ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঝিনাইদহের লেবুতলায় জঙ্গী আস্তানায় অপারেশন শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৯ মে ২০১৭

ঝিনাইদহের লেবুতলায় জঙ্গী আস্তানায় অপারেশন শেষ

এম. রায়হান, ঝিনাইদহ থেকে ॥ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়োবাড়িয়া ইউনিয়নের লেবুতলা গ্রামের জঙ্গী আস্তানা শরাফত ম-লের বাড়িতে অপারেশন ‘সাবটেইল স্পিলিট’ (ঝটইঞখঊ ঝচখওঞ) শেষ হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে এ অভিযান শুরু হয়। খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ, এডিশনাল ডিআইজি হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। অভিযানে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও জেলা পুলিশ অংশ নেয়। এছাড়া কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি মান্নান, এডিসি সাইফুল, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান আবুল বাশার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ, রেজাউল করিম, ডাঃ কানিজ হোসেন জাহানসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অভিযানের সময় জঙ্গী আস্তানার আশপাশের বাড়ির লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ২শ’ গজের ভেতরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। গ্রামবাসী বাড়ি-ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে দেয়। অভিযান এলাকা জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সাতটি গ্রেনেড ও একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও ছয় রাউন্ড গুলি। গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে সারা এলাকা। অভিযান শেষে গ্রামের লোকজনদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসতে দেখা যায়। শেষে শামীমের মা সুফিয়া বেগম ও শামীমের বড় ভাই হাসানের স্ত্রী সফুরা খাতুনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। রবিবার সকাল থেকে লেবুতলার এ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আটটি বোমা, একটি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধারসহ শামীম হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শামীম হোসেন বাড়ির মালিক মৃত শরাফত হোসেনের ছেলে। খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ রবিবার রাত ৯টার দিকে জানান, রাতে মহেশপুরের বজরাপুরের হঠাৎপাড়ায় অপারেশন ‘সাবটাইল স্পিলিট’ শেষ করা হয়েছে। সোমবার সকালে সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের জঙ্গী আস্তানায় আবারও শুরু করা হবে। তারই অংশ হিসেবে অভিযান চালানো হয়। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অভিযান শেষে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, অভিযান শেষ করা হয়েছে। এখানে সাতটি গ্রেনেড ও একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গী শামীম হোসেনকে গত ৫ মে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে নিউ জেএমবির সদস্য। এলাকায় নিউ জেএমবির সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করত। তার দেয়া তথ্যমতে রবিবার মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামে অভিযান চালানো হয়। সেখানে দুই জঙ্গী নিহত হয়। তাদের দুজনেরই পরিচয় পাওয়া গেছে। একজনের নাম তুহীন। সে সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের ধানহাড়িয়া গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে। অপরজনের নাম আব্দুল্লাহ ওরফে প্রভাত ওরফে বেড়ে। সে পোড়াহাটি গ্রামের চৈতে বিশ্বাসের ছেলে। গত ২১ এপ্রিল তার বাড়ি ঘিরে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও জেলা পুলিশ। সে সময় সে পালিয়ে যায়। ডিআইজি আরও বলেন, ঝিনাইদহ অঞ্চলে আরও নিউ জেএমবি থাকতে পারে। তাদের সন্ধানে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। বড়মাপের কোন জঙ্গী আছে কিনা- জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে কিছুই বলা যাবে না। লেবুতলা গ্রামের দুলাল কুমার মজুমদার বলেন, আমরা শামীমকে প্রকাশ্যেই চলাফেরা করতে দেখতাম। সে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ালেখা করত বলে শুনেছি। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে এতবড় ভয়ঙ্কর জঙ্গী হয়েছে তা আমরা জানতাম না। আমরা এ ধরনের জঙ্গীদের কঠোরহস্তে দমন করার দাবি জানাচ্ছি। কুমড়োবাড়িয়া গ্রামের ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি এবার এ ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আমার ইউনিয়নে কোন জঙ্গী আছে তা আমার ধারণা ছিল না। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের সুখ-দুঃখ দেখে বেড়াই। লেবুতলা গ্রামেও আমার অবাধ বিচরণ। এ গ্রামের শরাফত হোসেন ম-লের বাড়িতে এতবড় জঙ্গী আস্তানা আছে জানতে পেরে এখন খুব ভয় হচ্ছে। এসব জঙ্গীকে দমন করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। গ্রামের মোাহাম্মদ আলী বলেন, শনিবার রাতে বাসায় এসে জানতে পারলাম গ্রামের শরাফত হোসেন ম-লের বাড়ি পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। এখানে জঙ্গী আছে। রবিবার সকাল থেকে অভিযান শুরু হয়। ওই বাড়ির মালিকের ছেলে শামীমকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে আটটি বোমা ও একটি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়। সোমবার সকাল থেকে আবারও দ্বিতীয় দফায় অভিযান শুরু হয়। সেলিনা খাতুন বলেন, শামীম যে এতবড় বনের বাঘ তা তো জানি না। আমাদের বাড়ির উত্তর দিকে তাদের বাড়ি। ধর্ম নিয়ে কথা বলত। পাড়া-প্রতিবেশীদের নামাজ পড়তে বলত। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, নিউ জেএমবি সদস্য শামীম হোসেনের তথ্যমতে রবিবার ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর হঠাৎপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের বাড়িতে জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে দুই জঙ্গী নিহত হয়। রাতে জঙ্গী আস্তানা থেকে দুটি পিস্তল, চারটি বোমা ও দুই জঙ্গীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মৃতদেহ দুটি শনাক্ত করা হয়েছে। এ দুই জঙ্গীর মধ্যে একজনের নাম তুহীন। সে সদর উপজেলার ধানহাড়িয়া গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে। অপরজনের নাম আব্দুল্লাহ ওরফে প্রভাত ওরফে বেড়ে। সে পোড়াহাটি গ্রামের চৈতে বিশ্বাসের ছেলে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ দুটি তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে তিনি জানান।
×