ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফোর্বসে আলোচিত তারুণ্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৯ মে ২০১৭

ফোর্বসে আলোচিত তারুণ্য

যুগে যুগে জগতে গীত হয়েছে তরুণ ও তারুণ্যের জয়গান। প্রবীণের প্রজ্ঞা ও পরামর্শ, নবীনের বল-বীর্য, সাহস ও উদ্দীপনায় পৃথিবীতে আসে পরিবর্তন। অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঝুঁকি নিতে পারে শুধু তারুণ্য। তরুণ বা নওজোয়ানদের অসাধ্য কিছু নেই। প্রথা ভাঙায় দুঃসাহস দেখাতে পারে শুধু তরুণেরাই। স্থলে, পানিতে ও মহাকাশেÑ যে কোন অভিযানে অভিযাত্রী হওয়ার যোগ্য শুধু তরুণরাই। এই তরুণরাই ভঙ্গুর সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। বিশ্বে সমাজ গঠনে, মানবিক চেতনায় গরিব দুস্তদের জন্য যারা কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত তাদের পরিচয় করে দিচ্ছে ফোর্বস। ফোর্বস যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিন প্রকাশনা সংস্থা। এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও বিখ্যাত ফোর্বস নামক ম্যাগাজিনের প্রকাশক হিসেবে। এটি ব্যবসাভিত্তিক একটি ম্যাগাজিন এবং ব্যবসাভিত্তিক ম্যাগাজিনগুলোর (যেমন- ফরচুন) মধ্যে অন্যতম শক্ত একটি প্রতিদ্বন্দ্বী। বিভিন্ন রকম তালিকা প্রকাশের জন্য ফোর্বস বিখ্যাত। যেমন- সবচেয়ে ধনী আমেরিকানের তালিকা, বিলওনিয়ারের তালিকা ইত্যাদি। ফোর্বস ম্যাগাজিনের মূলনীতি হচ্ছে দ্য ক্যাপিটালিস্ট টুল। প্রতি বছরের মতো এবারও ফোর্বস প্রকাশ করেছে। ৩০ বছর বয়সের নিচে যারা নিজেদের এশিয়ার সুপার এ্যাচিভার হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছেন, তারাই এই ফোর্বসের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। বাণিজ্য, বিনোদন প্রযুক্তি -খেলাধুলাসহ মোট ১০টি ক্ষেত্রে ৩০ জনের নাম উঠে এসছে। সব মিলিয়ে মোট ৩০০ জন উদ্যোগপতির নাম রয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তরুণ সামাজিক উদ্যোক্তাদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে আমাদের মিজানুর রহমান কিরণ ও সওগাত নাজবিন খান। ২৯ বছর বয়সী মিজানুর রহমান কিরণ ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (পিডিএফ) প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ২০০৮ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ওই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে কিরণ দেশের প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। তার গড়া সংগঠন প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়েও কাজ করছে। ফোর্বস তালিকায় থাকা অপর বাংলাদেশী উদ্যোক্তা সওগাত নাজবিন খানের বয়স ২৭ বছর। এ তরুণী প্রতিষ্ঠা করেছেন এইচ এ ডিজিটাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় তার পারিবারিক জমিতে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন নাজবিন। আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে গ্রামের দরিদ্র্যদের শিক্ষা দেন তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানে খুব কম টিউশন ফি নিয়ে বিনামূল্যে বই, ইউনিফর্ম ও পরিবহন সুবিধা দেয়া হয়। নাজবিন এরই মধ্যে অন্তত ৬০০ শিশুকে এভাবে সহায়তা করেছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এ তালিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় যারা তাদের মেধার প্রয়োগ করে মানব সেবায় নিয়োজিত করেছেন তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া। তাদের মূল লক্ষ্য হলো ডাইভারসিটি এ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট। এই তালিকায় অন্যদের মধ্যে চীনের ৭৬, ভারতের ৫৩ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া ২৯ জন, উজবেকিস্তানে ১ জন এবং ভুটানের ১ জন তরুণ তিন শ’ জনের প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। মোট দশটি ক্যাটাগরিতে ৩০ জন করে তিন শ’ জনের তালিকা থেকে শীর্ষ ৩০ জন বাছাই করা হয়। ২৪টি দেশ থেকে বাংলাদেশসহ ৩০টির বেশি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে ওই তিন শ’ জনের তালিকায়। হাজার খানেক আবেদনের মাঝে বাছাই করে নেয়া হয় শ্রেষ্ঠ তরুণদের। সেই সব তরুণদের মাঝে আছেন মালদ্বীপের সাফাত আহমেদ জহির, যিনি মাত্র ২৬ বছর বয়সে কাজ করে যাচ্ছেন লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে। নারীর শ্রম, উৎপাদনশীলতা, বুদ্ধি ও উদ্যোগ যুক্ত হলে সব ক্ষেত্রেই বিকাশ আরও গতি পাবে। যেসব দেশে নারী-পুরুষে বৈষম্য কম, সেসব দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিই তার প্রমাণ। বর্তমানে নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য এখনও ভয়াবহ মাত্রায় বিরাজ করছে মালদ্বীপে। সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন সাফাত আহমেদ জহির। ঈশিতা আনন্দ, প্রতিষ্ঠাতা বিটগিভিংয়ের। ভারতের প্রথম অনলাইন মাধ্যম যার সাহায্য সামাজিক মাধ্যমে ফান্ড যোগার করে দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দেয়। তরুণের সমাজের সেই ব্যতিক্রমধর্মী অংশ, যারা সামাজিক দায়বদ্ধতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মবিকাশ ও সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনে স্বেচ্ছাব্রতী সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তরুণ ও যুবদের কর্মোদ্দীপনা, সৃষ্টিশীলতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে একটি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি। বিটগিভিং প্রতিনিধিত্ব করছে ঈজণ (ঈযরষফৎবহ’ং জরমযঃং অহফ ণড়ঁ), এবং অসহবংঃু ওহঃবৎহধঃরড়হধষ মতো প্রতিষ্ঠানকে। আদিত্য আগারওয়াল, সহ প্রতিষ্ঠাতা কিষাণ নেটওয়ার্ক। কিষাণ নেটওয়ার্ক হলো দরিদ্র চাষীর জন্য অনলাইনে কেনাবেচার জন্য জনপ্রিয় মাধ্যম। সাধারণত একজন কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারে পৌঁছে দিতে পারে না তাকে নির্ভর করতে হয় অন্যজনের ওপর যার ফলে তার লাভের পরিমাণ কমে যায় কিন্তু কিষাণ নেটওয়ার্কের ফলে একজন কৃষক সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে যেতে পারছে যার ফলে একজন ভোক্তা সঠিক পণ্য সঠিক দামে পাচ্ছেন।
×