ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুষ্পিতা রায়

তারুণ্যের রবীন্দ্রনাথ

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৯ মে ২০১৭

তারুণ্যের রবীন্দ্রনাথ

বিশ্ব সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ভা-ারে স্থূলকায় সৃষ্টিশীলতার ঐশ্বর্যম-িত এক নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে কিছু বলা বা লেখা অনেকটা সমুদ্রকে একটি বৃষ্টির ফোঁটা উপহার দেয়ার মতো। সংস্কৃতির প্রতিটি স্তরেই রবীন্দ্রনাথের বিচক্ষণ পথচলা। তবে আমরা স্ফীত রবীন্দ্রনাথকে এখনও খুঁজে পাই গান ও কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ কবি। তাই তিনি প্রাণের অস্ফুট ব্যঞ্জনাকে আরও হৃদয়গ্রাহী করে তুলেন সুরের সুন্দর প্রয়োগে। রবীন্দ্রনাথ তার নিজস্ব জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন- ‘গান নিজের ঐশ্বর্যেই বড়, বাক্যের দাসত্ব সে কেন করিতে যাইবে? বাক্য যেখানে শেষ হইয়াছে সেখানেই গানের আরম্ভ। যেখানে অনির্বচনীয় সেখানেই গানের প্রভাব। বাক্য যাহা বলিতে পারে না গান তাহাই বলে।’ রবীন্দ্রনাথ সুর, কথা ও ছন্দের সংমিশ্রণে যে বিশাল সঙ্গীতের জন্ম দিয়েছেন তাকে ভালবেসে চর্চা করতে হয়। আমি এমন একদল তরুণের সাক্ষাত পাই যারা রবীন্দ্রনাথকে আত্মসম্পূর্ণ শিল্পের উদ্ভাবক মানে। যাদের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ সুরের মহিমায় সাড়ম্বর হয়ে ওঠে, তেমনি গৌরবান্বিত হয় গীতিকবিতার নিগূঢ়তায়। ওরা পাঁচজনের একটা দল। পাঁচজনই সঙ্গীত জীবনের সূচনায় থেকে বাংলাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার ছাত্র ছিল এবং এখনও তারা ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুরাদস্তুরভাবে জড়িত। ওই প্রতিষ্ঠান আয়োজিত চৈত্র সংক্রান্তীর প্রতিভাত অনুষ্ঠান মায়ার খেলা থেকে শুরু করে যে কোন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সারা বছরই থাকে তাদের লক্ষ্মণযুক্ত পদচিহ্ন। দেশে-বিদেশে অসংখ্য অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথকে যথাযথ দ্যোতনা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে উপস্থাপনা করেছে বাংলাদেশের এই পাঁচ তরুণ। তাদের মধ্যে তারুণ্যের চাঞ্চল্য যেমন অটল তেমনি রয়েছে রবীন্দ্র শিল্পের প্রত্যাশিত গাম্ভীর্যের বিশ্রদ্ধ উপস্থিতি। ‘টেগোর কাভারস’ নামে ইউটিউবে সে মিউজিক চ্যানেলটি সেটা তাদেরই সৃষ্টি। যেখানে তারা রবীন্দ্রনাথের গানকে বৈশিষ্ট্যসূচক শব্দ ও দৃশ্যের মাধ্যমে অসাধারণ ভঙ্গিতে প্রকাশ করে। রবীন্দ্রসঙ্গীতে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রভাব যতটুকু লক্ষণীয় ওই বিশেষ ভাবটুকুকে তারা যথাযথ সমীহ করে। সুরের ধারা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র থাকাকালীন থেকেই তাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত এবং স্বতন্ত্র এই কাজ করার সিদ্ধান্তের বীজ রোপণ। তাদের যে কোন কাজের প্রাণবন্ততায় রয়েছে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কৃষ্ণ কান্ত আচার্যসহ সুরের ধারার অন্যান্য শিক্ষকদের প্রগাঢ় উৎসাহ। ওদের ৫ জনের মাঝে চারজনই এখনও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। যে কারণে, বড় কোন কাজকে পূর্ণাঙ্গরূপে উপস্থাপনে কিছু আর্থিক বাধা এসে দাঁড়ালেও তারা থেমে থাকেনি। বরং সামনে এগিয়ে চলার প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ থেকেছে। রবীন্দ্রনাথের আদর্শকে চেতনায় লালন করে তারা তাদের কাজকে সূক্ষ্ম সৃজনশীলতায় মহিমান্বিত করছে। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেÑ অভীক : গান তো আছেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, দুঃখে, সুখে আনন্দে, ভ্রমণে, ফর্মে সবকিছুতেই রবীন্দ্রনাথ একটা অনুপ্রেরণা, পথপ্রদর্শক। প্রতীতী : আমি বাংলা সংস্কৃতি যতটুকু জানি তা রবীন্দ্রনাথের পথ অবলম্বন করেই। আমার কাছে বাংলা ভাষার প্রতি অঢেল ভালবাসা মানে রবীন্দ্রনাথ। গর্বিত বাঙালী হতে পারা মানে রবীন্দ্রনাথ। আনুশা : রবীন্দ্রনাথ জীবনাদর্শ। গান শিখতে শিখতে, গাইতে গাইতে কখন যে তিনি সত্তায় মিশে গেছেন! প্রত্যেকটা কথা যেন মনের ভাবটাই প্রকাশ করে। জীবনকে সুন্দর করে দেয়ার জন্য আমি রবীন্দ্র শিল্পের কাছে কৃতজ্ঞ। আদরিনা : আমার জীবনের সব অনুভূতি, যনে তুচ্ছ কিংবা প্রবল হোক উনার কথা সুরেই আমি তার বহির্প্রকাশ পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথের জন্য আমি নিজেকে যেভাবে চিনতে পেরেছি, তা অন্য কোনভাবেই হয়ত সম্ভব হতো না। রাজিত : জীবনের সকল অনুভূতি স্পর্শকারী রবীন্দ্রসঙ্গীতের অমৃতসম লালিত্যময় বাণীকে আদর্শ করতে পারলে জীবন গ্লানিমুক্ত হয়, অন্তর মধুময়তার আস্বাদনে সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে বলে আমি মনে করি। রবীন্দ্রনাথকে তরুণ সমাজের কাছে বিস্তীর্ণরূপে উপস্থাপনের জন্য রয়েছে তাদের বাধ্যবাধকতাপূর্ণ সংকল্প। অনবরত অনুপ্রেরণা যেমন যে কোন ভাল কাজের জন্মদাত্রী তেমনি ভাল কাজটাও জন্ম দেয় আরও কিছু সৃষ্টিশীল নৈপুণ্যের। ওদের অনুপ্রেরণায় হয়ত ভবিষ্যত বাংলাদেশে জন্ম নেবে আরও রবীন্দ্রানুরাগী তরুণ। তাদের ধ্রুপদী পথযাত্রায় তারা বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব সামাজিক মাধ্যমের মূল্যবান সহযোগিতা অর্জন করে নিয়েছে। সমাজের ছোট থেকে বড় সব বয়সের বিশেষ ভালবাসা তাদের একান্ত কাম্য। সঙ্ঘবদ্ধ সহযোগিতা আর সংশ্লিষ্ট ভালবাসা তাদের রবীন্দ্রচর্চার অত্যাশ্চর্য পথচলাকে আরও মসৃণ করে তুলবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি।
×