ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেনাপোল বন্দরে খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৭ মে ২০১৭

বেনাপোল বন্দরে খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা

আবুল হোসেন, বেনাপোল ॥ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমদানি-রফতানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জারিকৃত আমদানিনীতিতে শর্ত আরোপ করায় দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানির পর আমদানিনীতি আদেশ ২০১৫-১৮ অনুচ্ছেদ ১৬-এর উপ-অনুচ্ছেদ ২৪-এ বর্ণিত শর্তের কারণে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য শুল্কায়ন ও খালাসে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে খাদ্যদ্রব্য আমদানিকারকরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বেনাপোল বন্দরে পরীক্ষার অপেক্ষায় পড়ে আছে খাদ্যদ্রব্যের বেশ কিছু চালান। দেশের প্রধান এবং বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। এই বন্দরে আমদানি করা খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষণের জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) অথবা বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) কোন শাখা স্থাপিত হয়নি। ফলে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্যের মান পরীক্ষায় কালক্ষেপণ হচ্ছে। যথাসময়ে এসব মালামাল খালাস নিতে না পারায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আমদানিকারকরা। খাদ্যদ্রব্যের একটি চালান বেনাপোল বন্দরে এসে পৌঁছলে তার নমুনা সংগ্রহ করে বিসিএসআইআর বা বিএসটিআই-এর ল্যাবে পাঠানোর নির্দেশ দেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। নমুনা পরীক্ষাও বেশ ব্যয়বহুল। এমনও দেখা গেছে, মালের দাম ও শুল্কের পরিমাণের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষার খরচ বেশি হয়ে যায়। তাছাড়া বিএসটিআই তাদের নির্ধারিত ১৫৫টি পণ্যের বাইরে অন্য কোন পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করতে চায় না। ফলে বৈধভাবে আমদানি করা একটি খাদ্যপণ্য চালান নমুনা টেস্ট রিপোর্টের অপেক্ষায় তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত বন্দরে পড়ে থাকে। বন্দরের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে এসব খাদ্যদ্রব্যের গুণগত মান নষ্ট হয়। এছাড়া বন্দরে আছে ইঁদুরের উপদ্রবের পাশাপাশি চুরির আশঙ্কাও। অনেক সময় আমদানি করা খাদ্যদ্রব্যের মেয়াদের এক তৃতীয়াংশ সময় পার হয়ে যায় টেস্ট রিপোর্টের অপেক্ষায়। সেই সঙ্গে আমদানিকারককে গুনতে হয় অতিরিক্ত বন্দর চার্জ ও ব্যাংক সুদ। এ প্রসঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কর্মাসের ল্যান্ডপোর্ট সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘শর্ত শিথিল হলে শুল্কায়নে জটিলতা নিরসন হবে এবং আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতিসহ অন্যান্য জটিলতা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। আমদানিনীতি আদেশে বলা আছে যে, ‘বন্দরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছানোর পর শুল্ক কর্তৃপক্ষ শুধু ওই দুইটি ল্যাবরেটরি হতে খাদ্যের মান যথাযথ আছে এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র ইস্যুকরত শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে। খাদ্যের মান যথাযথ না হলে শুল্ক কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সে ক্ষেত্রে আমদানিকারককে নিজ খরচে উক্ত খাদ্যদ্রব্য রফতানি উৎস দেশে বা তৃতীয় কোন দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।’ ফেরত পাঠানোর বিষয়টিতে আইনের জটিলতা আছে এবং আমদানির নিমিত্তে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা ফেরতেও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এসব জটিলতার কারণে ক্যাডবেরি চকোলেট গত পাঁচ বছর ধরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয় না।’ তিনি খাদ্যদ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে বর্ণিত শর্ত শিথিলের দাবি জানান। ঢাকার আমদানিকারক রেজাউল এ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে আমার কফির একটি চালান ছাড় করতে প্রায় ২০ দিন সময় লেগেছে। তা ছাড়া বিসিএসআইআর ল্যাবের খরচ অধিক হওয়ায় এ সব পণ্য আমদানি করা কষ্টসাধ্য। যে পণ্য ছাড় করতে ইতিপূর্বে শুধু কোয়ারেনটাইন সার্টিফিকেট হলেই চলত, এখন আর তা হচ্ছে না।’ বেনাপোল সিএ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষার নামে আমদানিকারকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রতিটি খাদ্যদ্রব্য পরীক্ষায় দেয়ায় এসব পণ্য খালাসে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। অনেক আমদানিকারক খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। বেনাপোল বন্দরে পরীক্ষার অপেক্ষায় পড়ে আছে খাদ্যদ্রব্যের বেশ কিছু চালান। বন্দর থেকে খালাস নিতে পারছেন না আমদানিকারকরা। বেনাপোল কাস্টম হাউসের সংশ্লিষ্ট শুল্কায়ন গ্রুপের ডেপুটি কমিশনার নিতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘আমদানিনীতি আদেশের শর্ত অনুসারে আমরা আমদানি করা খাদ্যদ্রব্য খালাস দিয়ে থাকি। কেউ আইনের উর্ধে নই বিধায় আমদানিনীতির আদেশের শর্ত সবাইকে মানতে হবে।’
×