেকে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তার মধ্যে আছেÑ ইকবাল, রিপন, খালিদ, মানিক, মামুন, জোনায়েদ খান, আজাদুল কবিরাজ ও বাদল অন্যতম। এ ছাড়া চিহ্নিত জঙ্গীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবৈধপথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, নব্য জেএমবির পলাতক জঙ্গীদের মধ্যে এই মুহূর্তে মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আছে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া ও বাশারুজ্জামান চকোলেট। দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজছে তাদের। র‌্যাবের পাশাপাশি পলাতক জঙ্গীদের ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটও। তাদের আইনের আওতায় নিতে সব ধরনের কৌশলই নেয়া হয়েছে। জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলছে অনেকেই আত্মঘাতী হওয়ার মধ্যেও গ্রেফতার হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ১৭ জন বিদেশীসহ নিহত হয় মোট ২২ জন। পরদিন ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডোদের উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জঙ্গী ও বেকারির একজন পাঁচক নিহত হয়। এই হামলার মধ্য দিয়েই জঙ্গী তৎপরতায় দেশ-বিদেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় নব্য জেএমবি নামের ভয়ঙ্কর জঙ্গী সংগঠনটি।
×