ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল

প্রকাশিত: ০৮:০০, ৯ মে ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল

সংসদ রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রাস্ফীতি কমেছে, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। রাজস্ব আদায়, রফতানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেলেও একই সময়ে আমদানি ব্যয়, প্রবাসী আয় কমেছে। বাণিজ্যের ভারসাম্যের ঘাটতি রয়েছে ঋণাত্মক। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির প্রভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি আর প্রবাস আয় প্রবাহের দুর্বলতা চলতি হিসাবে ঘাটতি সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করছে। তবে মূলধনী হিসাব ও আর্থিক হিসেবে উল্লেখযোগ্য উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ছিল। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদের চলতি ১৫তম অধিবেশনের সমাপনী দিনে ‘বাজেট ২০১৬-১৭ : দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব জানানো হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে সংসদে বাজেটের অর্ধবার্ষিক অগ্রগতির প্রতিবেদনটি সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। উন্নয়নের মহাআয়োজনে সকলের কার্যকর অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিপুল জনসংখ্যার বিপরীতে সীমিত সম্পদ এবং নানা অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বৈরী পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর ও গতিশীল নেতৃত্বে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ নিজেকে আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকসমূহের অবস্থান সন্তোষজনক। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলস্বরূপ বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বৈশ্বিক রোলমডেল। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের যে গতিশীল যাত্রা, তাতে চলতি অর্থবছর (২০১৬-১৭) একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব আর দেশের মানুষের নিরন্তর প্রচেষ্টায় অচিরেই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করে আমরা পাব ‘শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’। আর এতেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা প্রতিষ্ঠিত করবই। অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদনে আরও বলেন, বছরের প্রথমার্ধে ত্বরান্বিত হয়েছে অর্থনীতির চাকা এবং স্থিতিশীল রয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতির সকল খাত; প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতায় সকল দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশে বর্তমানে যে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সরাসরি তার সুফল ভোগ করে চলেছে। বিদ্যুত-জ্বালানি, যোগাযোগসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে বিনিযোগ সহায়ক পরিবেশ। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপের ফলে দেশের বিপুল জনশক্তির দক্ষতা ও জীবনমানে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। উন্নয়নের এই মহাআয়োজনে প্রয়োজন আমাদের সকলের কার্যকর অংশগ্রহণ। একই সঙ্গে বিশ্বসভ্যতা ও জাতীয় উন্নয়নের প্রধান আশঙ্কা জঙ্গীবাদ ও উগ্রপন্থী মনোভাব এবং গোষ্ঠীদের থেকে সমাজকে মুক্ত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারশূন্য সহনশীলতা নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করছে। গত জুলাইয়ের দৃঢ় ও আপোসহীন পদক্ষেপের পরে খুঁজে খুঁজে সব সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী আখড়া ও গোষ্ঠীকে নির্মূল করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, একদিকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং অন্যদিকে সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার দুষ্ট প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকারের নেয়া প্রতিটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব আর দেশের মানুষের নিরন্তর প্রচেষ্টায় অচিরেই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করে আমরা পাব ‘শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকায় জনজীবনে স্বস্তি নেমে এসেছে। গত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ শতাংশ; অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হলো ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ সময়ে গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, সরকারী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ২৪ শতাংশ। রফতানি আয় বিগত অর্থবছরের প্রথমার্ধের ১৬ হাজার ৮৪ মিলিয়ন ডলার হতে বেড়ে ১৬ হাজার ৭৯৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। আমদানি ব্যয় ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২২ দশমিক ৬ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ১৫ থেকে ৫ দশমিক ০৩ শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উর্ধমুখী থাকায় ভোগ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমদানির চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত অর্থবছরের সময়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাস নিয়োগ হলেও প্রবাস আয়ে গতিশীলতা আসেনি। এ সময়ে প্রবাস আয়ের প্রবাহ ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমেছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ভারসাম্যে ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক ছিল। এই সময়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির প্রভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, অন্যদিকে প্রবাস আয় প্রবাহের দুর্বলতা চলতি হিসাবে ঘাটতি সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করেছে। আশা করা যায়, মুদ্রা বিনিময় হারের এ স্থিতিশীলতা দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ও বিনিযোগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
×