ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যক্ত হোক তোমামাঝে অসীমের চিরবিস্ময়...

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৬ মে ২০১৭

ব্যক্ত হোক তোমামাঝে অসীমের চিরবিস্ময়...

মোরসালিন মিজান ॥ রবীন্দ্রনাথের গানে গানে খুব সুন্দর একটি সন্ধ্যা। বিখ্যাত শিল্পীরা গাইলেন। গাইলেন অপেক্ষাকৃত নবীনরাও। দলীয় সঙ্গীত হলো। হলো একক। ভরপুর আয়োজন থেকে শ্রদ্ধায় প্রেমে স্মরণ করা হলো বিশ্বকবিকে। ১৫৬তম রবীন্দ্রজয়ন্তী সামনে রেখে চমৎকার এই আয়োজন। শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা। শুক্রবার ছিল প্রথম দিন। এদিন চেনা মঞ্চটিকে সুন্দর সাজিয়ে নেয়া হয়েছিল। ব্যাকড্রপে শান্তিনিকেতন। কবিগুরুর প্রার্থনাকক্ষ। সামনে কবি ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাইক্রোফোনে প্যাঁচিয়ে দেয়া হয়েছিল গাঁদা ফুলের মালা। মেয়েরাও খোঁপায় ফুল গুঁজে এসেছিলেন। এভাবে সুন্দর একটি আবহ তৈরির চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। ঘরির কাঁটা ছ’টার ঘরে যখন, রবীন্দ্রনাথের চরণের কাছে এসে দাঁড়ান এক দল শিল্পী। নারী কণ্ঠ। পুরুষ কণ্ঠ। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত। পাশাপাশি দাঁড়াতেই বেজে ওঠে জাতীয় সঙ্গীতের সুর। শ্রোতারাও উঠে দাঁড়ান। সবাই মিলে গানÑ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...। হ্যাঁ, প্রতিবারের মতোই জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে হয় শুরুটা। পরের গানটি সরাসরি চিরনতুন রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে। সমবেত কণ্ঠে বাজেÑ ‘রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন।/ব্যক্ত হোক জীবনের জয়,/ব্যক্ত হোক তোমামাঝে অসীমের চিরবিস্ময়।’ পরের পরিবেশনায় স্বদেশের প্রতি ভালবাসা। মাতৃভূমির প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে শিল্পীরা গেয়ে যানÑ আজি দুখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণীÑ/ তোমার অভয় বাজে হৃদয়মাঝে হৃদয়হরণী!/ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!/তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে...। সম্মেলক পরিবেশনা শেষ হলে মঞ্চে আসেন যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরা। হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার সুর তোলার জন্য প্রস্তুত হয়। ততক্ষণে মঞ্চে এসে দাঁড়ান সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পীযুষ বড়ুয়া। বলেন, কবিগুরু আমাদের প্রধান আশ্রয়। দুই দিনব্যাপী আয়োজনে গানে গানে এই মহামানবকে স্মরণ করব আমরা। জন্মোৎসবে মোট ৭০ জন শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বলে জানান তিনি। এ পর্যায়ে সংস্থার পক্ষ থেকে স্মরণ করা হয় সদ্য প্রয়াত চার গুণীজনকে। সঙ্গীত শিল্পী লাকী আখন্দ, লিও জে বড়াই, কৃষ্ণা দাস ও বাচিক শিল্পী কাজী আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এর পর মঞ্চে আসেন রবীন্দ্রনাথের গানের অনন্য সুন্দর কণ্ঠ মকবুল হোসেন মুকুল। কবিগুরুর গানের নিভৃতচারী শিল্পী এখন সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। গানের মতোই নরম কণ্ঠে তিনি বলেন, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বিধৌত পলিমাটির এই বাংলাসহ সমগ্র বিশ্বেই আজ ধর্মান্ধতা মৌলবাদ জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটেছে। আজ মানবতা বিপন্ন। হুমকির মুখে। এমন অন্ধকার সময়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ। তার সৃষ্টির আলো আমাদের পথ দেখায়। আমরা শিল্পীরা কবিগুরুর প্রেমের সাম্যের বাণী মঙ্গলের বার্তা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলো ছড়িয়ে দিতে চাই। রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে আশার বাণী শোনান তিনি। বলেন, ‘একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে।’ দ্বিতীয় পর্বে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। প্রথমে মঞ্চে আসেন মিতা দে। গেয়ে শোনান, ‘সফল করো হে প্রভু’ গানটি। পরে বিভিন্ন বয়সী শিল্পীরা একে একে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। প্রমোদ দত্ত, উত্তম কুমার, মিরা ম-লের গান মুগ্ধ হয়ে শোনেন শ্রোতা। রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে শোনান রফিকুল আলম এবং অনুপ ভট্টাচার্যও। সব মিলিয়ে বেশ কাটে শুক্রবারের সন্ধ্যা বেলাটা। আজ দ্বিতীয় ও শেষ দিনে থাকবে একই রকম আয়োজন।
×