ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই ছাত্রী ধর্ষণে জড়িতদের ধরতে মাঠে পুলিশের একাধিক টিম

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৯ মে ২০১৭

দুই ছাত্রী ধর্ষণে জড়িতদের ধরতে মাঠে পুলিশের একাধিক টিম

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের গ্রেফতারের জন্য আইশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে আসামিদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক রয়েছেন। পুলিশ জানায়, মামলার তদন্তে ওই রাতে হোটেলে উপস্থিত অভিযুক্তদের বান্ধবী নাজিয়া ও তানজি আলিশাকে জিজ্ঞাসাবাদে করা হয়েছে। তাদের যে কোন মূহূর্তে তাদের সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দীও দিতে পারেন। ইতোমধ্যে রেইন ট্রি হোটেলের কর্মচারী জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দু’দিনেও এ ঘটনা অভিযুক্ত ৫ আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, বনানীতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত আসামিরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি জানান, বনানী থানা পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার বনানী থানায় মামলার আসামিদের মধ্যে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ (২৬), একজন ঠিকাদারের ছেলে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত নাঈম আশরাফ (৩০) ও সাদমান সাকিফ (২৪) বাবা মোহাম্মদ ওরফে জনি। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও লিংক রোডে অবস্থিত রেহনাম রেগনাম সেন্টারের পিকাসো রেস্তোরাঁর মালিকের ছেলে। বাকি দুই আসামির একজন সাফাতের দেহরক্ষী ও অন্যজন গাড়িচালক। এই দুই তরুণী জানিয়েছেন, অভিযুক্ত তিন তরুণের পরিবারই বিত্তশালী। অভিযুক্ত ধর্ষক সাফাত ও নাঈম ইয়াবা আসক্ত। তারা গুলশান, বনানী ও বারিধারায় বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে গিয়ে এমন কাজ আগেও করেছে। কিন্তু কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। তারা এর আগেও অনেক তরুণীর সর্বনাশ করে ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দিয়েছে। ডিবির উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের জানান, তারা এ মামলার ‘ছায়াতদন্ত করছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে আসামিদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে আসামিরা কোথায় আছে। তা বলা যাবে না। তবে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। আসামিরা যাতে দেশ ছাড়তে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। বনানীর ‘দি রেইনট্রি’ হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে দুই তরুণীর একজনের দায়ের করা মামলায় বলা হয়। এজাহারে ধর্ষণকারী হিসেবে সাফাত ও নাঈমের নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয় সহযোগী হিসেবে। বনানী থানার তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সাফাতকে গ্রেফতারে তাদের গুলশান-২ নম্বরের বাসায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছেন তারা। তবে তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সাফাত, নাঈম, সাদমান এবং ঢাকার একজন সংসদ সদস্যের ছেলে বনানী ১১ নম্বর সড়কে একটি রেস্তোরাঁ চালান। এছাড়া তাদের একাধিক সীসা বার রয়েছে। গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন দুই তরুণী। তাদের অভিযোগ, সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুদের যোগসাজশে অস্ত্রের মুখে তাদের ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনার ৪০ দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন তারা। মামলা নং ৮। মামলায় সাদনান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষীকে (নাম পাওয়া যায়নি) আসামি করা হয়েছে। বনানী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, সাফাতের বান্ধবীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনার রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে ভিকটিম দুই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের প্রথম তিনজন (সাফাত, নাঈম, সাকিফ) আগে থেকেই ওই হোটেলের দুটি কক্ষ ভাড়া করেন। পরে তাদের মদ পান করিয়ে ধর্ষণ করা হয়। রাত থেকে সকালের মধ্যে তাদের একাধিকবার ধর্ষণ করেন সাফাত ও নাঈম। তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে সাফাতের গাড়িচালক ধর্ষণের ভিডিও করে। ওই ঘটনায় দ্য রেইন ট্রি হোটেল থেকে অভিযুক্তদের কোন ভিডিও ফুটেজ পুলিশ পায়নি। তা নিয়ে সন্দেহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সংস্থা। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের হোটেলে এক মাসের বেশি কোন ফুটেজ সংরক্ষিত থাকে না। তাই তারা পুলিশকে ফুটেজ দিতে পারেননি। তবে ওই রাতের অনুষ্ঠান এবং রুম বুকিংয়ের বিষয়ে পুলিশকে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়া হয়েছে বলেও জানায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সূত্র জানায়, সেদিন রাতের অনুষ্ঠানের জন্য যে ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে রুম বুকিং করা হয়েছিল সেটি এবং বুকিং প্রদানকারীদের ফোন নম্বর ও ই- মেইল আইডি পুলিশের কাছে রয়েছে। মামলার এজাহারে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের অনেককে হোটেল কর্তৃপক্ষ সেই রাতে দেখেছেন বলে স্বীকার করেছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, আমার ছেলে সাফাত ব্ল্যাইমেইলে স্বীকার। তার সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হচ্ছে। সে ধর্ষণ করেনি বলে আমাকে জানিয়েছে। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী। তিনি জানান, আমার ছেলে (সাফাত) একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপিকাকে বিয়ে করেছিল। তবে আমি সেই বিয়ে মেনে নেইনি। বিয়ের পর সেই মেয়ে নানা ধরনের অসৎ উদ্দেশ্য দেখে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়। সাফাতের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী তাদের দিয়ে এমনটি করিয়েছে। কারণ, মামলা করার জন্য ওই মেয়েই দুই তরুণীকে থানায় নিয়ে যায়। তিনি বলেন, সেই রাতে যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা আপসেও হতে পারে। ধর্ষণ হলে নিশ্চয়ই ৪০ দিন মামলা করার জন্য অপেক্ষা করত না তারা। পুলিশের রিপোর্ট পেলে দুই তরুণীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা হবে বলেও জানান দিলদার আহমেদ।
×