ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হয়রানি বন্ধে ৫৭ ধারা বাতিল করছে সরকার ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ মে ২০১৭

হয়রানি বন্ধে ৫৭  ধারা বাতিল করছে সরকার ॥ আইনমন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ৭ মে ॥ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নতুন আইন সৃষ্টির মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শীঘ্রই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করছে সরকার। আর আসছে আইনে কেউ যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সে ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫৭ ধারায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা তদন্ত চলছে, সে বিষয়েও নতুন আইনে দিকনির্দেশনা থাকবে। তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বা সুশাসনের ব্যাপারে শেখ হাসিনার সরকার কোন আপোস করবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। বিচার বিভাগ হচ্ছে অসহায় মানুষের শেষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তাই আমরা সেই আস্থা নষ্ট করতে আসিনি। তাই আসুন আমরা সকলে এক সঙ্গে কাজ করে মানুষের আস্থা অর্জন করি এবং ন্যায় বিচার জনগণের দুয়ারে পৌঁছে দেই। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জানেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য একটি স্বাধীন অবকাঠামো দরকার। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে বিচার বিভাগ স্বাধীন রাখার জন্য অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি আমরা। আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুধাবন করে দেখেছেন, বিচারপতিদের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত বেতন ভাতা, সামাজিক সম্মান ও প্রশিক্ষণ। এরই নিরিখে সরকার কাজ শুরু করেছে। দেশের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিচারকগণের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির বিষয় নিয়ে অন্তত ১২টি গাইড লাইন দেয়া আছে। এর মধ্যে ৭ নং গাইড লাইন নির্দেশনানুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য রাষ্ট্রপতির ওপর দেয়া ক্ষমতা অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণœ রেখে এবং বিচারপতি ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একটি কন্ডাক্ট রুল তৈরি করা হয়েছে। যা শীঘ্রই গ্রেজেট প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিপালিত হবে। তিনি বলেন, আমরা যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে আছি, তারা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করছি। তবে দেশ স্বাধীনের পর ৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশে কোন আইনের শাসন ছিল না। দেশে আর এই হত্যার বিচার বন্ধ করতে ’৯৬ সাল পর্যন্ত ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ জারির মতো সংবিধানে একটি কুখ্যাত আইন জুড়ে দিয়ে সুশাসনের পথ রুদ্ধ করা হয়। তিনি বলেন, যে সংবিধানের মাধ্যমে ইনডেমিনিটি আইনের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রপতি হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয় সে দেশে কোন আইনের শাসন থাকতে পারে না, এমনকি ’৯৬ সাল পর্যন্ত ২১ বছর দেশে কোন আইনের শাসন ছিল না। তারপর ’৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম এসে এই কুখ্যাত ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে একে একে শেখ মুজিব, জেল হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে। তাই বলব, বাংলাদেশে কেউ যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে থাকেন, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই করেছেন- আর কেউ নয়। এটাই হচ্ছে আইনের শাসনের প্রতি যাত্রা এবং আইনের শাসনকে সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টা। তিনি রবিবার দুপুরে হবিগঞ্জ চীফ জুডিগিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন শেষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আয়োজিত গণপূর্ত বিভাগ, হবিগঞ্জের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংশ্লিষ্ট ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আতাব উল্লাহ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন এ্যাডভোকেট আলহাজ মোঃ আবু জাহির এমপি, এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান এমপি, এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি, এ্যাডভোকেট বেগম আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এমপি, আইন-বিচার ও সংসদীয় বিষয়ক সচিব আবু সালেহ মোহাম্মদ জহিরুল হক, সিলেট গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সোলায়মান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ আফিল উদ্দিনসহ সরকারের আরও কয়েকজন উর্ধতন সচিব ও কর্মকর্তাগণ। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা জজশিপের বিজ্ঞ বিচারক, আইনজীবী এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ। উল্লেখ্য, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (১ম পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২৩ কোটি ১১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে হবিগঞ্জের ওই ১২ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ভবনটির ১০ তলার মধ্যে ১ম পর্যায়ে ৫ তলা নির্মাণ করা হয়। নবনির্মিত ভবনটিতে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ১৩টি এজলাস, ৬৩০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, ১৫০ কেভিএ স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক জেনারেটর, ৫০ টন এয়ারকুলার, ১১ কিলোওয়াট সোলার প্যানেল, পৃথক লিগ্যাল এইড অফিস, পৃথক মহিলা ও পুরুষ হাজত খানা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, মালখানা, কনফারেন্স রুম, লাইব্রেরি ও নামাজের ঘরসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এছাড়াও থাকবে আরও ১০টি এজলাস, বিচারকগণের জন্য একটি পৃথক লিফটসহ মোট ৩টি আধুনিক লিফটসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক ডিজিটাল ব্যবস্থা।
×