ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিন নির্বাচনের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৮ মে ২০১৭

আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিন নির্বাচনের

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকেই নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার জন্য দলের সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে কিংবা নির্বাচনকে সহজভাবে নিলে চলবে না। আগামী নির্বাচন কঠিন হবে। সরকারের সব উন্নয়নমূলক কর্মকা- সারা গ্রাম-বাংলায় তুলে ধরে জনগণের মন জয় করুন। মনে রাখবেন, সবার কর্মকা-ের রিপোর্ট আমার কাছে রয়েছে। যারা জনগণের সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছেন তারাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। জনবিচ্ছিন্ন কাউকেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না। রবিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। তাই এখন থেকেই নির্বাচনী এলাকায় থেকে জনগণের মন জয় করুন, সরকারের গত আট বছরের ব্যাপক সাফল্যগুলো তুলে ধরুন। মনে রাখবেন, দিন শেষে কিন্তু জনগণের কাছেই যেতে হবে। সরকারের জনকল্যাণমুখী কাজগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরুন। জনগণের মন জয় করুন, কর্মীদের মূল্যায়ন করুন। দলের মধ্যে কোন ধরনের কোন্দল-দ্বন্দ্বের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দলের মধ্যে কোন ধরনের বিভেদ-অনৈক্য বরদাস্ত করা হবে না। সারাদেশের তিনশ’ আসনের জরিপ রিপোর্ট ও প্রকৃত চিত্র আমার কাছে আছে। আরও জরিপ চালাব। নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থা, জনসমর্থন কার কেমন, আর কারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন- সব রিপোর্ট আমার কাছে রয়েছে। তাই সবাই সাবধান হয়ে যান, নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করুন। যার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে বিশঙ্খলা সৃষ্টি করবে তাদের কাউকেই ক্ষমা করা হবে না। সে যত বড় নেতাই হোন না কেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় দলের সভায় স্বতন্ত্র ১১ সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রথমবারের মতো বৈঠকে অংশ নেন। আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া স্বতন্ত্র এমপিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। এখন থেকে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করুন। দলের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করলে কিন্তু আপনারা আগামীতেও মনোনয়ন পাবেন না। যার যার এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলুন। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামুন। আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সম্পাদক নূর ই আলম চৌধুরী লিটন সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র এমপিরা আমাদের দলেরই লোক। সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে তাঁদের আনুষ্ঠানিক যোগদানের প্রয়োজন পড়ে না। তবে বৈঠক থেকে আমরা স্বতন্ত্র এমপিদের আওয়ামী লীগ দলের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেছি। সূত্র জানায়, ১৬ স্বতন্ত্র এমপির মধ্যে ৫ জন অংশ নেননি। তাঁরা হলেন- ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী, মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, মকবুল হোসেন, রহীম উল্লাহ ও উষাতন তালুকদার। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। তিনি বলেন, একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে গত নির্বাচনে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম। আগামী নির্বাচনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে নেব। তাঁর নির্দেশে নৌকা প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন বলেন তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সূত্র জানায়, এ সময় ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনকে উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলে যোগ দিয়েছেন, তাই আমার কাছে খবর আছে আপনি এলাকার অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। এখন এলাকায় গিয়ে দ্রুত তা তুলে নেবেন। বৈঠক সূত্র জানায়, রাত আটটা থেকে পৌনে দশটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকের পুরোটাই ছিল নির্বাচনী তৎপরতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী বারংবার এমপিদের সরকারের উন্নয়ন-সাফল্যগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বেশ ক’জন এমপির পরীক্ষাও নেন বৈঠকে। তিনি কয়েকজন এমপির কাছ থেকে জানতে চান- সরকার কতজন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দিয়েছে? কতজনকে ভিজিএফ কার্ড দেয়া হচ্ছে? কতজনকে অসহায়-বিধবা ভাতা দেয়া হচ্ছে। এ সময় বেশিরভাগ এমপিই প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এমপিদের আরও বেশি পড়াশুনা করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমরা এত আর্থ-সামাজিক বিপ্লব ও উন্নয়ন করেছি। এমপিরাই যদি এসব বিষয়ে অজ্ঞ হোন তবে আমরা জনগণকে কীভাবে অবহিত করব। তাই জনগণের জন্য আমরা কী কী কাজ করেছে তা জনগণের সামনে তুলে ধরুন। নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নগুলো ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে জানান, সামাজিক গণমাধ্যমেও সবকিছু তুলে ধরুন। এমপিদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, আমি কারোর দায়িত্ব নিতে পারব না। নিজের আসনে নিজে প্রস্তুত হোন। জনবিচ্ছিন্ন কাউকে কিন্তু মনোনয়ন দেব না, তিনি যত বড়ই নেতা হোন না কেন। জনগণের কাছে যেতে হবে, কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। মনে রাখবেন- দিন শেষে কিন্তু জনগণের কাছেই যেতে হবে। সরকারের উন্নয়ন-সফলতার পূর্ণাঙ্গ চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, দুর্নীতি, অর্থ পাচারের চিত্রগুলোও তুলে ধরার জন্য এমপিদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তিরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাই সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থেকে জনগণের কাছে তাদের নেতিবাচক ও দেশবিরোধী কর্মকা-গুলো তুলে ধরতে হবে। জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে। জনগণকে এ ব্যাপারেও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আর অতীতে আপনারা কে কী ভুল করেছেন, তা চিহ্নিত করে উদ্যোগী হয়ে সেসব ভুল সংশোধনের চেষ্টা করুন। জানা গেছে, বৈঠকে ড. হাছান মাহমুদ, আতিউর রহমান আাতিক, তারানা হালিম, মোতাহার হোসেন, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাধন চন্দ্র মজুমদার, ডাঃ হাবিবে মিল্লাহ মুন্না প্রমুখ সংসদ সদস্যরা বৈঠকে নির্বাচনী কৌশলসহ নিজ নিজ এলাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। এমপিদের জন্য থোক বরাদ্দ বৃদ্ধি, এমপিদের এলাকার সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীদের সহযোগিতার হাত বৃদ্ধির নির্দেশ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, অনেক মন্ত্রীই কথা দিয়ে কথা রাখেন না। এমপিরা নিজের এলাকার সমস্যা নিয়ে গেলে অনেক মন্ত্রীই বিমাতাসুলভ আচরণ করেন। দু’জন এমপি থোক বরাদ্দের এক কোটি টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা সোলার প্যানেলে ব্যয় করার পরামর্শ দেন। ১১ স্বতন্ত্র এমপির আওয়ামী লীগে যোগদান বৈঠক সূত্র জানায়, রবিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদের ১৬ স্বতন্ত্র এমপির মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে অংশ নেন। সূত্র জানায় বৈঠকে অংশ নেয়া এমপিরা হলেন- গাইবান্ধা-৪ এর আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ-৩ এর ছলিম উদ্দীন তরফদার, কুষ্টিয়া-১ এর রেজাউল হক চৌধুরী, ঝিনাইদহ-২ এর তাহজীব আলম সিদ্দিকী, যশোর-৫ এর স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা-৭ এর হাজী মোঃ সেলিম, নরসিংদী-২ এর কামরুল আশরাফ খান, নরসংিদী-৩ এর সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মৌলভীবাজার-২ এর আবদুল মতিন, কুমিল্লা-৩ এর ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এবং কুমিল্লা-৪ এর রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।
×