ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সালাম মশরুর

হাওড়বাসীর সুখ-দুঃখ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৮ মে ২০১৭

হাওড়বাসীর সুখ-দুঃখ

॥ দুই ॥ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি জেলা নিয়ে হাওড়াঞ্চলের অবস্থান। এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হাওড়াঞ্চল নামে এই এলাকাটি পরিচিত। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নিয়ে এ হাওড়াঞ্চলের অবস্থান। এ সাত জেলায় ছোট-বড় অসংখ্য হাওড় আছে। এর মধ্যে ৩৭৩টি আকারে অনেক বড়। তাছাড়া অসংখ্য নদ-নদী, ডোবা ও জলাশয় রয়েছে। হাওড়ের মাটি পলিগঠিত বিধায় খুবই উর্বর এবং প্রচুর ধান জন্মে। ধান ও মাছ এ এলাকার অন্যতম ফসল। প্রচুর জলাশয় থাকার ফলে বিপুল পরিমাণ মাছ উৎপন্ন হয় এই অঞ্চলে। হাওড় এলাকা থেকে উৎপাদিত ধান বাংলাদেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে থাকে। জলাশয় বেশি থাকার কারণে এখানে শামুক, ঝিনুকের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে ৩ ভাগে চিহ্নিত এই হাওড়ের সিলেট ও মৌলভীবাজার অংশ নিয়ে পাহাড় নিকটবর্তী হাওড়। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওড়াঞ্চল নিয়ে প্লাবন ভূমির হাওড়। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলায় গভীর পানিতে নিমজ্জিত হাওড়। যেমন- সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার কয়েকটি হাওড়, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী উপজেলার হাওড় গভীর পানিতে নিমজ্জিত হাওড়। হাওড়াঞ্চলের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলাই শ্রেষ্ঠ অবস্থানে। জনসংখ্যার প্রায় ৭০% কৃষিজীবী। উপজেলাভিত্তিক হাওড় উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে ৭টি জেলার মোট ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ৯০৭ হেক্টর ভূমির মধ্যে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬১ হেক্টর হাওড় এলাকা। ৭টি জেলায় মোট ৭০টি উপজেলা থাকলেও এর অনেকগুলো হাওড় এলাকা নয়। ৪৮টি উপজেলাকে হাওড় বলে চিহ্নিত করা হয়। সাতটি জেলার জমির হিসাব অনুযায়ী সুনামগঞ্জের ৩ লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর ভূমির মধ্যে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩১ হেক্টর হাওড়। হবিগঞ্জের ২ লাখ ৬৩ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমির মাঝে ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৪ হেক্টর হাওড়। নেত্রকোনার ২ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমির মাঝে ৭৯ হাজার ৩৪৫ হেক্টর হাওড়। কিশোরগঞ্জের ২ লাখ ৭৩ হাজার ১শ’ হেক্টর ভূমির মাঝে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৩ হেক্টর হাওড়। মৌলভীবাজার জেলার ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমির মাঝে ৪৭ হাজার ৬০২ হেক্টর ভূমি হাওড়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১ লাখ ৯২ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমির মাঝে ২৯ হাজার ৬১৬ হেক্টর জমি হাওড়। হাওড় বোর্ডের হিসাব মতে মোট হাওড়ের সংখ্যা ৩৭৩টি। সুনামগঞ্জে ৮৫, হবিগঞ্জে ১৪, নেত্রকোনায় ৫২, কিশোরগঞ্জে ৯৭, সিলেটে ১০৫, মৌলভীবাজারে ৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭টি হাওড় রয়েছে। এই এলাকায় ৩৭৩টি হাওড়ের মাঝে ৪৭টি বড় হাওড় রয়েছে। এই এলাকায় সর্বমোট ৬ হাজার ৩শ’ বিলের মধ্যে ৩ হাজার ৫শ’ স্থায়ী, যাতে শুকনো মৌসুমেও পানি থাকে এবং ২ হাজার ৮শ’ অস্থায়ী বিল রয়েছে, যা শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে যায়। এলাকাটি যে কেবল নিচু তা নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি বছর ২০ মিলিমিটার হিসেবে এই এলাকাটি দেবে যাচ্ছে। গত কয়েকশ’ বছরে এর কোন কোন অংশ ১০ মিটার পর্যন্ত দেবে গেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাওড়াঞ্চলের সাধারণ উচ্চতার তিনটি স্তর আছে। সবচেয়ে নিচু এলাকাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ ফুট উঁচু, পরেরটি ১৫ ফুট এবং সবচেয়ে উঁচুটি ২০ ফুট উঁচু। তবে এর গভীর বিল অঞ্চলগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের ২০-৫০ ফুট নিচে অবস্থান করে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের এলাকা ভারতের চেরাপুঞ্জি হাওড় এলাকার উত্তরপ্রান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে হাওড় এলাকার সবচেয়ে সচল নদীর নাম ধনু। এটি ভৈরবের কাছে এসে মেঘনায় মিশেছে। ভারতের আহু বা বরাক নদী থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসহ শ’খানেক নদী হয়ে হাওড়ে বিপুল পরিমাণ জলরাশি প্রবেশ করে। এসব পানি ধনু-মেঘনা হয়ে সাগরে মিলিত হয়। হাওড় এলাকায় দেশের শতকরা ১৮ ভাগ চাল উৎপন্ন হয়। দেশের শতকরা ২২ ভাগ গবাদিপশু এই এলাকায় পালিত হয়। সুরমা নদী সিলেট, ছাতক, সুনামগঞ্জ, সাচনা, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। কুশিয়ারা নদী শেরপুর, মারকুলি, আজমিরীগঞ্জ হয়ে মেঘনায় মিশেছে। সুনামগঞ্জের হাওড়াঞ্চল উক্ত নদীদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিস্তৃত। উভয় নদী হতে ছোট-বড় অনেক খাল হাওড়ের মধ্যে গড়িয়েছে। সুরমা নদী হতে সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য খালগুলো হচ্ছে- ঝাউয়ার খাল, কামাল বাজার খাল, পুন্দার খাল ইত্যাদি। কুশিয়ারা হতে উৎপন্ন খালগুলোর মধ্যে তেতুয়া খাল, মারকুলি খাল, ভেড়ামনার খাল উল্লেখযোগ্য। নদীগুলোর গভীরতা কমে গেছে। অতিরিক্ত জল ধারণ করতে পারে না। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল নদীগুলো ধারণ করতে পারে না। ফলে এসব খাল দিয়ে এমনকি নদীর তীর বেয়ে পানি হাওড়ে প্রবেশ করে। তার সঙ্গে যোগ হয় বৃষ্টির পানি। আর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে বন্যাকে ত্বরান্বিত করে। এবারের বন্যার মূল কারণ এগুলোই। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এ অঞ্চলে কৃষি ব্যবস্থা শুরু হয় সপ্তম শতাব্দীর শুরুর দিকে। পর্যায়ক্রমে এর ভাব ধরনে পরিবর্তন এসেছে। অসম থেকে বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদ সীমান্তে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে ভাগ হয়ে প্রবেশ করেছে। ত্রিপুরার জল্পাই পাহাড় থেকে ৬/৭টি পাহাড়ী ছড়ার মিলিত স্রোতে গড়ে ওঠে জুড়ি নদী, যা বুটলী সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। ত্রিপুরার কৈলাশের পাহাড়ী এলাকা থেকে মনু নদী সিলেটের গোবিন্দপুর দিয়ে প্রবেশ করে মেঘনায় মিলিত হয়। যেখানে বরাক-সুরমা-মেঘনার দৈর্ঘ্য ৮০০ কি.মি., বাংলাদেশে যা ৪১৮ কি.মি. প্রায়। ভারতের মনিপুর রাজ্যের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে কুশিয়ারা-সুরমা-মেঘনা হুমকির সম্মুখীন। তাছাড়া, পাহাড়ী ঢলে কোটি কোটি টন পলি বহন করে নিয়ে আসছে এসব নদী। পলিতেই ভরাট হচ্ছে নদী। বিশেষ করে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা ভারতের চেরাপুঞ্জি সুনামগঞ্জের খুবই কাছে হওয়ায় সেখানে প্রায় ৪৪ ইঞ্চি গড় বৃষ্টিপাতে এ অঞ্চলটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং, উজান এলাকায় বা পাহাড়ী বৃষ্টি বহন করে নিয়ে আসা পলি হাওড়াঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর। দেশভাগের পর মৎস্য খামারের স্থলে তা রূপান্তরিত হয়ে পর্যায়ক্রমে শুধু চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ৩০% ও মাছের জলাভূমি বিলসহ ৫০% প্রায়। সেখানে প্রতি কেদার জমি চাষাবাদে জমিদারকে রংজমা ১ টাকা দিতে হতো। মোড়লগণ টাকা আদায় করতেন। নল-খাগড়াসহ হাওড়ের বেশি অংশ সারা বছরই পানির নিচে থাকত। স্বাধীনতার পর সরকার নৌকা প্রতি ১ টাকা জমা আদায় করে নল-খাগড়া পরিষ্কার করে। ফলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০%, বর্তমানে যা ৭০-৮০%। উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০০ কি.মি. বাঁধ নির্মাণ করেছিল। এতে ৩ লাখ হেক্টর জমি চাষযোগ্য হয়। ফলে নদী-নালা, খাল-বিলের সঙ্গে হাওড়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। অপরিকল্পিত সøুইসগেট পানি নিষ্কাশনে বিঘœ ঘটায়। ফলে মাছের লালন ক্ষেত্র ও প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হয়। পাম্প দিয়ে পানি সেচে বিল শুকিয়ে মাছসহ বিপন্ন করা হয় জলজ উদ্ভিদ। বর্তমানে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা হাওড়াঞ্চলে নতুন কৌশল হিসেবে পরিচিত। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আমাদের সীমান্ত নদীর সংখ্যা ৫৪টি। যেখানে ১০-১২টি নদী স্বাভাবিকভাবে প্রবহমান। বাকিগুলো উজান এলাকার অতিবর্ষণ ও পাহাড়ে বৃষ্টিপাতের ফলে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যেখানে সুরমা, কুশিয়ারা ও মনু নদীর অবস্থান উল্লেখ করার মতো। এই অঞ্চলের হাওড়-বাঁওড়-বিল-জলাশয় দেশের মাছের অন্যতম উৎস। সময়ের বিবর্তনে সিলেটের হাওড়গুলো থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এক জরিপে জানা গেছে, এ যাবতকালের মধ্যে প্রায় ৪৬ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার ও অবাধ মৎস্য নিধনের প্রভাব পড়ছে মাছের ওপর। একই কারণে কমে আসছে মাছের উৎপাদনও। সিলেট বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতরের সূত্র অনুযায়ী হাকালুকি, টাঙ্গুয়া, দেখার হাওড়, শনির হাওড়সহ সিলেট বিভাগের হাওড়গুলো দেশের মৎস্যসম্পদের অন্যতম আধার। দেশের চাহিদার একটি বৃহৎ অংশের মাছ এই হাওড়গুলো থেকে আহরণ করা হয়ে থাকে। এসব হাওড়ে এক যুগ আগেও প্রায় ১০৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে বেশকিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে ২০১১ সাল থেকে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মৎস্য অধিদফতর। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ, প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাও একই লক্ষ্যে হাওড় এলাকায় কাজ করছে। সম্প্রতি মৎস্য অধিদফতরের সহায়তায় পরিবেশ অধিদফতরের উপকূলীয় ও জলাভূমি প্রকল্প জরিপ নামে একটি জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এনসিআরএস, আইডিয়া ও প্রচেষ্টা এই জরিপ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। এই জরিপে দেখা গেছে সিলেটের হাওড়গুলোর ১০৭ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৪৬ প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জরিপের ফলাফলে বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজাতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- মহাবিপন্ন, সঙ্কটাপন্ন ও বিপন্ন প্রজাতি। মধ্যে মহাবিপন্ন প্রজাতি মাছের মধ্যে রয়েছে- টাটকিনি, ঘারুয়া, বাঘাইড়, রিটা, রানী, পাঙ্গাশ, বামোশ, নাফতানি, চিতল, একথুটি ও চাকা। সঙ্কটাপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- বাচা, ছেপচেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, কুঁচে, নাপতে কই, বাতাসিয়া টেংরা, ফলি ও গুজিআইড় এবং বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- গুলশা, গনিয়া, দাড়কিনা, আইড়, পাবদা, বড়বাইম, গজার, তারাবাইম, তিতপুঁটি, নামা চান্দা ও কালিবাউশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৫৬ হেক্টর হাওড়, বিল ও জলাশয় রয়েছে। এসব উৎস থেকে প্রতিবছর প্রায় সোয়া লাখ থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়। তবে এক দশক আগে মাছের পরিমাণ আরও বেশি ছিল। মৎস্য অফিসের জরিপে উল্লিখিত প্রজাতিগুলোর মধ্যে কিছু প্রজাতির মাছ নদীতে ও বদ্ধ জলাশয়ে পাওয়া গেলেও হাওড়ে আর পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া এই তালিকার বাইরেও আরও কিছু প্রজাতি আছে, যা এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যেমন চাপিলা, বালিগড়া, গুতুম, ভেড়া, খাকি, উপল, চেলাপাতা, লাড়িয়া প্রভৃতি মাছ। চলবে... লেখক : সাংবাদিক
×