ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ সড়ক

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৬ মে ২০১৭

সবুজ সড়ক

আধুনিক বিশ্বের উন্নত শহরের আদলে রাজধানী ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে বনানী পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার ডিজিটাল সবুজ সড়কের দ্বারোদ্ঘাটন করতে যাচ্ছে সরকার। বিশেষ সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এ সড়কটি চিরচেনা ঢাকার দৃশ্যপটই বদলে দেবে বলে ধারণা করা যায়। কৃত্রিম ঝর্ণা, নানা রঙের আলোর বন্যা, সুপ্রশস্ত ফুটপাথ-ওয়াকওয়ে, বাহারি মাছের লেক, ক্যাফে, ফুলের বিচিত্র বাগান তো থাকছেই, আরও থাকছে ডিজিটাল যাত্রীছাউনি, ডাস্টবিন, টয়লেট; থাকবে ইন্টারনেটের জন্য ফ্রি ওয়াই-ফাই সংযোগ, নিরাপত্তার জন্য ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা এবং এলইডি মনিটরের ব্যবস্থাও। অর্থাৎ এ সড়কপথে যারা যাতায়াত করবেন তাদের সব ধরনের মানসিক স্বস্তি ও আনন্দের নিশ্চিত ব্যবস্থা থাকবে। বলা যায় এ সড়কটি হবে পথচারীবান্ধব। বর্তমানে সবুজ ঢাকা গড়ার যে পরিকল্পনার কথা শোনা যায়, এটি তারই একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানো হবে দীর্ঘ এ সড়কের দু’পাশে সুপরিকল্পিতভাবে। এর পাশাপাশি নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে থাকছে বিভিন্ন স্থাপনা-ভাস্কর্য। সারাবছরই ফুল ও ফলের সমারোহ থাকবে সড়কের দু’পাশে। এছাড়া শিশুদের মায়ের জন্য থাকবে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারও। দেশের প্রথম কোন সড়কে প্রথম ব্যবহৃত হবে সাদা এলইডি ফোকাসিং করা লাইট। দিনের এবং রাতের ব্যবধান ঘোচাতে এমন ব্যবস্থা দেখে অনেকেই হয়ত অবাক হবেন। এটি হলে, এর সার্বিক মনিটরিং ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। যাত্রী সুবিধার জন্য যাত্রীছাউনিতে ডিজিটাল বোর্ড লাগানো এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনামূলক তথ্য দেয়ার বিষয়টি যাত্রীদের কাজে লাগবে। বর্তমান সরকারের গৃহীত অনেক পদক্ষেপই প্রশংসনীয়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে উড়াল সড়ক, ফুটওভারব্রিজ, মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ আমাদের আশান্বিত করে, তেমনি ঢাকাবাসীর মানসিক শান্তি ও আনন্দের জন্য হাতিরঝিলকে দৃষ্টিনন্দন করার প্রয়াস উল্লেখ করার মতো। এমনিতেই শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণে নাকাল রাজধানীবাসী। এ থেকে উত্তরণের পথ ভাবতে হবে। নাগরিক সুবিধা কিভাবে আরও বাড়ানো যায়, কিভাবে রাজধানীবাসীর স্বস্তি আনা যায়, সে বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা প্রয়োজন। ডিজিটাল সবুজ সড়ক নির্মাণ একটি সময়োপযোগী শুভ উদ্যোগ, এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে সবাই। আমরা মনে করি ঢাকার সার্বিক সৌন্দর্যবর্ধনের দিকেও নজর দিতে হবে। যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড লাগানোর কালচার দূর করতে হবে। এসব কোনভাবেই যেন ঢাকার সৌন্দর্যবর্ধনের ও সৌন্দর্য রক্ষার অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায় সে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। রাজধানী ঢাকাকে একটি তিলোত্তমা শহরে রূপান্তরিত করতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক সদিচ্ছার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। কর্তৃপক্ষ যদি এ ব্যাপারে আন্তরিক হয় তাহলেই তা সম্ভব, অন্যথায় নয়। নব্বই কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় কিলোমিটার সড়কের যে সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে তা তখনই সার্থক হবে যদি এর সুফল অন্তত নগরবাসী নির্বিঘেœ-নিরাপদে উপভোগ করতে পারে। ঢাকাকে আমরা উন্নত দেশের রাজধানীর আদলে দেখতে চাই।
×