ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাত্রীর খোঁজে ফেরো দ্বীপপুঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১০ মে ২০১৭

পাত্রীর খোঁজে ফেরো দ্বীপপুঞ্জ

ডেনমার্কের কোলজুড়ে রয়েছে স্বশাসিত দ্বীপপুঞ্জ ফেরো। সেখানকার ভাষা, খাওয়া-দাওয়া, আবহাওয়া আর পাঁচটা দেশের থেকে একদম আলাদা। সর্বমোট ৫০ হাজার লোকের বাস সেখানে। তার মধ্যে আবার পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক কম। আর সেই জন্যই অন্য দেশ থেকে পাত্রী খুঁজে আনতে হচ্ছে ফেরোর বিবাহযোগ্য পুরুষদের। পরিসংখ্যান বলছে, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্স থেকে আসা তিনশ’রও বেশি নারীর ঠিকানা এখন এই দ্বীপপুঞ্জ। স্বামী-সংসারের পাশাপাশি এখানেই আর্থিকভাবে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন তাঁরা। কেউ শুরু করেছেন রেস্তরাঁর ব্যবসা, কেউ বা মাসাজ পার্লার। পড়াশোনার খাতিরে, চাকরির সন্ধানে সম্প্রতি ফেরোর যুবক-যুবতীরা বাইরে যাচ্ছেন। তবে তাঁরা অনেকেই ফেরেন না। নারীদের মধ্যে বিদেশে পাকাপাকিভাবে থিতু হওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে পাত্রীর খোঁজে একমাত্র সহায় ডেটিং ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া। বিয়ে তো না হয় হলো। তার পরে নিজের দেশ ছেড়ে ফেরোর গ্রামে মানিয়ে নেয়া কিন্তু বেশিরভাগ নব্য বিবাহিতাদের পক্ষে সহজ ছিল না। সেই গল্প বলছিলেন থাইল্যান্ডের আথায়া। ৬ বছর আগে স্বামী জ্যানের সঙ্গে ফেরোয় আসেন তিনি। ফেরোয় টানা ৬ মাস শীতকাল। প্রথম প্রথম ঘরের মধ্যে হিটারের সামনে মুখ গুঁজে পড়ে থাকতেন আথায়া। ঠা-া যেমন শরীরে ছিল, মনও অবসাদে ভারি হয়ে উঠেছিল। ছেলে জেকব যখন ছোট, আথায়া এক রকম গৃহবন্দী। তাঁর কথায়, ‘গ্রামের বয়স্ক লোকেরা ইংরেজী বলতে পারতেন না। ছেলের সঙ্গে খেলারও কেউ ছিল না।’ কিন্তু তারপর জেকব যখন কিন্ডারগার্টেনে, আথায়া অন্য থাই মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেন। সেই জনসংযোগ তাঁর ব্যবসা শুরু করতেও সাহায্য করেছিল। এশীয় নারীদের এখানে একটি বড় সমস্যা ভাষা। সেই কারণে অনেকেই উপযুক্ত কাজ পান না। প্রধানমন্ত্রী এ্যাক্সেল জোহাননিসেন বললেন, ‘এশীয় নারীদের সাহায্যে সরকার বিনামূল্যে ফেরোর ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করেছে।’ বর্তমান বিশ্বে শরণার্থী প্রশ্ন একটি স্পর্শকাতর বিষয়। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ফেরো মুক্ত হস্তে অভিবাসীদের গ্রহণ করেছে। তবে নিজের প্রয়োজনেই। স্থানীয় রাজনীতিক মাগ্নি আর্গে বলেন, ‘অভিবাসীদের বেশির ভাগই নারী। তাঁরা এখানে আসছেন, কাজ করছেন। তবে কোন রকম সমস্যা তৈরি করছেন না।’ ফিলিপিন্স থেকে আসা এ্যান্তোনিও এগহোমও জানান, এখনও পর্যন্ত এখানে কোন অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা হয়নি তাঁর। আথায়ার বন্ধুরা প্রায়শই তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, গ্রাম ছেড়ে তাঁরা কেন শহরে আসে না? আথায়া জবাব দেন, ‘আমি এখানেই খুশি। পাহাড়ের কোলে বেড়ে উঠছে জেকব। এখানে কোন দূষণ নেই। অপরাধ নেই। পৃথিবীতে শেষ স্বর্গ যদি কিছু থাকে, তবে সেটা এখানেই।’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×