ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতিবাজদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৯ মে ২০১৭

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতিবাজদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অকৃত্রিম বন্ধু হচ্ছে মিডিয়া। তাই দুর্নীতি রুখতে গণমাধ্যমকে অবশ্যই দুর্নীতি করার আগেই নিউজ করতে হবে। তবে এদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমলারা কচ্ছপ গতির কর্মকা- থেকে সরে না আসলে মিডিয়া বা দুদক কেউ কিছুই করতে পারবে না। মিডিয়াকে মানি ও মাসল মুক্ত করতে মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের নিয়ে দুদকের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হবে ও বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতিবাজদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন, পিআইবি ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডের যৌথ উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়। পিআইবির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনা পর্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক মহাপরিচালক ড. মোঃ শামসুল আরেফিন, পিআইবির মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ.ই মামুন, বাসস ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি নিজেও একজন আমলা ছিলাম। মূলত আমলারাই রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা। তাদের আরও দ্রুত কাজ করতে হবে। সিভিল সার্ভিস এ্যাক্টসহ যে কোন সংস্কারই আমলাতন্ত্রের ‘ব্লাক হোলে’ হারিয়ে যায়। সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কচ্ছপ গতিতে চলা আমলাতন্ত্রের কারণেই ভাল কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমাদের পদ্ধতিগত পরিবর্তনে মনোনিবেশ করতে হবে। তবে দেশের দুর্নীতি রুখতে মিডিয়ার আকুণ্ঠ সমর্থন আমরা পাচ্ছি। আমলাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল হাওড়ের দুর্নীতি নিয়ে একটি সংবাদপত্রে ছোট্ট একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়, আমি ঐ দিনই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন চাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে কমিশনের সচিব ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১০ দিনের পরিবর্তে ১০ মাস পরে অসম্পূর্ণ একটি প্রতিবেদন কমিশনে পাঠায়। যদি প্রতিবেদনটি যথাসময়ে কমিশনে পাঠানো হতো, তা হলে হয়ত দেশের বিভিন্ন হাওড়ের চলমান এ বছরের বিপর্যয় ঠেকানোর চেষ্টা আরও দৃঢ় হতো। দুদকের দুর্নীতি ও সমস্যা প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, দুদক নিজেদের মধ্যেই এখনও দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেনি। এ পর্যন্ত আমরা ৭ হাজার মামলার সমাধান করেছি। মামলা করার হার আগের চেয়ে কমেছে। কিছুদিনের মধ্যেই দুদকে আরও সক্রিয় করতে বেশকিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই জবাবদিহিতা থাকে। কার কাছে জবাবদিহিতা করব তা আমি জানি না। তাই আমি মিডিয়ার কাছে জবাবদিহিতা করতে চাই। দুর্নীতি দমনে মিডিয়ার মাধ্যমে জবাবদিহিতার করে জনগণের কাছে যেতে চাই। এজন্য নাগরিকদের সহযোগিতা চাই। ইকবাল মাহমুদ বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয় অর্থ এবং পেশিশক্তি সারা বিশে^র সমস্যা। এ দুই ‘এম’ মানি এবং মাসল হতে মিডিয়াকে মুক্ত করার চেষ্টা আমাদের সম্মিলিতভাবেই করতে হবে। ছোট-বড় কোন দুর্নীতির খবরই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় না। তবে গণমাধ্যম এবং দুদকও নিরাপত্তাহীন থাকতে হয়। পেশিশক্তির ওপর আমরা বাধা। যদি এটি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বেরই সমস্যা। আমরা যেমন বড়-বড় দুর্নীতি ধরেছি তেমনই ১০ টাকার চালের দুর্নীতিও ধরেছি। আমাদের হস্তক্ষেপের কারণেই সরকারের এ কর্মসূচী যেমন সফল হয়েছে এবং জনগণও উপকৃত হয়েছে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা মেগা প্রজেক্ট এবং বড় নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনকে সম্পৃক্ত করে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে পত্র দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন মন্ত্রণালয়ই এ বিষয়ে কমিশনের নিকট কোন সহযোগিতা চায়নি। বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাত প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে ৫৬টি মামলা করা হয়েছে। অবশ্যই তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। মামলার পর অনেকে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন। কোন কোন ঋণ নিয়মিতকরণ করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে আটকিয়ে রাখা নয়। বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এ বিষয়ে এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য করব না। সরকারী ব্যাংক কিংবা বেসরকারী সকল ব্যাংকের অর্থই জনগণের আমানত। আমরা জনগণের আমানত খেয়ানত হতে দিতে পারি না। তাই আমার অনুরোধ, যারা অবৈধভাবে ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়েছেন সে অর্থ নিজ উদ্যোগে ফেরত দিন এবং যারা অবৈধভাবে অর্থ প্রদান করেছেন তারা সে অর্থ আদায় করুন। আমরা জনগণের অর্থ আত্মসাতকারীদের কোন অবস্থাতেই ছাড় দিব না। জনগণের টাকা জনগণের নিকট ফেরত দিতে হবে। তিনি বলেন, আপাতত ব্যাংক কর্মকর্তা কিংবা ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে ঋণ গ্রহণকারীদের গ্রেফতার কিছুটা কম হচ্ছে। তার অর্থ একথা নয়, যে তাদের আর গ্রেফতার করা হবে না। আমরা কিছুটা বিরতি দিয়েছি। তিনি বলেন, কমিশনের অভিযানের কারণে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে ১৬% ‘ক্রেডিট গ্রোথ’ হয়েছে। আসলে অসৎভাবে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমেছে। তবে ব্যাংক খাত, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতসহ সকল খাতেই দুর্নীতি কমাতে আমরা অক্টোপাসের মতো ধরে তা বন্ধ করতে সহায়তা করছি। সমাজের সকল স্তরে দুর্নীতি কমাতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×