ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী

রামপালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতু ঠেকাতেও ষড়যন্ত্র করেছিল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৮ মে ২০১৭

রামপালের বিরুদ্ধে  ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা  সেতু ঠেকাতেও  ষড়যন্ত্র করেছিল

সংসদ রিপোর্টার ॥ রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের ক্ষতির সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অভিযোগ করেছেন, যারা রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারাই পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়েও ষড়যন্ত্র করেছিল। পদ্মা সেতুকে ঠেকাতে চেয়েছিল। এরা দেশের উন্নয়নকে ঠেকাতেই বিভ্রান্তকর কথা বলছে। তাই বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা না বলে বিরোধিতাকারীদের সরকারের উন্নয়নের পথে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। রবিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম ও সরকারী দলের পঞ্চানন বিশ্বাসের পৃথক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে ৪৬ ভাগেরও বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে ধাবিত করতে আগামী ৫০ বছরকে সামনে রেখে বিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বিতর্ক সৃষ্টিকারী অনেকেই পদ্মা সেতুর নির্মাণের সময়ও বলেছিল, পদ্মা সেতু হলে ইলিশের প্রজনন কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে কমেত নাই, বরং বেড়েছে। যারা দেশের উন্নয়নকে ঠেকাতে চায়, তারাই এ ধরনের কথাবার্তা বলছেন। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে নরওয়ে সরকারের কোন অর্থলগ্নি নেই উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এই বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। এই বিদ্যুত কেন্দ্রে অর্থলগ্নিকারী ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গেও নরওয়ে সরকারের কোন সম্পর্ক নেই। তবে নরওয়ে সরকারের সার্বভৌম ফান্ড থেকে কেউ অর্থ নেবে কি নেবে না, সেটা (ভারতের কোম্পানি) তাদের বিষয়। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র যেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা জনবহুল এলাকা না। পরিবেশ আইন অনুযায়ী বাফার জোন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকতে হয়। সেখানে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। আর সুন্দরবনের হেরিটেজ চিহ্নিত এলাকা থেকে এই বিদ্যুত কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৬৯ কিলোমিটার। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশ দূষণ কিংবা সুন্দরবনের ক্ষতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এই বিদ্যুত কেন্দ্রটি সর্বাধুনিক আল্টা-সুপার ক্রিটিক্যাল প্লান্ট হবে। এই প্লান্টের এক ভাগ ছাড়ও বাইরে যাবে না। জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বহু দেশে এ ধরনের কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র আছে। বলা হচ্ছে এসিড বৃষ্টি হয়ে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমার প্রশ্ন- পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্মিত বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র অনেকদিন ধরেই চালু রয়েছে। আজ পর্যন্ত সেখানে কী কোন এসিড বৃষ্টি হয়েছে? পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়েছে? গ্রীন পিচ নামে একটি সংগঠনের উদ্বৃতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই সংগঠনটি বলছে এই বিদ্যুত কেন্দ্রের কারণে নাকি ৬ হাজার শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে যাবে। তাহলে মহেশখালী তাপবিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে তাতে কী চট্টগ্রামের লাখ লাখ শিশু মারা যাবে, কক্সবাজার ধ্বংস হয়ে যাবে? তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলছেন, কিন্তু আমরা বৈজ্ঞানিক তথ্য ছাড়া কোন কথা বলা ঠিক মনে করি না। সুন্দরবনে একটি প্রজাপতিরও পরিবর্তন হচ্ছে কিনা আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি। অতএব ঢালাওভাবে কথা না বলে তথ্যভিত্তিক কথা বলার পরামর্শ দেন। বিদ্যুত কেন্দ্রে জঙ্গী হামলা ঠেকাতে ব্যবস্থা ॥ বিদ্যুত কেন্দ্রে জঙ্গী হামলাসহ যে কোন ধরনের নাশকতামূলক তৎপরতা প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের ‘কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা-২০১৩’- এর নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য নিরাপত্তা নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। রবিবার সংসদে ফরিদুল হক খানের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, বিদ্যুত বিভাগের আওতাধীন সংস্থা/ কোম্পানিসমূহের মোট ১৭৪ স্থাপনাকে কেপিআই হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আরও ২১ স্থাপনাকে কেপিআই হিসেবে ঘোষণার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। ১০ গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুত কেন্দ্রে সেনাসদস্য মোতায়েন হয়েছে। তাছাড়া গুরুত্বানুসারে বিদ্যুত কেন্দ্রসমূহে নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে আনসার অঙ্গীভূত করা হয়েছে এবং কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্র ও বিদ্যুত কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রায় প্রতিটি বিদ্যুত কেন্দ্রের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপত্তার কাজে মেটাল ডিটেক্টর, ভেহিকল মিরর, আর্চওয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রে বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে জঙ্গী হামলাসহ যে কোন ধরনের নাশকতামূলক তৎপরতা প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
×