ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৯ মে ২০১৭

এবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৮ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে প্রক্ষেপণ (প্রজেকশন) করেছে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসকাপ)। একই সঙ্গে বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি ও রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটার কারণে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে কমিশন। সংস্থাটির ‘ইকোনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভে অব এশিয়া এ্যান্ড প্যাসিফিক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বাজেটে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ ঠিক করা হলেও অর্থবছর শেষে তা সাড়ে ৭ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে সরকারীভাবে মনে করা হচ্ছে। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইডিবি ভবন সম্মেলন কক্ষে এ প্রতিবেদন উন্মোচন করা হয়। এ সময় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিন্স, ইউএন এসকাপ এর ব্যাংকক কর্যালয়ের ইকোনমিক এ্যাফেয়ার্স অফিসার সুদীপ রঞ্জন বসু এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সুদীপ রঞ্জন বসু বলেন, বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার আগামীতে প্রভাবিত হতে পারে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈশ্বিক নীতির পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও নিজেদের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এ অঞ্চলে চীনসহ অন্যান্য দেশের বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি আরও কঠোর হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী বছরের অর্থনীতিতে। রেমিটেন্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতনকে অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কমার অভ্যন্তরীণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সুদীপ রঞ্জন বলেন, এসবের প্রভাবে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। যদিও সামগ্রিকভাবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৫৩টি দেশ এসকাপের সদস্য। চলতি অর্থবছরে এ অঞ্চলের সকল দেশের সমন্বিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে তা কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের এ অঞ্চলের সমন্বিত প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে প্রতিবছরই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশের এসকাপের সদস্য পদ লাভ করেছে ১৯৭৩ সালে। এবারে প্রতিবেদনে কার্যকর সুশান এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সুশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। যে দেশে সুশাসন যত বেশি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সেই দেশ তত ভাল করছে। প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের ওপরে রেখেছে। এটা স্থিতিশীল ও শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে সরকারের বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার বাস্তবায়ন এবং সরকারী ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনতে ই-প্রকিউরমেন্ট চালু এর মধ্যে অন্যতম। রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির জন্য কার্য়কর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার, যার ইতিবাচক প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে। তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য এসব পদক্ষেপই যথেষ্ট নয় মনে করে সংস্থাটি। এসব সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছে তারা। উন্নয়নের এ গতি ধরে রাখার জন্য প্রতিবেদনে কয়েকটি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- মান সম্মত চাকরির সুযোগ সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়া। শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে শিল্প বান্ধব নীতি গ্রহণ, মানব সম্পদের উন্নয়ন, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতের মধ্যকার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা সরিয়ে ফেলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক মাত্রায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী গ্রহণ করা। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন সম্পর্কে রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ভাল করে বুঝতে এবং এসডিজি অর্জনে করণীয় ঠিক করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। আগামী অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হলে অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী কোন প্রভাব পড়বে না বলে অনুষ্ঠানে মতপ্রকাশ করেন বিআইডিএস মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ভ্যাট নতুন সংযোজন নয়। সাধারণ মানুষ অনেক আগে থেকেই ভ্যাট দিয়ে আসছে বর্তমানে মাত্র ৩২ হাজার রেজিস্টার্ড ভ্যাট দাতা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিলে এটা দেশের অর্থনীতিতে বা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কোন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না। তাছাড়া ভ্যাট কোন স্থায়ী সমাধানও নয়। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য তিনি বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো ও টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন। এসময় তিনি বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার অভাবে বিনিয়োগ বাড়ছে না। অর্থাৎ যে কারণে বেসরকারী বিনিয়োগ, এফডিআই, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বাড়ছে না, একই কারণে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
×