ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াবার থাবা থামান

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৯ মে ২০১৭

ইয়াবার থাবা থামান

প্রধানমন্ত্রীর শনিবার দিনব্যাপী কক্সবাজার সফরটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। এদিন তিনি এই জেলার সার্বিক উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রকল্প উদ্বোধন ও সূচনা করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে রূপান্তর, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন ও চারলেনের মহাসড়ক নির্মাণ, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারব্যাপী মেরিন ড্রাইভ সড়কের উদ্বোধন ইত্যাদি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যে প্রসঙ্গটি গুরুত্বসহকারে উঠে এসেছে গণমাধ্যমে, তা হলো ইয়াবা পাচারকারীদের কঠোর শাস্তির বিষয়টি। কক্সবাজার সৈকতের পাশে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজারের একটি বদনাম আছে। এখান থেকে নাকি ইয়াবা সরবরাহ করা হয় সারাদেশে। যে কোন মূল্যে এই ইয়াবা সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। যে বা যারা ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি পেতেই হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান সর্বস্তরের জনগণের প্রতি। এর পাশাপাশি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের প্রতি। এ প্রসঙ্গে তিনি তার সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনরুল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন মূল্যে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের ছোবল থেকে দেশের ছেলেমেয়েদের রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, দেশের অভ্যন্তরে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ইয়াবা ট্যাবলেট এবং এর কাঁচামাল প্রবেশ করে থাকে কক্সবাজার জেলার মাধ্যমে। আরও সঠিক অর্থে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পথে। পার্বত্য অঞ্চল দিয়েও ইয়াবার অনুপ্রবেশ বিচিত্র নয়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ স্থানীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে প্রায় প্রতিদিন তা ধরা পড়ে এমনকি বিপুল পরিমাণে। বাস্তবতা হলো, সীমান্তে কঠোর তৎপরতা এবং গোয়েন্দা নজরদারির পরও এর প্রায় অবাধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে সঙ্গত কারণেই ধারণা করা যায় যে, এর পেছনে শক্তিশালী স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটসহ বিত্তশালী ব্যক্তিদের হাত রয়েছে। ইয়াবা পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবারের সম্পৃক্ততার অভিযোগে জেল-জরিমানার খবরও আছে। দুঃখজনক হলো এরপরও ইয়াবার ছোবল ঠেকানো যাচ্ছে না। সে অবস্থায় এলাকার জনগণ যদি সততা ও সদিচ্ছার মনোভাব নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে প্রতিরোধে, তাহলে সীমান্ত পথে অবৈধভাবে ইয়াবার চোরাচালান ঠেকানো অবশ্যই সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেকটা এরই প্রতিফলন ঘটেছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে সেখান থেকে আগত রোহিঙ্গা স্মরণার্থীদের একটা যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততা থাকা বিচিত্র নয়। বাংলাদেশ নিতান্ত মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও দেখা যাচ্ছে যে তারা স্থানীয়ভাবে নানা অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকা- এনমকি ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক পাচারের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। এটা তাদের রোজগারের অন্যতম একটি মাধ্যমও হতে পারে। একদা তরুণ সমাজ বিপুলভাবে জড়িয়ে পড়েছিল ফেনসিডিল আসক্তিতে। পরে দেশে এই পণ্যটি নিষিদ্ধ করেও সুফল মেলেনি তেমন। বরং বাংলাদেশ পরিবেষ্টিত ভারতের সীমান্তসংলগ্ন অনেক স্থানে রাতারাতি গজিয়ে উঠেছিল ফেনসিডিল কারখানা। দু’দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর ফেনসিডিলের বিস্তার ও আসক্তি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো এর পরিবর্তে বিপুল বিক্রমে থাবা বসিয়েছে ভয়াবহ মাদক ইয়াবা। গণমাধ্যমের বিপুল প্রচার-প্রচারণা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পরও এর বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। রবিবারের পত্রিকায়ই খবর আছে যে, ২০০৭ সালে ধৃত এবং দুটি মামলায় মোট ৭৯ বছরের সশ্রম কারাদ-প্রাপ্ত আমিন হুদা নামের এক ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসায়ী রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে। এ ঘটনা থেকেই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের দৌর্দ- প্রতাপ-প্রতিপত্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা মেলে। সুতরাং ইয়াবা ফেনডিসিলসহ মাদকের সর্বাত্মক প্রতিরোধে সরকারকে আরও তৎপর এবং কঠোর হতে হবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির মতো প্রয়োজনে এক্ষেত্রেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফিলিপিন্সে দুতার্তে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বর্তমানে যা করছে, তা একটি উদাহরণ হতে পারে।
×