ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ১৯০ রান

লীগে রকিবুলের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৯ মে ২০১৭

লীগে রকিবুলের ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই বলে কথা। দর্শক উপস্থিতি আগের মতো না থাকলেও দু’দলের মধ্যে লড়াইয়ের উত্তাপ ছিল ম্যাচের পরতে। বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে হাইভোল্টেজ এ ম্যাচটিতে হয়েছে হাইস্কোরের লড়াই। শেষ পর্যন্ত আবাহনী লিমিটেড ২৭ রানে হারিয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে। আবাহনীর হয়ে ঝড়ো সেঞ্চুরি করেছিলেন ওপেনার লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫ উইকেটে ৩৬৬ রানের বিশাল সংগ্রহ পেয়েছিল তারা। জবাবে রকিবুল হাসান ও চারিথ আসালঙ্কা ব্যতীত কারও ব্যাট হাসেনি। বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ১৯০ রান করে রেকর্ড গড়েন রকিবুল। তবু ৯ উইকেটে ৩৩৯ রানে থামে তারা। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে আবাহনী। শুরু থেকেই মোহামেডান বোলারদের ওপর তা-ব শুরু করেন লিটন। আর কিছুটা নিস্পৃহ থেকে তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন সাদমান ইসলাম। ১০৩ রানের জুটি গড়ে ওঠে মাত্র ১৬ ওভারে। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের প্রথম সাফল্যে সাদমান ফিরে যান ২৮ রানে। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে আরও বিধ্বংসী জুটি গড়ে ওঠে লিটন-শান্তর মধ্যে। দু’জন ১০৯ রানের জুটি গড়েন ১৬ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে। মাত্র ১০৩ বলে ১৫ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৫ রান করে ফিরে যান। এটি তার লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় শতক। তবে তরুণ শান্ত থামেননি, তিনি অশান্তই ছিলেন। অবশ্য তাইজুলের আঘাতে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে আবাহনী ব্যাটসম্যানদের ঝড়। সাইফ হাসান (১৮ বলে ২৯), মোহাম্মদ মিঠুনকে (৫) দ্রুতই ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি এ স্পিনার। কিন্তু ৬ নম্বরে নেমে তা-ব শুরু করেন শুভাগত হোম চৌধুরী। পঞ্চম উইকেটে মাত্র ৯ ওভারে ৯০ রান তোলে আবাহনী শান্ত-শুভাগতের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। শান্ত ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে শান্ত ১০০ বলে ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ১১০ রান করে ফিরে যান। ততক্ষণে বিশাল সংগ্রহ পেয়ে গেছে আবাহনী। শুভাগত অপরাজিত থাকেন ২৭ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ রান করে। ৫ উইকেটে ৩৬৬ রান তোলে আবাহনী। অন্য বোলাররা তুলোধুনো হলেও তাইজুল দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ৫৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট খায় মোহামেডান। দলীয় ৩৮ রানের মধ্যে অভিষেক মিত্র (৩), শামসুর রহমান (১৪) ও রনি তালুকদার (১৯) সাজঘরে ফিরে যান। দিল্লীর বাঁহাতি স্পিনার মনন শর্মা শুরু থেকেই ভয়ঙ্কর বোলিং করেন। তবে চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন আসালঙ্কা ও অধিনায়ক রকিবুল। গড়ে ওঠে ১৭৫ রানের বড় জুটি। মাত্র ২১ ওভারেই তারা দু’জন এ জুটি গড়ে মোহামেডানকে লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখেন। ওই সময় আবার আঘাত হেনে আসালঙ্কাকে ফিরিয়ে দেন মনন। এ লঙ্কান ৬০ বলে ৮ চারে করেছিলেন ৬৩ রান। এ জুটি ভাঙ্গার পর আবাহনীর সঙ্গে লড়াইটা আর মোহামেডানের হয়নি, হয়েছে রকিবুলের। তিনি একাই গলদঘর্ম করেন আবাহনী বোলারদের। কিন্তু উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবে দলকে জেতাতে পারেননি। তার সঙ্গী কেউ হতে পারেননি মননের ভয়াল ঘূর্ণি আঘাতের কারণে। কিন্তু সবকিছুকে পেছনে ফেলে নিজের তো বটেই, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বল্প পরিসরের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস উপহার দেন দুর্দম্য রকিবুল। ব্যাট হাতে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠা ২৯ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান একেবারে শেষ ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন কাজী অনিকের বলে। তখন তার রান ছিল ১৩৮ বলে ১৭ চার ও ১০ ছক্কায় ১৯০। এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্বল্প পরিসরের ক্রিকেটে সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল তামিম ইকবালের। তিনি ১৫৭ রান করেছিলেন কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের বিপক্ষে গত ১৮ এপ্রিল। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩৩৯ রান করতে সক্ষম হয় মোহামেডান। ৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে এখনও দ্বিতীয় স্থানে আবাহনী। আর ১০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে নেমে গেল মোহামেডান। স্কোর ॥ আবাহনী ইনিংস- ৩৬৬/৫; ৫০ ওভার (লিটন ১৩৫, শান্ত ১১০, শুভাগত ৪৮*, সাইফ ২৯; তাইজুল ৩/৫৭)। মোহামেডান ইনিংস- ৩৩৯/৯; ৫০ ওভার (রকিবুল ১৯০, আসালঙ্কা ৬৩, মিলন ২২; মনন ৫/৪৭, অনিক ২/৭২)। ফল ॥ আবাহনী লিমিটেড ২৭ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ রকিবুল হাসান (মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব)।
×