ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হামিদ মীরের ঘটনা এসিড টেস্ট

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্রে আইএসআই‍

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ মে ২০১৭

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্রে আইএসআই‍

শংকর কুমার দে ॥ দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদসহ দেশী ও বিদেশী শক্তি। দেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রশাসন ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেভাবে রাশিয়া প্রভাব খাটিয়েছে সেইভাবে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর জন্য ছক কষেছে আইএসআই। পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীরের তার বাবার সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশের ঘটনার পেছনে মদদদান, নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে অন্যান্য বিভাগের দ্বন্দ্ব সৃষ্টির চেষ্টা, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের তৎপরতা সম্পর্কে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করে এ ধরনের ইঙ্গিত ও আলামত পেয়েছে ঢাকার এক বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর চাপের কারণেই পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীর তার বাবাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য দেয়া সরকারী সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে যাতে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় না আসতে পারে তারই নীল নক্সার অংশ হিসেবে পাকিস্তানী সাংবাদিক হামিদ মীরের এই ঘোষণা দেয়ানোর মাধ্যমে এ্যাসিড টেস্ট করছে আইএসআই। ২০০১ সালের কথা যখন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য আইএসআই বাংলাদেশে তাদের এজেন্টদের ২৫০ কোটি টাকা দিয়েছিল বলে পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা প্রকাশিত সংবাদ মতেই প্রকাশ পায়। আবার যে মুহূর্তে এদেশে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট, ঠিক সেই মুহূর্তেই বাংলাদেশ হয়ে উঠছে আইএসআই-এর ঘাঁটি। আইএসআই নিজেদের মতো করে এদেশে পরিচালনা করে তাদের ভারত-বিরোধী তৎপরতার সবচেয়ে বড় ক্যাম্পটি। সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারত বিরোধী অপ-প্রচার ও তৎপরতার বিষয়টিও আইএসআই এর ছক অনুযায়ীই চলছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানান, বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং নানাভাবে সহায়তার জন্য ২০১৩ সালে যে ৬৯ জন বিদেশীকে সম্মাননা দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে ১৩ পাকিস্তানী নাগরিকও ছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীরের প্রয়াত বাবা অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীরের নাম প্রথমে ছিল না। তখন হামিদ মীর তার বাবা ওয়ারিশ মীরের সম্মাননা দেয়ার জন্য নিজেই বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও সম্মাননা দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের কাছে তদবির করেছিলেন। এখন আবার হঠাৎ করেই বাবার সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর চাপ রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীর তার বাবার সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণাটির অনুসন্ধান করতে গিয়ে কোচে খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গোয়েন্দারা অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন, এখন আবার নতুন করে পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিকগুলো প্রায়ই বাংলাদেশ নিয়ে সেখানে নানাবিধ বিশ্লেষণ করছে, যাতে থাকছে ১৯৭১ সাল নিয়ে, পাকিস্তানের ভেঙ্গে যাওয়া নিয়ে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে তখন সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে পাকিস্তান, যার পেছনে রয়েছে আইএসআই। এমনকি একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের পর দেশটির সংসদ একটি রেজ্যুলেশন পাস করে, যেখানে মূলত বাংলাদেশের নিন্দা করা হয়। বাংলাদেশ তার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। লক্ষ্য করা যায় যে, বাংলাদেশে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে পাকিস্তানের সম্পর্ক যেন কোনভাবেই ভাল করা সম্ভব হয় না। এ এক ভয়াবহ সমীকরণ, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বিশেষ করে পাকিস্তানের সেনা নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা কোনভাবেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শাসনকে মেনে নিতে পারছে না। এজন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে মাঠে নামিয়ে ভারত বিরোধী অপ-প্রচার করানো হচ্ছে, যেই কায়দায় দেশের স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানী আমলে করা হতো। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, মঙ্গলবার প্রকাশিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে তথ্যগুলো দেয়া হয়েছে তার পেছনে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী দেশীয় শক্তিগুলোর কারসাজি রয়েছে। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ এমন দাবি করে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাধীন মত প্রকাশের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার বাকস্বাধীনতা খর্ব করছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এ্যামনেস্টিকে ভুল তথ্য সরবরাহ করার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে করেছে তারা। এতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ্যামনেস্টির দূরত্ব সৃষ্টি করে বিদেশী শক্তিসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন দাবি করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, প্রকৃত পরিস্থিতি না জেনেই অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলোও উদ্ভট ও অযৌক্তিক। ২০১৪ সালে লন্ডনে বসে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বাধীনতা, স্বাধীনতার জনক, জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে লন্ডনে বসে একের পর এক ধৃষ্টতাপূর্ণ কল্পিত বক্তব্যের ক্রমাগত যে মিথ্যাচার করেছেন তার সঙ্গে এ্যামনেস্টির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরুর পর থেকেই বর্তমান সরকারকে উৎখাতের জন্য বিরাট অংকের টাকায় বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যে লবিষ্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সরকার উৎখাতের জন্য নানা ধরনের অপ-প্রচার করা হয়েছে। যেই মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় বাস্তবায়ন করার প্রক্রিয়া চলমান, জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টাসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে সেই মুহূর্তে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে অন্যান্য বিভাগের দ্বন্দ্ব সৃষ্টির পায়তারা, ভারত বিরোধী অপ-প্রচার, মানবাধিকার সংগঠন দিয়ে সরকারবিরোধী অপ-প্রচার ছড়ানোর ঘটনায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টির খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন স্থিতিশীল তখন আবার অশান্ত-অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য পর্দার অন্তরাল থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছে কিনা তা নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনের আগে আরও অনেক অনাক্সিক্ষত বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হবে যার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে বিচলিত ও বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×