ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ের সম্প্রসারণ হচ্ছে

উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি গতিশীল করতে বিইজেডের কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৭ মে ২০১৭

 উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি গতিশীল করতে বিইজেডের কাজ শুরু

সমুদ্র হক ॥ কৃষি ভিত্তিক উত্তরাঞ্চলের সার্বিক কর্মকা- স্থিতিশীল করে নানা ধরনের শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তদারকিতে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিইজেড) স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) প্রস্তাবিত বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এদিকে বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের অনুমোদনও এসেছে। আশা করা হয়েছে বাড়তি রানওয়ে নির্মাণের পর নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের আওতায় যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বর্তমানে বগুড়া বিমানবন্দর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অধীনে রয়েছে। সেখানে রাডার স্টেশন আছে। প্রশিক্ষণের বিমান ওঠানামা করে। বগুড়া অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি। নিকট অতীতের শিল্পনগরী বগুড়া তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। দিনে দিনে সবগুলো শিল্প নিভে যায়। লাখো শ্রমিকের কান্নার স্রোত শিল্প মালিকদের মন গলাতে পারেনি। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী কটন স্পিনিং মিলের শ্রমিকরা সানকি হাতে ভুখা মিছিল করেছে। অর্ধাহার অনাহারে অনেক শ্রমিকের জীবন প্রদীপ নিভে গিয়েছে। অনেকগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে হাইরাইজ ভবন, আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক কেন্দ্র। বিসিক শিল্পনগরী ঝিমিয়ে পড়েছে। বিসিক সম্প্রসারণের উদ্যোগেও ভাটা পড়েছে। একদার শিল্পনগরী বগুড়া দিনে দিনে পরিণত হয়েছে শপিং মল, বাণিজ্যিক শোরুম, আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স, আধুনিক মার্কেট, তারকা খঁচিত হোটেল, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার নগরীতে। উত্তরাঞ্চলের সেন্টার পয়েন্ট একদার শিল্পনগরী বগুড়ার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নগরীর শাজাহানপুর উপজেলায় ২শ’ ৫১ দশমিক ৪৩ একর ভূমির অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী। জমি অধিগ্রহণ করার পর এলাকার ম্যাপ নির্ধারণ করে ভিডিও চিত্র ধারণ করা হচ্ছে। যাতে কেউ ওই এলাকায় দ্রুত ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে না পারে। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দের জন্য ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে জমির দাম বৃদ্ধি সাপেক্ষে এই প্রাক্কলন বাড়তে পারে। বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুত অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দক্ষিণে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া, চকজোড়া, পারটেকুর, বীরগাঁও, চকভ্যালি মৌজায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বিইজেড) স্থান নির্ধারণ এমনভাবে করা হয়েছে যাতে খুবই নিকট ভবিষ্যতে বগুড়া- সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ বিইজেডের কাছ দিয়ে যায়। ৭৪ কিলোমিটার এই রেলপথ নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগে দূরত্ব অনেক কমে যাবে। সূত্র জানায়, ভারত লাইন অব ক্রেডিটের মাধ্যমে এই রেলপথ নির্মাণে সহযোগিতা দেবে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, বগুড়া বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ের সঙ্গে আরও তিন হাজার ফুট সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। দীর্ঘ এই রানওয়ে নির্মিত হলে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারবে। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হওয়ার পর এই বিমানবন্দর সিভিল এভিয়েশনের আওতায় এলে এয়ার ফ্রেইটের সুবিধা দিতে পারবে। কৃষিপণ্য উৎপাদনে উত্তরাঞ্চল বড় ভূমিকা পালন করেছে। ষাটের দশকেই বগুড়া অঞ্চল কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। বর্তমানে কৃষির উৎপাদিত অনেক পণ্য বিশেষ করে সবজি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে উন্নত কোন ব্যবস্থা নেই। শীতের সবজি মৌসুমে অনেক সবজি বিশেষ করে মূলা গাজর বেগুন কপির বাড়তি উৎপাদন হওয়ায় কৃষক দাম না পেয়ে ফেলে দেয়। বগুড়ার আদমদীঘির একটি গ্রামে কম্বল উৎপাদন করে সারাদেশে সুনাম অর্জন করে সরবরাহ করছে। গ্রামটি কম্বলের গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। তাঁত শিল্প আধুনিকায়ন না হওয়ায় এগিয়ে যেতে পারছে না। ডেইরি ফার্মের অবস্থাও একই রকম। গ্রামাঞ্চলে নারীরা সেলাই মেশিনে উৎপাদিত গার্মেন্টস বানিয়ে বড় মার্কেটে যেতে পারছে না। বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকায় নারী অটোমোবাইল কারখানা স্থাপন করে মোটরসাইকেল অটোরিক্সা মেরামত করছে। কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে লেদ মেশিন ও গ্রান্ডিং মেশিনে। বগুড়ার গুঞ্জন মেটাল অটোমেটিক ফাউন্ড্রি স্থাপন করে মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করতে পারছে। ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ তৈরির বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে বগুড়ায়। একবার বিসিক উদ্যোগ নিয়ে এগোতে পারেনি। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দেখা গেছে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুগের চাহিদার প্রয়োজনে ইলেকট্রনিক্স এক্সেসরিজ (যন্ত্রাংশ) তৈরির অপার সম্ভাবনা বিরাজ করছে। বগুড়ায় যত সবজি উৎপাদিত হয় সেগুলো এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি উপযোগী নানা ধরনের প্যাকেটজাত খাবার তৈরি করে রফতানিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যা এক্সপোর্ট প্রমোশন জোনের (ইপিজেড) চেয়ে কোন অংশে কম হবে না। কাজ জুটবে বহু শ্রমিকের। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার পর খুব দ্রুত যে যুগোপযোগী আধুনিক অটোমেটিক যন্ত্রপাতি বসিয়ে নানা ধরনের শিল্প স্থাপিত হতে পারবে সেই সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর আশা করা হয়েছিল উত্তরাঞ্চলে শিল্পে গতি আসবে। কোন কারণে সেই গতি আসেনি। আশা করা হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এবার আর গতি আনতে অসুবিধা হবে না। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলের ইশ্বরদী ও নীলফামারীতে ইপিজেড স্থাপিত হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ইপিজেডের সহযোগী হতে পারবে। এক সূত্র জানায়, বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল গতি পাওয়ার সঙ্গে বেসরকারীভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হতে পারে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জে বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জে ১১টি কোম্পানির অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে।
×