ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে অভিমত

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো নয়, চাই জনবান্ধব কর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৭ মে ২০১৭

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো নয়, চাই জনবান্ধব কর ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশে ‘কর জিডিপি অনুপাত’ কম বলেই বাজেটে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। উন্নয়ন বৃদ্ধি করতে হলে করের পরিধি বাড়াতে হবে ঠিকইÑ তবে তা ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো নয়। জনগণের উন্নয়নে জনবান্ধব কর ব্যবস্থাকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও গার্মেন্টস সেক্টরের ম্যানেজার তৈরির সক্ষমতা রাখে না। বর্তমানে দেশের গার্মেন্টস খাতে ২৬ হাজার বিদেশী ম্যানেজার কাজ করছে। এতে করে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যায় হাওড়াঞ্চলের কৃষক মাত্র ১ শতাংশ ফসলও ঘরে তুলতে পারেনি, বাজেটে তা প্রাধান্য দিতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিবন্ধী, দলিত, দ্বীপবাসী ও ভিক্ষুকÑ এদের সবার কাছে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছাতে হবে। বাজেটে এই বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স অডিটরিয়ামে ‘ট্যারিফ স্ট্রাকচার অব বাংলাদেশ এ্যান্ড সেক্টরওয়াইজ এলোকেশন অব ন্যাশনাল বাজেট’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। অর্থনৈতিক রিপোর্টার ফোরাম (ইআরএফ) ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমানের সভাপতিত্বে বাজেটের নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্রাটিজিক স্টাডিজের (বিস) এক্টিভ রিসার্চ ডিরেক্টর মাহফুজ কবির। আর ট্যারিফের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন মির্জা আবুল ফজল মোঃ তৌহিদুর রহমান ও এস এম সুমাইয়া জেবিন। মাহফুজ কবির বলেন, বাজেটে শিক্ষা ও সামাজিক খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। জেন্ডার বাজেট, চাইল্ড ফুড বাজেট ও ডিজিটাল বাংলাদেশকেও প্রাধান্য দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তায় জিডিপি’র ২ শতাংশ ব্যয় হওয়ার কথা থাকলেও তা মাত্র এক শতাংশের কিছু উপরে। একই সময়ে এডিপিতে উলম্ফন দেখা যায়। এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, হাওড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাজেটে এই ক্ষতির বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে। হাওড়াঞ্চলের কৃষক মাত্র ১ শতাংশ ফসলও ঘরে তুলতে পারেনি। সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, এ বছর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট হচ্ছে। উন্নয়ন তখনই টেকসই হবে যখন কাউকে বাদ দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী ভুটানে গিয়ে বলেছেন, উন্নয়ন থেকে প্রতিবন্ধীদেরও বাদ দেয়া হবে না। প্রতিবন্ধী, দলিত, দ্বীপবাসী, হাওড়বাসী ও ভিক্ষুকÑ এদের সবার কাছে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছাতে হবে। বাজেটে এই বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা এখন উড়াল দেয়ার জায়গায় এসেছি। গত ৫-৬ বছরে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন তিনগুণ বেড়েছে। তবে চাহিদাও অনেক বেড়েছে। তবে উন্নয়ন প্রশাসনকে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, দেশের গার্মেন্টস খাতে ২৬ হাজার বিদেশী ম্যানেজার কাজ করছে। এতে করে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে। এর মানে হচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা গার্মেন্টস খাতের ম্যানেজার তৈরির সক্ষমতা রাখে না। তিনি বলেন, একইসঙ্গে নীতি এবং দুর্নীতি উন্নয়নের জন্য বিরাট সমস্যা। আমাদের ক্ষেত্রে মনে হয় দেশে দুর্নীতির জয় ঘটছে। সকল ধরনের শক্তি ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না। এনবিআর, ট্যারিফ কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘অপটিমাল ট্যাক্স’ রেটই যেহেতু জানেন না, তাহলে ট্যাক্স নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন কেন? সরকারকে বিনয়ের সঙ্গে বলব, আপনার প্রজাতন্ত্রে অবনমন ঘটছে। জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কনজামশন যত বাড়বে দেশের তত উন্নয়ন হবে, ট্যাক্স যত বাড়বে উন্নয়ন তত কমবে। বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ। ট্যারিফ কমিশন এখন নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সাইফুর রহমানের সময় ট্যারিফ কমিশনকে এনবিআরের অধীনস্ত করা হয়। এরপর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। তবে এখনও সেই ক্ষমতা ফিরে পাওয়া হয়নি। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবুল মজিদ বলেন, আমরা যে বাজেট করি এটি সাধারণত ব্যয়ের বাজেট। এর প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। ঘাটতি ছাড়া যদি বাজেট করা যেত তাহলে ভাল হতো। কর জিডিপি অনুপাত এখনও মাত্র ১০ শতাংশের মতো। কিন্তু এটি খুবই কম। কর জিডিপি অনুপাতের কারণেই বাজেটে ঘাটতি যোগ হচ্ছে। তিনি বলেন, কর যার উপর আরোপিত হবে, যিনি ভ্যাট দেন তারা কিন্তু এই আলোচনায় নেই। তিনি আরও বলেন, প্রথম ৬ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) মাত্র ৫ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে। সারা বছর বসে থাকছি। জুন-জুলাইয়ে এসে বাকি ৪৫ শতাংশ খরচ করছি। এটা ঠিক নয়। এফবিসিসিআই’র ডিরেক্টর মোঃ আব্দুল হক বলেন, বাজেটে কর বৃদ্ধির প্রবণতা নয়, রেভিনিউ (আয়) বৃদ্ধির প্রবণতা তৈরি করতে হবে। বাজেটে বড় ধরনের যে সংস্কার প্রয়োজন তা কিন্তু হচ্ছে না।
×