ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোহামেডানের কোচ হয়ে ঢাকায় এলেন নাইমদ্দিন

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৯ মে ২০১৭

মোহামেডানের কোচ হয়ে ঢাকায় এলেন নাইমদ্দিন

রুমেল খান ॥ বয়সটা হয়ে গেছে ৭৩। এ বয়সে সবাই যখন ঘরে বসে বিশ্রাম নেয় এবং রোগ-ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করতে ব্যস্ত, সেই বয়সে অসুখকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এখনও করে যাচ্ছেন নিজের কাজ। কাজ বলতে ফুটবলে কোচিং করানো। তাও আবারও বয়সভিত্তিক বা একাডেমির কোন কোচ নয়, পেশাদার ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়েÑ অর্থাৎ শীর্ষ ক্লাবের ফুটবলে। জাতিতে তিনি ভারতীয় হলেও বাঙালী। তার ওপর বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা। যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি প্রখ্যাত সাবেক ভারতীয় ফুটবলার ও কোচ সৈয়দ নাইমউদ্দিন। নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে ঢাকায় এসেছেন তিনি। এসেছেন একটি ক্লাবের দায়িত্ব নিতে। না, ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচ হিসেবে না। এর আগে ছয় মৌসুম ব্রাদার্সের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ফলে এবারও তিনি সপ্তমবারের মতো ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’দের দায়িত্ব নেবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। নাটকীয়ভাবে নাইমউদ্দিন বেছে নেন সাদা-কালো শিবিরকে, অর্থাৎ ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানকে। এই প্রথমবারের মতো তিনি এই ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছেন। রবিবার রাত ১০টায় মোহামেডান ক্লাবে আসেন নাইম। ঢাকার ফুটবলে নাইমউদ্দিন প্রথম কোচিং করান ২০০৪ সালে ব্রাদার্সে। তার কোচিংয়েই সেবার গোপীবাগের ক্লাবটি প্রথমবারের মতো জিতেছিল প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লীগ শিরোপা। তারপর যতবার ঢাকার ক্লাব ফুটবলে কাজ করেছেন তিনি, সব ততবারই ওই কমলা শিবিরে। মাঝে একবার ২০০৬ সালে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে এবারই প্রথমবার তাকে দেখা যাবে বাংলাদেশের অন্য কোন ক্লাবে। বলা যেতে পারে অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করেই নাইমউদ্দিন মোহামেডানে যোগ দিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই গোপীবাগের ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচের ভূমিকায় নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। বলতে গেলে ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’দের ঘরেরই কোচ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সে অনুযায়ীই গত ১০ এপ্রিল ঢাকায় এসে আবারও ব্রাদার্সের দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিল তার। তার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ক্লাব কর্মকর্তারা। কিন্তু তাদের অবাক ও হতাশ করেন তিনি। কেননা এই কোচের দিকে হাত বাড়ায় গত লীগে মোহামেডান। পারিশ্রমিকের অঙ্কটা বেশি হওয়াতে নাইমউদ্দিনও আগ্রহ দেখান ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’দের কোচ হতে। এই বর্ষীয়ান কোচকে নিয়ে দুই ক্লাবের মধ্যে টানা-হ্যাঁচড়া চলে। যাতে জয়ী মোহামেডানই। তবে নাইমউদ্দিন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় নেন। প্রথমে ব্রাদার্স-মোহামেডান কোন ক্লাবকেই সেভাবে পাকা কথা দেননি। ব্রাদার্স ক্লাবের সূত্রে জানা যায়, ‘নাইম ১০ এপ্রিল ঢাকায় এসে দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিল। সেভাবে দলও সাজানো হচ্ছিল। তিনি আসলেই অনুশীলনও শুরু হয়ে যেত। তখনই হঠাৎ করে শোনা যায় অন্য কথা। তিনি সময় চান। তার নাকি মোহামেডান থেকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব এসেছে। এতে ব্রাদার্সও একটু বিপাকে পড়ে। মূলত এমিলি-মিঠুনদের মতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের জন্য অভিজ্ঞ কোচ খুঁজতেই আব্দুল কাইয়ুম সেন্টুর জায়গায় নাইমদ্দিনের নাম আসে। নাইম মোহামেডানের কোচ হলে সেন্টু হবেন তার সহকারী। ভারতের হায়দরাবাদে জন্ম নেয়া নাইমউদ্দিন খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন ডিফেন্ডার। তার ক্যারিয়ার ১৯৬২-১৯৭৭ পর্যন্ত। এ সময়ে খেলেছেন হায়দরাবাদ সিটি পুলিস, ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান এবং কলকাতা মোহামেডানে। জাতীয় দলে খেলেছেন ১৯৬৪-১৯৭১ পর্যন্ত। কোচিং ক্যারিয়ার শুরু ১৯৮২ সাল থেকে। কলকাতা মোহামেডান, ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগানের দায়িত্ব সামলেছেন। ভারত জাতীয় দলেরও কোচ ছিলেন ১৯৯৭-৯৮ পর্যন্ত। ক্লাব পর্যায়ে অনেক সফলতা আছে তার। এখন দেখার বিষয় তিনি ঢাকা মোহামেডানকেও সাফল্য এনে দিতে পারেন কি না, বিশেষ করে যে ক্লাব গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে ১২ দলের মধ্যে দশম হয়েছিল।
×