ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিকফা বৈঠকে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও জিএসপি প্রাধান্য পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৬ মে ২০১৭

টিকফা বৈঠকে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও জিএসপি প্রাধান্য পাবে

এম শাহজাহান ॥ টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবার তিনটি অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হবে। এগুলো হচ্ছেÑ দেশে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানো, পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ও ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা এবং জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল। আগামী ১৭-১৮ মে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী টিকফার তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই সভায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ মার্ক লিনসকট মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। সাসটেইনেবল কম্প্যাক্ট ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিটি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন চালু এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির ওপর তাগিদ দেয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, টিকফা (বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তি) কার্যকর করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। টিকফার তৃতীয় বৈঠক সামনে রেখে ইতোমধ্যে কার্যপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এবারের সভায় শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা এবং এ দেশে মার্কিন বিনিয়োগ আনার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। বিনিয়োগ আকর্ষণে মার্কিন উদ্যোক্তাদের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার বিষয়টি ঘোষণা করা হতে পারে টিকফা বৈঠকে। জানা গেছে, ঢাকায় টিকফার যে বৈঠক হবে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক দফতর ইউএসটিআরের চারজন প্রতিনিধি অংশ নেবেন। ইতোপূর্বে দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তারা টিকফার প্রতিটি বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এবার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সফরে আসছেন। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় অঙ্কের বাণিজ্য রয়েছে। বিশেষ করে পোশাক রফতানির বড় অংশ যাচ্ছেÑ যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু জিএসপি বন্ধ করে দেয়ায় বিশ্বে বাংলাদেশের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। তাই সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, আগে জিএসপি পুনর্বহাল করে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করা। এরপরই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে মার্কিন বিনিয়োগে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন এ দেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আনাও সরকারের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে। তাই দেশটির উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এ দেশে মার্কিন বিনিয়োগ আনা হবে। আশা করা হচ্ছে, সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী উদ্যোগে ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে এগিয়ে আসবে। মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হবে টিকফা চুক্তি কার্যকর করতে হলে দেশে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পোশাক রফতানিতে কোটা ও ডিউটি ফ্রি নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশ কখনও লাভবান হতে পারেনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য হচ্ছেÑ তৈরি পোশাক। ফলে গতানুগতিক জিএসপি বাংলাদেশের বাণিজ্যের জন্য বড় ধরনের সুবিধা বয়ে আনছে না। বাংলাদেশের বাজারে ২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমেরিকান পণ্য প্রবেশ করছে। অথচ আমেরিকার বাজারে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শুল্ক গুনতে হচ্ছে। এ শুল্ক হ্রাস করা হলে পোশাক রফতানি আয় কয়েকগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন রফতানিকারকরা। এছাড়া পোশাকের ন্যায্য দাম এখনও নিশ্চিত হয়নি বড় এ বাজারে। ইতোমধ্যে পোশাকের দাম বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়ার জন্য বিজিএমইএ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির জনকণ্ঠকে বলেন, এ শিল্প খাত টিকিয়ে রাখতে হলে পোশাকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতেই হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বায়ার বা ক্রেতারা সেটি দিচ্ছে না। এর ফলে প্রতিযোগী সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, টিকফা ফোরামের বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা উচিত। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ৪ হাজার ৮৮০টি পণ্যে ১২৯টি দেশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে। এ দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ ৫০ রফতানিকারক দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এছাড়া রফতানিতে বাংলাদেশের ৯৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য গার্মেন্টস, টেক্সটাইল এবং নিটওয়্যার পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়নি। ফলে ৯৭টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়া হলেও তার অধিকাংশ পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় না। অথচ গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ও নিটওয়্যার এ তিনটি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া গেলে দেশের রফতানি আয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফেরদৌস পারভেজ বিভন জনকণ্ঠকে বলেন, পোশাকেই শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রফতানি হচ্ছে পোশাক, অথচ সেই গার্মেন্টস পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা নেই। টিকফা বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচনা হোক এটাই প্রত্যাশা করছি। এদিকে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ মাত্র ৩৩১ মিলিয়ন ডলার যা সক্ষমতার তুলনায় তা অনেক কম। যদিও বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত ছাড়াও আরও বেশকিছু খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
×