ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আত্মবিশ্বাসের কারখানা ‘তায়কোয়ান্ডো জিম’

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ৭ মে ২০১৭

আত্মবিশ্বাসের কারখানা ‘তায়কোয়ান্ডো জিম’

সময়টা ২০০৩ সাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান চঞ্চল কোরিয়ায় গিয়েছিলেন তায়কোয়ান্ডো প্রশিক্ষণ নিতে। প্রথমবার কোরিয়ায় গিয়ে দেখেন তায়কোয়ান্ডো নিয়ে কোরীয়দের উন্মাদনা। কোরিয়ার খিয়ংহি বিশ্ববিদ্যালয়ে তো তায়কোয়ান্ডোতে রীতিমতো অনার্স ডিগ্রী দেয়া হয়। এসব দেখে বাংলাদেশেও তায়কোয়ান্ডোকে ছড়িয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ হন কামরুজ্জামান। ২০১২ সালে ফের কোরীয় সরকারের বৃত্তিতে ১ বছরের কোরীয় ভাষা ও তায়কোয়ান্ডো প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে সে বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি। শুরু থেকেই কোরীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘কৈকা’র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আসছিলেন তিনি। কৈকাকে তিনি জানান, বাংলাদেশে তায়কোয়ান্ডোকে ছড়িয়ে দেবার ইচ্ছে তার। রাবিতে তায়কোয়ান্ডোর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। কৈকার কর্মকর্তারা কামরুজ্জামানের ইচ্ছায় ইতিবাচক সাড়া দেয়। সে বছরই কৈকা তায়কোয়ান্ডো প্রশিক্ষক কিম ইল উং-কে দুই বছরের জন্য রাবিতে পাঠায়। পরে ২০১৪ সালের ২৩ নবেম্বরে কৈকার ৪৪ হাজার ডলারের অর্থ সাহায্যে রাবির জিমনেশিয়ামের এক অংশে তায়কোয়ান্ডো জিম স্থাপন করা হয়। এভাবেই রাবিতে তায়কোয়ান্ডো জিমের যাত্রা শুরু হয়। জিমটি চালু হবার আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অর্জন ছিল। তবে জিম চালু হবার পর জাতীয়- আন্তর্জাতিক অর্জন যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হারও। গত ২৫ ও ২৬ মার্চ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ১৩তম আসাম্পশন ইউনিভার্সিটি আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্ডো চ্যাম্পিয়নশিপের ‘প্রিন্সেস কাপ’ প্রতিযোগিতায় অংশ রাবির প্রতিযোগী বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আলী মোহাম্মদ নাইম স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক অর্জন করে। নাইমের কোচ হিসেবে সঙ্গে ছিলেন মো. কামরুজ্জামান চঞ্চল। চঞ্চল জানান, ১৯৯৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তায়কোয়ান্ডো প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তখন প্রশিক্ষণের জন্য কোন সুযোগ-সুবিধা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠে ঘাসের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও প্রবল আগ্রহ দেখাচ্ছে। মেয়েদেরও অংশগ্রহণ বেড়েছে অনেক। চারুকলা অনুষদের কারুশিল্প বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা তাসনিম রিতু ১ বছরের বেশি সময় ধরে তায়কোয়ান্ডো প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তিনি বললেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। তায়কোয়ান্ডো সেই আত্মবিশ্বাসটা এনে দেয়। তাছাড়া তায়কোয়ান্ডোতে আত্মরক্ষার কলাকৌশলও শেখানো হয়। মেয়ে হিসেবে প্রতিনিয়তই আমাকে সমাজের নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করে চলতে হয়। এর জন্য আমি মার্শাল আর্ট শিখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তায়কোয়ান্ডো জিম আমাকে সে সুযোগটা দিয়েছে। তায়কোয়ান্ডো প্রশিক্ষক মো. কামরুজ্জামান চঞ্চল বলেন, তায়কোয়ান্ডো শিক্ষার্থীদের শরীর ও মন সুস্থ রাখে। আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন তায়কোয়ান্ডো প্রশিক্ষণ প্রশিক্ষক হিসেবে আমার লক্ষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তায়কোয়ান্ডো খেলোয়াড় তৈরি করা। যেন তারা ভাল কিছু অর্জন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে আনতে পারে। খুর্শিদ রাজীব
×