ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন বিভাগের দখলে থাকা জমি উদ্ধারে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৮ মে ২০১৭

বন বিভাগের দখলে থাকা জমি উদ্ধারে বিক্ষোভ

এ রহমান মুকুল, পঞ্চগড় ॥ দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে বন বিভাগের অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারে ভূমি মালিকরা এবার রাস্তায় নেমেছে। ভূমি মালিকদের দাবি, ‘১৯২৭ সালের বন আইনের ৬ ধারা বাতিল করে অবিলম্বে তাদের জমি ফেরত দেয়া হোক। এই দাবিতে রবিবার পাঁচ শতাধিকের বেশি ভূমি মালিক শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক অফিস ঘেরাও করে। পঞ্চগড় সদর, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্যাতিত ও মামলা-হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা ‘রক্ত দেব তবু জমি দেব না’, ‘রক্তের হলিতে লাল হবে যে মাটি, সেখানেই কবর দিও আমার দেহটি’, ‘এ কেমন দেশ নিজের ঘরে পরবাস ‘১৯২৭ সালের বন আইনের ৬ ধারা মানি না’, ‘আর কেউ এই পরাধীন ভূমিতে জন্ম নিওনা’সহ বিভিন্ন সেøাগান সম্বলিত ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড় সরকারী অডিটরিয়াম চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে তারা জেলা প্রশাসক অফিস ঘেরাও ও সমাবেশ করে। সমাবেশে সফিয়ার রহমান চৌধুরী, ওয়ালিউল ইসলাম, খোরশেদ আলম, তোজাম্মেল হোসেন খোকা, কুসুম কুমার প্রধান বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পেশ করা হয়। এতে জমি হারানো ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা ফরেস্ট সেটেলমেন্ট আদালতের রায় বাস্তবায়ন, ১৯২৭ সালের ফরেস্ট আইনের ৬ ধারা বাতিল, জমির ভোগ দখল নিশ্চিত করা, খাজনা নিয়ে নামজারি করাসহ বন বিভাগের নামে রেকর্ড বাতিল করার দাবি করেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল আলিম খান ওয়ারেশী স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৬২ সালে সরকার ১৯৫৯ সালের দি প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স বলে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ হাজার ৬০২ একর জমি ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বন বিভাগকে দেয়া বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে। ভূমি মালিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে বন বিভাগ ও ভূমি মালিকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। আর এই বিরোধের জের ধরে স্থানীয় বন বিভাগ বিভিন্ন সময়ে সাধারণ ও নিরীহ মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন আদালতে শতাধিক দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বন বিভাগের দায়েরকৃত এসব মিথ্যা মামলায় কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ আসামি হয়ে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেয়। ইতোমধ্যে অনেক ভূমি মালিক মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায় নিঃস্ব হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালে ফরেস্ট সেটেলমেন্ট আদালত স্থাপন করে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক রবিউল ইসলামকে সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে ক্ষমতা দেয়া হয়। শুনানি শেষে ২০০১ সালের ২৮ মার্চ ফরেস্ট সেটেলমেন্ট অফিসার তার রায়ে বলেন, জমিগুলো মালিকদের ফেরত দেয়া যেতে পারে। বন বিভাগ ইচ্ছা করলে অংশীদারের ভিত্তিতে চা চাষের পরিকল্পনা নিতে পারে। অথবা বন বিভাগ সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পূর্বে জমির মালিকদের বিগত বছরগুলোর ক্ষতিপূরণসহ জমির মূল্য প্রদান করে বনায়ন সৃষ্টি করে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু গত ১৬ বছরেও এই রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এখনও মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। এদিকে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদফতরের মহাপরিচালক গত ২৭ মার্চের এক পত্রে জানান, ১৯৫৯ সালের দি প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স বলে গেজেটভুক্ত এসব জমি ব্যক্তি মালিকাধীন। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অপর চিঠিতে বলা হয়, ১৯৫৯ সালের দি প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স অধীনে বন বিভাগের গেজেটভূুক্ত জমি রের্কডীয় মালিক বা আইনানুগ বৈধ ওয়ারিশদের নামে রেকর্ড করাতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বরের পত্রে এসব জমির রেকর্ড সংশোধন করার যোগ্য বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এসব জমি ভূমি মালিকদের ফেরত দেয়া হচ্ছে না। বোদা উপজেলার সহকারী সেটেলমন্ট অফিসার মফিজুর রহমান বলেন, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদফতরের মহাপরিচালকের পত্র পাওয়ার আগেই মাঠের জরিপ কাজ শেষ হওয়ায় এসব জমি বন বিভাগের নামে রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ৩০/৩১ ধারার আবেদন ও আপীল করার সুযোগ থাকলে রেকর্ড সংশোধন করা হবে। তা না হলে দেওয়ানি আদালত থেকে রেকর্ড সংশোধন করতে হবে। একই কথা বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গোলাম আজম। দিনাজপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল সরকারকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
×