ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাড়ছে লেনদেন

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৭ মে ২০১৭

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাড়ছে লেনদেন

মোবাইল ব্যাংকিং যা এম ব্যাংকিং বা এমএফএস ব্যাংকিং নামে পরিচিত। দেশে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা চালু হয়। এরপর থেকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সময় বাঁচাতে সবাই তৎপর। ব্যাংকে গিয়ে সময় ব্যয়ের বিপরীতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তুলনামূলক কম খরচে গ্রাহকসেবা পাওয়া সম্ভব। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দৈনিক ৬৯০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। এ সেবা পেতে গ্রাহককে কোন ব্যাংকে যেতে হয় না। যে কোন স্থানে বসে স্বল্পসময়ে টাকা লেনদেনসহ বিভিন্ন ইউটিলিটির বিল প্রদান করা যায়। ১৯৯৯ সালে ইউরোপের ব্যাংকগুলো প্রথম এ ধরনের সেবা চালু করে। কিছুদিন আগেও গ্রামাঞ্চলের লোকজনকে মানি ট্রান্সফার পেতে হলে কমপক্ষে তিন-চার দিন লেগে যেত এখন তা হাতের মুঠোয়। এখন সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী দূরে গেলেও অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকে পরিবারের অন্য সদস্যরা কারণ টাকা পেতে তাদের ঝক্কি পোহাতে হয় না। বর্তমানে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অধিকাংশ মানুষ তাদের নম্বরে বিকাশ এ্যাকাউন্ট খুলেছে। ফলে তারা সহজেই লেনদেন করতে পারছে । এ প্রসঙ্গে বিকাশের কর্ণধার কামাল কাদির বলেছেন, লাখ টাকার লেনদেন হলে ব্যাংকে যাওয়া উচিত। কারণ বিকাশ ছোট লেনদেনের জন্য। তার মতে, ছোট লেনদেনকারীরা কখনও অভিযোগ করেননি। করেছেন বড় লেনদেনকারীরা। তাই তাদের ব্যাংকে লেনদেন করাই ভাল। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৮১ শতাংশ রয়েছে বিকাশের নিয়ন্ত্রণে। ফলে বাজারটি হয়ে পড়ছে প্রতিযোগিতাহীন। তবে যৌক্তিক সার্ভিস চার্জ নির্ধারণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসি। এখনও কোন সমাধান হয়নি। অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যথেষ্ট এগিয়েছে এই খাতে। এটির সার্ভিস চার্জ কমিয়ে আইন-কানুন সহজ করা প্রয়োজন। মানুষ সঞ্চয় অভ্যাস গড়ে তুলতে সহযোগিতা চাইছে। মানুষের ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে কীভাবে তারা সঞ্চয় গড়ে তুলতে পারে তা স্পষ্ট জানা যায় এক গবেষণায়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সদস্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের আমানতের গতি-প্রকৃতি শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে শ্রমিকদের ব্যাংকিং সুবিধা দিতে ও সঞ্চয় সহযোগিতা করতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেনের পরামর্শ দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ অধিকাংশ শ্রমিক নিজের বাসা বা অন্য কোন অপ্রাতিষ্ঠানিক স্থানে টাকা জমা রাখেন। এতে তাদের সঞ্চয় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বেশিরভাগ শ্রমিক বেতন হিসেবে নগদ অর্থ গ্রহণ করেন এ কারণে ব্যয়ের উপর তাদের তুলনামূলক কম নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলে মাস শেষে শ্রমিকদের আর্থিক সঙ্কটে পড়তে হয়। এজন্য প্রায়ই তাদের বন্ধুবান্ধব বা অন্য কোন মাধ্যম থেকে ঋণ নিতে হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮২ শতাংশ শ্রমিক মনে করেন তাদের সঞ্চয় করা প্রয়োজন। এর মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ শ্রমিক নিজেদের ব্যাংক হিসাবে ও ৫ শতাংশ শ্রমিক বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের কাছে উপার্জিত অর্থ সঞ্চয় করেন। সেই হিসেবে আরও বাকি ৬৩ শতাংশ শ্রমিককে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা সম্ভব। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে শতকরা ২ টাকা খরচ হয়। এতে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা লেনদেন করা যায়। তবে কেউ চাইলে একাধিক এজেন্ট বা এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরও অনেক বেশি টাকা লেনদেন করতে পারেন। এই লেনদেনের তেমন কোন তথ্য থাকে না। এজেন্টের মাধ্যমে করলে যার কাছে টাকা পাঠানো হয়, তার মোবাইল নম্বর ছাড়া আর কোন তথ্যই থাকে না। এটি সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ কাজে টাকা ব্যবহার অনেক সহজ হয়েছে। কারণ কে টাকা পাঠাচ্ছেন, কার কাছে পাঠাচ্ছেন এবং কেন পাঠাচ্ছেন তা জানা সম্ভব হচ্ছে না। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন। দেশে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো সেক্টর রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলোÑ পোশাক শিল্প। যেখানে প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত। তাছাড়াও রয়েছে অন্যান্য শিল্পখাতে কর্মরত বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ। এ সকল শ্রমিকদের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগের কোন ব্যাংক হিসাব না থাকায় তারা সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত। অথচ তাদেরও ব্যাংকিং সেবার প্রয়োজন হয়। বেতন তুলতে হয়, গ্রামাঞ্চলে বাবা-মা এবং ভাই-বোনদের কাছে টাকা পাঠাতে হয়। শ্রমজীবী এ বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দেশের প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিং যে অধিকতর উপযোগী এটি ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে আর্থিক সেবা গ্রহণ করতে পারে এরূপ গ্রাহকের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ৪ কোটি মানুষ, কিন্তু বর্তমানে এর গ্রাহকের সংখ্যা এর ৪ ভাগের ১ ভাগ। সুতরাং এসব মানুষের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম যত দ্রুততার সঙ্গে সম্প্রসারিত হবে সাধারণ মানুষের আর্থিক সেবা ততই সহজলভ্য হবে।
×