ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রান্সে ম্যাক্রোঁর জয়ের নেপথ্যে

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৯ মে ২০১৭

ফ্রান্সে ম্যাক্রোঁর জয়ের নেপথ্যে

৩৯ বছর বয়সী ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফ্রান্সের রাজনীতিতে ব্যাপক কাঁপন ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। দেশটির ইতিহাসে যা এক বিরল ঘটনা বটে। বছরখানেক আগে তিনি ছিলেন ফ্রান্সে ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় সরকারের একজন মন্ত্রী। আর তিনি আজ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত। এর আগে তিনি কখনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। প্রথম দফায় তিনি মূলস্রোতের মধ্যবামপন্থী, মধ্যডানপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। শেষে উগ্রডানপন্থী লি পেনকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে ক্ষমতায় আসলেন। খবর বিবিসি অনলাইন ও নিউইয়র্ক টাইমসের। ম্যাক্রোঁ নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। তিনি জয়ী হয়েছে পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে আনার অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে। মধ্যডানপন্থী প্রার্থী ফাসোঁয়া ফিলন কেলেঙ্কারির দায়ে প্রথম পর্বে বাদ পড়েন। সমাজতান্ত্রিক বেনট হ্যামন ইতোমধ্যে দলের ভেতরে প্রান্তিক অবস্থায়। ভোটাররাও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্যারিসভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক টেরা নোভার গবেষক মার্ক অলিভার পাডিস বলেন, ম্যাক্রন খুবই ভাগ্যবান। তিনি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, যেটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত, বিরল। কখনও কখনও ভাগ্য সবকথা বলতে পারে না। কিন্তু ম্যাক্রোঁর বিষয়টি ভিন্ন। তিনি বিচক্ষণ। যেমন তিনি সমাজতান্ত্রিক টিকেট পেতে চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে ভাবলেন অন্যকিছু। কারণ তিনি জানেন, দলের তলানিতে যাওয়া জনপ্রিয়তা দিয়ে সব কথা সাধারণ মানুষকে শোনাতে পারবেন না। পাডিস বলেন, ফ্রান্সের রাজনীতিতে কেউ পারেনি এমনকিছু করার সুযোগ আছে বলে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা ভাবলেন। ইউরোপের অন্য দেশেও আলোড়ন তুলেছে, এমনকিছু। যেমন স্পেনে দুর্নীতি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পেডিমোস, ইতালিতে ফাইভ স্টার আন্দোলন। ম্যাক্রোঁ দেখলেন, ফ্রান্সের রাজনৈতিক মাঠে খেলা জমাতে বিকল্প কিছু করতে হবে। দেশটিতে তিনি নতুন কিছু করার চেষ্টা করলেন। গেল বছরের এপ্রিলে ‘এন মার্শ’ প্রতিষ্ঠার চার মাসের মাথায় ওলাঁদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক এ বিনিয়োগ ব্যাংকার। প্যারিসভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এমিলি শুলথিস বলেন, তিনি দীক্ষা নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ২০০৮ সালের তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচনী প্রচারাভিযান থেকে। তার প্রাথমিক প্রতিবন্ধকতা ছিল দল গঠন করা। এরপরেও তিনি অনভিজ্ঞ কিন্তু উদ্যমী কর্মিবাহিনীকে একটি লক্ষ্যে একত্র করলেন। শুলথিস বলেন, তিনি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সামগ্রিকভাবে ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করে এমন অঞ্চলগুলোতে তৃণমূল পর্যায়ে প্রচার চালিয়েছেন। ২০০৮ সালে বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারে ওই প্রতিষ্ঠানটি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি তার কর্মীদের প্রায় তিন লাখ মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন। এসব মানুষের কাছে কেবল প্রচারপত্র বিলি করেই তারা থেমে থাকেননি, পঁচিশ হাজার মানুষের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে পনেরো মিনিট করে কথা বলেছেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে কৌশল নির্ধারণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রচারে নেমেছেন। ম্যাক্রোঁ নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষের প্রত্যাশা ও মনোভাব বোঝার চেষ্টা করলেন। শুরুতে জনগণের সঙ্গে তার আন্দোলনের যোগাযোগ নিশ্চিত করলেন। মানুষের কাছে কীভাবে যেতে হবে, সে বিষয়েও তিনি স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দিলেন। এরপর একসময় কাজে নেমে পড়লেন। তার রাজনৈতিতে আগমনে ব্যাপক অসঙ্গতি ছিল। এ ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি অনভিজ্ঞ, ছিলেন প্রেসিডেন্ট ওলাঁদের নিছক অনুগ্রহভাজন। সাবেক ব্যাংকার থেকে হলেন, সরকারের অর্থমন্ত্রী। এরপর সবকিছু ছেড়ে শুরু করলেন তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন। তিনি রাষ্ট্রীয় সেবা খাতেরও একজন বড় সমালোচক। উগ্রডানপন্থী লি পিনের হাতেও বড় অস্ত্র ছিল, তিনি বলেন, ম্যাক্রোঁ অভিজাতদের প্রার্থী। তবে রাজনীতিতে তিনি একেবারে আনকোড়া ছিলেন না। তবে ম্যাক্রোঁ প্রমাণ করলেন যে তিনি ওলাঁদের মতো না। তাকে নতুন একজন ওলাঁদ হিসেবে তকমা দিতে বিরোধীদের চেষ্টা তিনি ব্যর্থ করে দেন। বরং নিজের ভেতরে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটালেন। ফ্রান্সের জনগণও নতুন কিছু পেতে ও দেখতে বেপরোয়া ছিল। ফরাসীদের মধ্যে আগে থেকে ব্যাপক বৈরী মনোভাব বিরাজ করছিল। বিশ্বায়নপন্থী ম্যাক্রোঁ তাদের কাছে ইতিবাচক বার্তা নিয়ে আসলেন। তিনি হলেন- সাধারণ মানুষের শুভবার্তাবাহক।
×