ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইসিতে নিবন্ধন নেই, নেই ভোটে দাঁড়ানোর শক্তি ॥ তবুও এরা রাজনৈতিক দল!

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৯ মে ২০১৭

ইসিতে নিবন্ধন নেই, নেই ভোটে দাঁড়ানোর শক্তি ॥ তবুও এরা রাজনৈতিক দল!

শাহীন রহমান ॥ ‘সব দলের দেখা শেষ, এবার এলো কংগ্রেস’। এটা একটি নব গঠিত রাজনৈতিক দলের সেøাগান। পোস্টারে দলটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস। ঠিকানা দেয়া হয়েছে ২১ ময়মনসিংহ রোড, বাংলামোটর। দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়াই মূলত দলটির মূল এজেন্ডা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দলটির নামে পোস্টার লাগানো দেখা গেছে। এর বাইরে কোন কার্যক্রম কখনো দেখা যায়নি। দলটির যারা নেতৃত্বে রয়েছেন তারাও দেশে কোন পরিচিত মুখও নন। দেশে এ ধরনের রাজনৈতিক দল গঠনের ইতিহাস নতুন নয়। কিন্তু হাল আমলে ব্যাঙের ছাতার মতো দেশে গজিয়ে উঠছে রাজনৈতিক দল। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এসব রাজনৈতিক দল বেশিরভাগই ভুঁইফোড় সংগঠন। নির্বাচন এলেই এসব দলের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠলে বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এসব রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে দেশে যখন রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করে বা সামরিক হস্তক্ষেপ দেখা যায় বা একতরফা নির্বাচন পরিচালনা করা হয় তখন এসব রাজনৈতিক দল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বা ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক দল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতাসীনরা তখন এদের ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থে। অতীতে এ ধরনের রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের স্বার্থে ব্যবহার করার নজির রয়েছে। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এসব রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১শ’র বেশি হবে। নেতাদের কোন পরিচয় বা জনগণের কাছে কোন রাজনৈতিক আবেদন না থাকলেও বড় বড় পোস্টারে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিও রয়েছে ঠিকই। নির্বাচনে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হওয়ায় এসব রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জোটের প্লাটফর্ম গড়ে তোলা। নির্বাচনে এসব দলৈ কোন প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার প্রার্থী দিলে জামানত বাজেয়াফত হয়। জনগণের কাছে দল হিসেবে নেই কোন গ্রহণযোগ্যতা। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের কোন শর্তও পূরণের ক্ষমতা এদের নেই। ফলে কমিশন থেকে প্রতিবছর রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও এদের আবেদন করতে দেখা যায় না। আবার হাতেগোনা যে কয়টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে থাকে তারাও শর্ত পূরণ করতে না পারায় নিবন্ধন পায়ও না। বাংলাদেশ কংগ্রেস দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন জানা গেছে চার বছর আগে দলটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। দলের ৫৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ জেলায় ১৫০ থানায় দলটির অফিস ও কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ চলছে। দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন ও মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন এ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পি সরদার জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৩ সালের ৪ মার্চে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও সারাদেশে ৫০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তবে নির্বাচনের কমিশনে এখনও দলটি নিবন্ধন পায়নি। দলের নেতারা বলেন, কমিশন থেকে নিবন্ধনের চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ২৪ এপ্রিল রাজনৈতিক দলের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংক্ষেপে ‘এনডিএম’। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন হঠাৎ পরিচিতি পাওয়া জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ববি হাজ্জাজ। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বা ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও ২০১৩ সালের শেষের দিকে রাজনৈতিক টালমাতালের সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মুখপাত্র হিসেবে কাজের সুবাদে ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যান। বর্তমানে তিনি এখন এই দলটির প্রধান। রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও কম নেই অর্থের জোর। এই দলের কমিটিতে যারা রয়েছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন পরিচিত কেউ নেই। মূলত ববি হাজ্জাজকে সামনে রেখেই সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছে। দলের নেতারা জানিয়েছে তাদের দল কেবল গঠন করা হয়েছে। এখনও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের জন্য আবেদন জানানো হয়নি। তবে কমিশন থেকে নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলে আবেদন জানানো হবে। দলটির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ এম তাহের। নামসর্বস্ব এসব দলের বেশিরভাগেরই নেই কোন নিজস্ব অফিস। রাজনৈতিক কোন কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে দেখা যায় না। অথচ এসব রাজনৈতিক দলের ব্যানার-পোস্টার রাজধানীজুড়ে ছেয়ে থাকে। এসব পোস্টারে নীতিবাক্যই বেশি থাকে। এসব ধরনের রাজনৈতিক দলের পোস্টার শুধু প্রেসক্লাব এলাকায় বেশি দেখা যায়। পোস্টারে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সভাপতির বেশি ফোকাস করা হয়ে থাকে। এদের কার্যক্রম শুধু বিভিন্ন দেয়াল ও বাসের গায়ে পোস্টারে সীমাবদ্ধ। এ ধরনের আরও একটি রাজনৈতিক দলের নাম বাংলাদেশ মানবতাবাদী দল। দলটির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ২১২, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি। পুরানা পল্টন ঢাকা। দলটির সেøাগান জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, জাতীয় ঐক্য জিন্দাবাদ। তবে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, সেøাগানকে জাতীয় সেøাগান হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করে আসছে দলের নেতারা। ইসির আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে অবশ্যই তাদের নিবন্ধন করতে হবে। ইসির নিবন্ধন পেতেও রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্ত পূরণ করা না হলেও তারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে মর্যাদা পাবে না। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন কোন দলের রাজনৈতিক নিবন্ধন পেতে হলে কেন্দ্রীয় অফিসসহ কমপক্ষে ২১ জেলায় ও ১শ’ উপজেলায় বা থানাতে দলের অফিস এবং প্রতি উপজেলায় বা থানাতে ২শ’ ভোটার সদস্য থাকতে হবে। এ ধরনের হঠাৎ গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক দল সম্পর্কে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি জে অব. সাখাওয়াত হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলে নিয়ন্ত্রণের কোন আইন নেই। রাজনৈতিক দল কেমন হবে তার কোন আইন নেই। তবে আমাদের দেশে এ ধরনের আইন না থাকলেও নেপালের সংবিধানের রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে এক হাজার রাজনৈতিক দল থাকলেও নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত হতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর শর্ত পূরণ করতে হবে। আমাদের সময়ও অনেক রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন জানিয়েছিল। শর্ত পূরণ না হওয়ায় সবাইকে নিবন্ধন দেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন দল হিসেবে নির্বাচন করলে হবে অবশ্যই কোন কমিশনের নিবন্ধন থাকতে হবে। যাদের নিবন্ধন নেই তারা বড় দলের সঙ্গে নির্বাচনে গেলে তারা দল হিসেবে গণ্য হবে না। নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪০। এর মধ্যে গত ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন দেয়া হলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের দলটির নিবন্ধন আদালতের আদেশে স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে দলটির নেতারা দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, দেশে বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচনেই আইন অনুয়ায়ী দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে। ফলে দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে হলে দলের নিবন্ধন থাকতে হবে। তবে যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রার্থীকে কমিশনের শর্ত পূরণ করতে হবে। বিশেষ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগে নির্বাচন না করে থাকলে অবশ্যই ভোটারদের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষরের তালিকা দেখাতে হবে। শুধু ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক দল নয়, কমিশনের নিবন্ধিত যে ৪০ দল রয়েছে তাদের বেশিরভাগই কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী নেই। কিছু রাজনৈতিক দল রয়েছে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। নির্বাচনের সময় নিবন্ধিত অনেক দলের প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে নামকাওয়াস্তে নিবন্ধন রক্ষায় দলের দু’একজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন পরপর দুবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে সে দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে যে চল্লিশটি দলের নিবন্ধন কমিশনের রয়েছে তৃণমূলে বেশিরভাগের কোন জনসমর্থন নেই। অনেক দলের নামও সাধারণ জনগণ জানে না। মূলত বড় দলের সঙ্গে জোট করা ছাড়া এসব দলের অবস্থা একেবারেই নাজুক। অনুসন্ধানে জানা গেছে নিবন্ধন নেই এমন কিছু রাজনৈতিক দলও দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করে টিকে আছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১২ দলের কোন নিবন্ধন নেই। অপর দিকে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে ৪ রাজনৈতিক দলের কোন নিবন্ধন নেই। এর বাইরে একশ’র বেশি নামসর্বস্ব, অনিবন্ধিত দল একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জোটে যুক্ত হওয়ার প্রতিযোগিতায় মাঠে নেমেছে। বড় দুটি রাজনৈতিক দলে ঠাঁই না পেয়ে বিকল্প প্লাটফর্ম তৈরি করেছে অনেকে। বর্তমানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে অন্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ, ডেমোক্র্যাটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই ১২ দলের। এছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোট ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মূল অংশ সম্প্রতি ২০ দল ত্যাগ করেছে। এ দল দুটির অংশবিশেষ ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে থাকলেও তাদেরও নিবন্ধন নেই। আরেক শরিক সাম্যবাদী দলেরও (একাংশ) নিবন্ধন নেই। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনও ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক আদেশে অবৈধ ঘোষণা করেন। সব মিলিয়ে ২০ দলের ১২ দলই ভোটে অংশ নিতে পারবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে এর মধ্যে কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশীদ খান) ও গণআজাদী লীগের নিবন্ধন নেই। নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ না পেলেও জোট ক্ষমতায় গেলে এসব দলের নেতাকর্মীরা হন ক্ষমতাবান। জোটবদ্ধ থেকে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায় এসব দল। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও কিংস পার্টি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিএনপির সাবেক নেতা ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী ছিলেন এর উদ্যোক্তা। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই দলটি গঠনে সহায়তা করার বিষয়টি তখন সামনে আসে। শুরু থেকে বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এক সময়ে প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। বিএনপি থেকে বের হয়ে এখন তিনি বিকল্প রাজনৈতিক প্লাটফর্মের পাশাপাশি রাজনৈতিক জোট গঠন করেছেন। অথচ তার নিজের দল ও জোটের কারও কোন নিবন্ধন নেই। মাঝখানে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে যোগ দেয়ার তৎপরতাও দেখা গেছে। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)’ গঠন করা হয়েছে ৩১ দল নিয়ে। এ জোটে নাজমুল হুদার বিএমপি ছাড়াও অন্য দলের মধ্যে রয়েছে সম্মিলিত নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ ইনসাফ পার্টি, দেশপ্রেমিক নাগরিক পার্টি, বাংলদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি, স্বাধীন পার্টি, বাংলাদেশ প্রতিবাদী জনতা পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ মাইনোরিটি ইউনাইটেড ফ্রন্ট, ন্যাশনাল লেবার পার্টি, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ তফসিলী ফেডারেশন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন, গণপরিষদ, বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ-বাকশাল। দশটি দল নিয়ে জোট বেঁধেছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া শওকত হোসেন নিলু। জোটের নাম ‘ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)। এই জোটের ৯ দলেরই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। সম্প্রতি আবার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে ট্রুথ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গলীগ, ববি হাজ্জাজের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মতো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। যারা নামসর্বস্ব ও ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে অতীতে অনেক দলই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলেও ২০০৮ সালে শর্ত পূরণ করতে না পারায় বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পায়নি। অথচ ২০০৮ সালে মোট ১০৭ দল আবেদন করে। শর্ত পূরণ করায় নিবন্ধন পেয়েছিল মাত্র ৩৮। নিবন্ধন না পাওয়ায় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নিতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে, ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে মোট ১৪ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে ২৯, ১৯৮৬ সালে ২৮, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে ৮, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৭৫, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৮১, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৫৫ এবং ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৮ এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ১২ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে নির্বাচনে অংশ নিলেও সংসদে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল প্রতিনিধিত্ব করতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে ছোট এসব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন দেশে নিবন্ধিত যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে তারাও সক্রিয় না। ফলে এসব ‘ভূইফোঁড়’ রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। খালি জায়গা অবশ্যই পূর্ণ হয়ে যাবে। নিবন্ধিতরা কাজ করে না বলে অনিবন্ধিতদের আর্বিভাব ঘটে। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় কিছু কিছু দল গড়ে উঠছে। এ দলগুলোর আদর্শিক ভিত্তি নেই। এরা দেশের বড় দুই-তিন দল আছে, তাদের সঙ্গে মিলে যায়। ক্ষমতার সুযোগ নেয়ার জন্যই এমনটা করে। অনেক সময় নামসর্বস্ব এসব দল নিয়ে হাস্যরসও তৈরি হয়।
×