ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পানিতে ডুবে থাকলেও ফলন ভাল হবে

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৮ মে ২০১৭

পানিতে ডুবে থাকলেও ফলন ভাল হবে

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বন্যা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষেত পানিতে ডুবলেও ধান গাছ পচবে না। ওই পানির মধ্যেই বেড়ে উঠবে ধান। এমনকি কম সময়ে পাকা এই ধানে উৎপাদনও হবে বেশি। ১৩ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে এ ধরনের দুইটি ধানের জাত ব্রি-৭৬ ও ব্রি-৭৭ উদ্ভাবন করেছে বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ ধান চাষ সম্প্রসারিত হলে বরিশালে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে নতুন উদ্ভাবিত সাদা মোটা ও দুধকুমার ধান দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির জন্য উপযুক্ত। আমন মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সী দুই ফুট উচ্চতার এই চারা রোপণের ১২০ দিনের মধ্যেই কাটার উপযুক্ত হবে। এ সময় ক্ষেত একটানা পাঁচদিন পানিতে ডুবে থাকলেও ধানের কোন ক্ষতি হবে না। এমনকি জোয়ার-ভাটার পানি এবং বন্যায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতার ধানগাছ নুয়ে পড়বে না। হেক্টরপ্রতি চাষে লাগবে ২০ কেজি বীজ। যাতে ফলন হবে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন। বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকরা জোয়ার-ভাটার পানি থেকে শুরু করে আকস্মিক বন্যার পানিতে ক্ষেত ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকেন। এতে করে এক থেকে দুইদিন পানির নিচে ধানের চারা থাকলে তা পচে যায়। এরপর পানি কমলে ওই ক্ষেত পরিষ্কার করে নতুনভাবে চারা লাগানো কৃষকের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে ধান ঘরে তুলতে না পারায় কৃষকের কাঁধে ঋণের বোঝা বেড়ে যায়। এ কারণে গত ১৩ বছর ধরে গবেষণা করে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির উপযুক্ত ধানের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ ধানের চারা এ বছর থেকে প্রথমবারের মতো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন) ড. আলমগীর হোসেন জানান, আমন মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০ দিন বয়সী দুই ফুট উচ্চতার এ ধান চারা রোপণ করার ১৫০ দিনের মধ্যে কাটার উপযুক্ত হবে। যে সময় ধান কাটার উপযুক্ত হবে তখন এর উচ্চতা হবে সাড়ে চার ফুট। এমনকি জোয়ার-ভাটার পানি এবং বন্যায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতার ধানগাছ কোনভাবে নুয়ে পড়বে না। এ সময় ক্ষেতে একটানা পাঁচদিন পানি থাকলেও এ ধানের কোন ক্ষতি হবে না। হেক্টরপ্রতি জমিতে ২০ কেজি করে এ ধানের বীজ বপন করা যাবে। ফলন হবে সাড়ে চার থেকে ৫ টন। মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও জানান, নতুন উদ্ভাবিত ধান বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায় পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে সফলতা এসেছে। সেখান থেকেই এ ধানের বীজ সংগ্রহ করা হয়। ওই ধান সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবছর এক হাজার কৃষকের মধ্যে পাঁচ কেজি করে বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এরপর ওই সকল কৃষকের কাছ থেকে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বীজ সংরক্ষণ কার্যালয় বীজ সংগ্রহ করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশালের উপ-পরিচালক রমেন্দ্রনাথ বাড়ৈ জানান, নতুন উদ্ভাবিত ধানের বীজ সম্প্রসারিত করতে পারলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যের উদ্বৃত্তও বেড়ে যাবে।
×