ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দাগী আসামিদের কোর্টে না নিয়েই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে বিচার

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৬ মে ২০১৭

দাগী আসামিদের কোর্টে না নিয়েই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে বিচার

বিকাশ দত্ত ॥ ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিন কয়েদিকে ওইদিন সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেয়ার সময় ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় ফিল্মি কায়দায় কমান্ডো স্টাইলে প্রিজনভ্যানে বোমা মেরে গুলি করে ছিনিয়ে নেয় সহযোগী জেএমবি জঙ্গীরা। জেএমবি জঙ্গীদের গুলিতে ময়মনসিংহ পুলিশের কনস্টেবল আতিকুল ইসলাম নিহত হন। এসআই হাবিব, কনস্টেবল সোহেল এবং প্রিজনভ্যানের চালক সবুজ গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অন্যান্য আসামিদের কারাগারে আনা-নেয়ার জন্য পুলিশও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অনেক সাক্ষী আদালতে নিরাপত্তাহীনতায় আসতে চান না। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ মহলেও আলোচনা হয়। আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগারের মধ্যেই দাগী আসামিদের ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিচারের কথা বলেছেন। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এ বিষয়ে আইন কমিশনকে একটি আইনের খসড়া তৈরি করার অনুরোধ জানান। সে বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখেই আইন কমিশন সাক্ষ্য আইনকে ঠিক রেখে নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করছে। যার নাম দেযা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আইন ২০১৭। এ আইনটি হলে আর কোন দাগী আসামিকে আদালতে নেয়ার প্রয়োজন হবে না। এমনকি সাক্ষীগণকেও আদালতে আসতে হবে না। এতে করে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে। মামলাজট অনেকাংশে কমে যাবে। ভবিষ্যতে ১০০ বছরের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কথা চিন্তা করেই আইনের বিধিবিধান বিন্যাস করা বা সাজানো হচ্ছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, আমরা আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যেই এই আইনটির খসড়া উপহার দিতে পারবো। যা সম্পূর্ণ বাংলায় করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আইন কমিশন গঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১৪৪টি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। আরও বেশ কয়েকটি খসড়া আইন তৈরিতে প্রাথমিকভাবে হাত দিয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘ ১৫০ বছর পর সাক্ষ্য আইন যুগোপযোগী ও অপরাধ প্রমাণে সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এটিও প্রায় শেষের দিকে। কমিশন ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনটি ঠিক রেখে নতুন আইন করছে যা কর মামলাজট কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সাক্ষী ও আসামিদের আদালতে না এনেই সাক্ষ্য নেয়া যায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই নতুন এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইনটির খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। এ আইন ১৮৭২ সালের আইনের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করবে। খসড়া আইনের মধ্যে রয়েছেÑ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দূরে কারাগারগুলো থেকে দাগী আসামিদের বক্তব্য গ্রহণ, অনেক সাক্ষী বিভিন্ন জেলায় বা অন্য কোন দেশে আছে তাদের এর মাধ্যমে জবানবন্দী গ্রহণ, ব্যক্তিগত হাজিরার পরিবর্তে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সে তার সাক্ষ্য দিতে পারবে এবং তাকে জেরা করারও সুযোগ থাকবে। সবাই তা দেখতেও পারবে। এর ফলে আসামি আনার যে নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি থাকে তা থাকবে না, সময়ও বাঁচবে। সাক্ষীদের আসার ক্ষেত্রে যে জটিলতা সেটাও দূর হবে। ফৌজদারি মামলায় ডাক্তার, পুলিশসহ অনেককেই সাক্ষী হতে হয়। ডাক্তার, পুলিশসহ হাসপাতালে মৃত্যুকালীন ঘোষণার সময় তার সাক্ষ্যও বিবেচ্য হিসেবে ধরা হবে। একজন ডাক্তার যেখানে থাকেন সেখানের ভিকটিমের ময়নাতদন্ত করেন। এরপর তিনি অন্য জেলায় বদলি হয়ে যায়। পুলিশের ক্ষেত্রে ও তাই। এরা ভিডিও লিংকিং-এর মাধ্যমে আসলে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হবে। সময়ও বেশি বাচবে। ভবিষ্যতে আইনজীবীরাও যাবে ভিডিও কনফারেন্সিং মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারে সে সুযোগও রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। গুরুত্বপূর্ণ কোন মামলার সাক্ষীর জন্য দেশে আসতে পারছেন না। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তার সাক্ষ্য নেয়া যাবে। আইন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভবিষ্যতে ১০০ বছরের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কথা চিন্তা করেই আইনে বিধিবিধান বিন্যাস করা বা সাজানো হচ্ছে। এ কাজের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সে সমস্ত দেশের আইনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে এ ধরনের বিচার শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, দাগী আসামিদের আদালতে আনা-নেয়ার জন্য পৃথক যানবাহন থাকবে এবং কারাগার থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করারও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর পর পরই আইন কমিশন দ্রুত এর খসড়া আইন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, দাগী আসামিদের আদালতে না এনে কারাগারেই যাতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার করা যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্ত এ বিষয়ে কিছু আইন সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন। সে কারণে আমরা ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনটি ঠিক রেখে নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করছি।
×